প্রশ্নবিদ্ধ (একটি ধারাবাহিক সামাজিক উপন্যাস)

  • তন্ময় অালমগীর
  • মার্চ ৯, ২০১৯

                                                           পর্ব : ১ পরিচ্ছেদ : ১

কিন্তু রেহানার অসুস্থতা কীসের?
মনের?
বেহেশ্তি ঘর। স্বর্গীয় বাতাস চারদিকে সুখ সুখ করে চেঁচায়। পুরনো হয়েও প্রতিদিন ফুলসজ্জা। ভীষণ ভালবাসা বিনিময়। অদূষণ পরিবেশ।
এতসব সুখ-সুস্থতা পেয়েও তার মন কেন অসুস্থ?
জীবন কেন অসুখী?
   
ইদানীং অসুস্থতা শুধু মনে না, শরীরেও অনুভব করছেন। কাউকে কিছু বলেন না। কাউকে বিচলিত করতে চান না। তার মনের ক্ষোভ-ক্রোধ মনেই চেপে রাখেন।
   
অসুখটা ভয়াবহ। রাতে শুতে গেলে ঘুমুতে পারেন না। সারাক্ষণ অস্থিরতা, ভয় আর ছটফট করে বুকের ভিতর। তার ওপর আরেকটা সমস্যা নতুন করে দেখা দিয়েছে। রাত গভীর হলে বিচিত্র একটা কান্ড ঘটতে শুরু করে। চোখ বুজে রাখলে ক্ষুদ্র বালিকণা দেখতে দেখতে পর্বতসমান উঁচু হয়ে যায়। বলের মতো কি একটা জিনিস ভয়ঙ্কর চরকির মতো ঘুরতে থাকে। যার প্রভাব পড়ে মস্তিস্কে। কেঁপে উঠে পুরো শরীর। মনে হয় পিঠে, কোমরে তেলাপোকা হেঁটে যাচ্ছে। সর্বত্র ঐ শির শির ভাব। ক্রমে গা জ্বালা করে উঠে।

মাঝে মাঝে মনে হয় অদ্ভুত কতিপয় দৈত্য-দানব চারপাশে ভয়ানক চেহারায় ওঁত পেতে আছে। ডাইনি বুড়ির মতো কোদালমার্কা দাঁত বের করে হাসে। একেকদিন সারারাত ধরে চলে এই অস্বস্থি।
   
রেহানার অসুখটা যে কী ডাক্তাররা ধরতে পারছেন না। প্রথমে মনে করা হয়েছিল পেটে সমস্যা। পশ্রাব জ্বালাপোড়া করে। কিন্তু, রক্ত-পশ্রাব পরীক্ষা করে কোনো কিছু পাওয়া গেল না।
   
তিনি ঘোরের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। চারপাশের কোনো কিছুই তাকে টানছে না। এদিকে ওদিকে কোনো খেয়াল নেই। আসাদ চৌধুরীর জন্য আগের সেই উদ্বেগ-উৎকন্ঠা নেই। কোনো কিছুতেই তার তাড়াহুড়া নেই আজকাল। জহির কখন বাসায় আসে, কখন বের হয় জানেন না। সুমির পড়ালেখার তদারকি করেন না। সংসারের সবকিছুতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
   
রেলিংয়ের পশ্চিম দিকটা তার প্রিয় জায়গা। সেখানে মোড়ার ওপর বসে চা খেতে খুব আরাম পেতেন। আজকাল তাও করেন না। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকেন। না ঘুম না জেগে থাকা- এদুয়ের মাঝখানের চিপায় পড়ে হাঁসফাঁস করেন কেবল। মাঝে মধ্যে রেহানার নিজেরও লজ্জা লাগে। ডাক্তাররা কোনো অসুখ ধরতে পারছেন না। জহির, সুমি অন্যকিছু ভাবে যদি! অসুখ-বিসুখ কিচ্ছু না, ভনিতা করে শুয়ে থাকে!
   
তার ছোটবেলার কথা মনে হলো। ভালো ভালো খাবার খাওয়ার জন্য, সবার আদর-সোহাগ পাবার জন্য অসুখের ভান করে শুয়ে থাকতেন। মামা আসতো সুদূর কুড়িগ্রাম থেকে আপেল আঙ্গুর নিয়ে। বাবা ডাক্তারি চিকিৎসা শেষ করে ছুটতো কবিরাজের কাছে । মার তার পাশে বসে থাকতো সারাক্ষণ। সবার মাঝে অস্থিরতা অস্থিরতা ভাব লক্ষ্য করতেন। এই অস্থিরতাই তার কাছে ভালোবাসা মনে হতো।
কিন্তু আজ সত্যি  সত্যি অসুখে ভুগছেন।
সেই অসুখটা যে কী তিনি নিজেও জানেন না।
   
সবশেষ গতমাসে তৃতীয়বাবের মতো পিজি হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন। ডাক্তার বলেছে বার্ধক্যজনিত রোগ। শুনে আকাশ থেকে পড়লেন। খানিক মুচকি হাসলেনও। তারচে বয়সে বড়রাও দিব্যি চলাফেরা করছে। পুত্রবধুঁদের টপকে এখনো সংসার চালাচ্ছে শক্ত হাতে। তিনি নেতিয়ে গেছেন। কী কারেণে? আসলে তার শরীর বা মনের কোনো অসুখ নেই। তার অসুখ আসাদ চৌধুরী। কে বিশ্বাস করবে এ কথা?

(চলবে)

Leave a Comment