দেনমোহর! প্রয়োজনীয়তা না স্বার্থপরতা?

  • ইল্লিনা হক (বৈতরণী)
  • এপ্রিল ৩, ২০১৯

আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানে যেমন অহেতুক টাকা নষ্ট করার একটা ট্রেন্ড চলে এসেছে তেমনি দেনমোহরের টাকার অংকের উপর নির্ভর করে সামাজিক স্ট্যাটাস। অমুকের মেয়ের বিয়েতে এতো টাকা কাবিন ছিলো আমার মেয়েরও লাগবে এধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে চারদিকে। সামাজিক প্রগতির উপর ভিত্তি করে অনেকে বলেন যে একটি মেয়ের নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত, মোহরানার টাকা দিয়ে ঝামেলা করে নিজের মান সম্মান নষ্ট করা ঠিক না এমন অনেক কিছু। 

কথাগুলো একদিক থেকে যেমন ঠিক আবার অন্যদিক থেকে তেমনি বেঠিক। একটু ব্যাখ্যা করি। হাতের পাঁচ আংগুল যেমন সমান না, সব মানুষ এক হয় না। কোন মেয়ের হয়তো চাকরি করতে ভালো লাগে, আবার কারো সংসার। কারো হয়তো বাধ্য হয়ে শুধু সংসার করতে হয় আবার কারো জীবিকার তাগিদে চাকরি করা আবশ্যক। কাজে ব্যস্ত থাকা ছেলে মেয়ের সবার জন্য প্রয়োজন সাথে অর্থ উপার্জনও। 

স্বাধীনচেতা মনোভাবের দরুন আমাদের সমাজে ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে। তবে সবসময় যে এই স্বাধীনচেতা মনোভাব পজেটিভিটি বুঝায় তানা। পরকীয়ার কারণেও অনেক সংসার ভেংগে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের ব্যাপারটা চলে আসছে তবে আগে বললেই সব শেষ হয়ে যেতোনা। বিয়ে শুধু দুইজন মানুষের জৈবিক সম্পর্ককে বুঝায়না। এটি একটি আইন; ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। 

যেহেতু এটি আইন সেহেতু আর আট দশটা আইনের মতো বিবাহ প্রথাকে সম্মান করা উচিত। সেই সম্মানের জায়গাট সরে যাচ্ছে বলেই বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েই চলেছে। কয়জন নারী তাদের পরিবারের হাঁকানো কাবিননামার টাকা পান বলুন তো? আসলে দেনমোহরানা আদায় করার ব্যাপারে আইনটা শক্ত হওয়া উচিত। ধরুন পরকীয়ার কারণে কোন লোক তার স্ত্রীকে ছেড়ে দিচ্ছেন সেক্ষেত্রে স্ত্রীর কাবিনের টাকা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক করা উচিত কারণ আইন ভেংগে সে অন্যখানে বিয়ে করবে তাই পেনাল্টি হিসেবে দেনমোহরের টাকা আর ভরণপোষণের টাকাটা না দিলে সেটা হওয়া উচিত অপরাধ। 

আবার কোন মহিলা যদি পরকীয়া করে স্বামীকে ছাড়ে তাহলে তার উচিত না প্রাক্তন স্বামীকে কাবিনের টাকার জন্য চাপ দেয়া কারণ মহিলাটা এজায়গায় দ্বায়ী। তবে স্ত্রীর অসুস্থতা বা অন্য কোন সংগত কারণে তালাক হলে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা বিশেষ প্রয়োজন। মোহরানা এমনভাবে নির্দিষ্ট করা উচিত যাতে সত্যিকার ভাবে স্বামী সেটা স্ত্রীকে বিয়ের দিন পরোশোধ করার অর্থনৈতিক ক্ষমতা রাখে যদিও সেটা আমাদের সমাজে একেবারেই অপ্রচলিত বলা যায়। 

আজকাল পরকীয়া জনিত কারণে তালাকে সংখ্যা বাড়ায় মোহরানা নিয়ে প্রগতিবাদীদের মাঝে আর ধর্মীয় চিন্তাশীলদের মাঝে অনেক কথা শোনা যায়। ইসলাম আদর্শ জীবনব্যবস্থা। নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা এ ধর্মে  বলা আছে সুস্পষ্ট ভাবে। আমি অন্য উন্নত দেশের কথা ঠিকভাবে বলতে পারবোনা যেহেতু ইউকেতে থাকি এখানকার কথা বলি। এইদেশে স্বাবলম্বী মেয়েরা নিজেদের দোষে ডিভোর্স নিলেও স্বামীর সম্পত্তির ভাগ পায়, এমনকি প্রাক্তন স্ত্রীর খরচ দিতে বাধ্য থাকে স্বামী আর বাচ্চা থাকলে তো আরো ব্যয়ভার বহন করতে হবে আর এটাই নিয়ম এবং আইন। 

এসব কারণে এইসব দেশে মানুষ বিয়ে করতে দোনামোনা করলেও একবার বিয়ে করলে সহজে সেটা ভাঙ্গে না। চেষ্টা করে সুন্দর বৈবাহিক জীবন পালন করতে। যেই প্রগতিবাদীরা দেনমোহরকে নারীদের আত্মমর্যাদা বিলিয়ে দেয়ার শামিল বলেন তারাও উন্নত বিশ্বের এই নিয়মকে বাহবা দিয়ে মানবাধিকার বলেন। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে, সন্তানের মা হয়ে গেলে চলার পথটা বেঁকে যায়। সিংহভাগ ক্ষেত্রে মাদের ত্যাগ বেশী করতে হয় সন্তানদের জন্য। 

কোন কারণে স্বামী পরিত্যক্ত হলে অবশ্যই হক আদায় করতে হবে নিজের জীবনের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য। প্রতিটা মানুষ দুনিয়াতে আসে একবার। সবার নিজের মতো করে ভালো থাকার অধিকার আছে। সামান্য ইগো আর অভিমানের জন্য স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া উচিত না। তবে হ্যা স্বামী সত্যিকার অপারগ হলে স্ত্রী তাকে মাফ করবে কি করবেনা সেটা বিবেচনার বিষয়। উন্নত দেশের মহিলারা ধর্মীয় দিক দেখেনা তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ আর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেখে আর তাই তাদের ভোগান্তিও কম। নিজেদের শান্তির কথা চিন্তা করে স্বার্থপর হওয়া তো আর তেমন দোষের কিছুনা।

Leave a Comment