সভ্যতার আপগ্রেডেশন  এবং আমরা

  • রোজী আরেফিন
  • জুন ৩, ২০১৯

সভ্যতার বিবর্তন,হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি,ভুলে যাওয়া রীতিনীতি ইদানিংকালে মানুষের না পাওয়ার অক্ষমতা আর অপ্রাপ্তিটাকে কেন জানি কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এখন কত আধুনিক,আমাদের সভ্যতা কত উন্নত। আমাদের গ্রামের বাড়িতে গেলে এখন আর গরুর গাড়ীর মোটা মোটা কিম্ভুতকিমাকার চাকাগুলার ক্যারাত ক্যারাত আওয়াজ আমরা  শুনিনা। এমনকি হারিয়ে গেছে ছোটবেলায় দাদু নানু বাড়িতে থাকা সেই ঢেকির আওয়াজটা ও।

কেন আমাদের ছোটবেলার ভালো লাগারা এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে জানেন? উত্তর একটাই,সভ্যতার উন্নয়ন বা আপগ্রেডেশন।একদিক থেকে দেখতে গেলে সভ্যতার এই আধুনিকায়ন কত কিছুই না দিয়েছে আমাদের। কিন্তু সত্যি কথা যদি বলি,সভ্যতার তথাকথিত  উন্নয়ন আমাদের কি শুধুই ভালো জিনিসটাই দিয়েছে?বিনিময়ে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়নি কিছুই? যদি সভ্যতার আধুনিকায়ন এর কথাই বলি,কেউ কি হলফ করে বলতে পারবে এই আমাদের আধুনিক যুগের আধুনিক আমাদের সভ্যতা আমাদের কে যথেষ্ট দুষন এনে দেয়নি,আমাদের মানবিকতা  অনেকাংশে কেড়ে নেয়নি,আমাদের শৈশবকে অনেকটুকুই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে গলা টিপে ধরে নি? কোন এক কালে এতো সাউন্ড পল্যুশন ও ছিলো না,বাতাসেও সীসা আর কারবনিক মেটারিয়ালস এ এতো ছিলোনা। সেই দিনে নদীগুলোও দেখার মতো ছিলো, রাতের আকাশে উজ্জ্বল তারাদের মতন জোনাকিপোকা দের ও জ্বলজ্বল উপস্থিতি ছিলো বহুপ্রতুল।

আজকের দিনে আমরা সব হারিয়েছি। চাঁদের আলোয় নদীর তীরে বসে পাল তোলা নৌকার ঝলাৎ ঝলাৎ আওয়াজ শোনার ক্ষমতা আমরা হারিয়েছি। বিশুদ্ধ বাতাসে মন ভরে এক নাগরিক জীবন অনুভব করার ক্ষমতা ও আমরা হারিয়েছি। আমরা নতুন সভ্যতা পেয়েছি,সাথে পেয়েছি নতুন এক সংস্কৃতি। তাইতো আর কেউ এখন পুঁথিশালা চিনেনা,পুঁথি পাঠ করা তো অনেক দুরের বিষয়। আমরা এখন আর কাজির চালের ভাতের সাথে সাত রকমের ভর্তা দিয়ে কেউ খেতে পছন্দ করিনা। আমরা এখন বিভিন্ন ধরনের জাপানিজ,চাইনিজ, থাই ক্যুইজিন খেতে অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁর হাইফাই বিল হাকাই।

কোন এক বিগত কালে,ছেলেপেলেদের ধরেবেধেও ঘরে রাখা যেতো না। যেভাবেই হোক,তারা ছুঁটে যেতো কোন মাঠে,কত রকমের খেলা যে তারা খেলতো।আর এখনকার দিনের দু একজন ছেলেপেলেকে ধরে প্রশ্ন করলে বোঝা যাবে তাদের কাছে কোনটা প্রিয়, বিকেলবেলা হাডুডু,গোল্লাছুট খেলা নাকি বাসার ছাদে যেয়ে বসে বসে মোবাইলে ফেসবুকিং করা না হয় সি ও সি খেলা।

যাই হোক,সভ্যতার আর কি বা দোষ। প্যাথেড্রিন আবিষ্কার হয়েছিলো পেইনকিলার হিসেবে,কেউ যদি সেটাকে এব্যুউজ করে নারকোটিক হিসেবে,সভ্যতা কি তাকে কিছু করতে পারবে?সভ্যতার উত্তরনের সাথে সাথে বিভিন্ন টেকনোলোজির যেমন আপগ্রেডেশন হয়,তেমনি হিউম্যান সাইকোলজির ও কিছু পজিটিভ আপগ্রেডেশন দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো সেই আপগ্রেডেশন টা আসলে সত্যিকার ভাবে পজিটিভলি হয়না। জেনেটিক্যালি আমাদের মধ্যে নেগেটিভ এবং নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি প্রবল আগ্রহ চিরায়ত,তাই আমরা অনেক সময়েই সুফল জিনিসের কুফল ইউজেই মনযোগ বেশি দেই।

তারপরেও একটা সভ্য জাতি সভ্য দেশ উপরন্তু এক সভ্য পৃথিবীর বুকে সভ্যতার এই ধারাবাহিক আপগ্রেডেশন সবসময়ই চলমান প্রক্রিয়ায় বহমান থাকবেই।আমাদের ভালো এতেই, যতটা সম্ভব আমরা এই আপগ্রেডেশন এ গা না ভাসিয়ে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ সেটা নিজেদের মগজ দিয়ে নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী চলি। জয়তু সভ্যতা! জয়তু নতুন সংস্কৃতি!!


 

Leave a Comment