যেমন শাশুড়ি তেমন বউ (পর্ব- ৪)

  • কামরুন নাহার স্মৃতি
  • অক্টোবর ১০, ২০২০

মধ্যবয়স্কা মহিলাদের মধ্যে একজন কথাগুলো নিজের মধ্যে চাপাতে না পেরে বলেই উঠলেন,

- শুনলাম তোমার ছেলে নাকি নতুন বউ এনেছে, তা কথাটা কি সত্যি রাহাতের মা? কি যে দিনকাল এলো কে জানে, বড়দের আর কেউ মানইজ্জত দেয়না আজকাল।

এসব যে শাশুড়ি'মাকে রাগানোর জন্য আর হেনস্তা করার জন্য তা হয়তো সবাই বুঝতে পারছে, কিন্তু কি আর করার আছে! শাশুড়ি'মা শুধু মাথা নাড়লেন, মুখে কিচ্ছুটি বললেন না। হয়তো তিনি নিজেও চাননি এভাবে কারো সামনে তার কথা বলার মতো কথাই হারিয়ে যাবে। তাকে এভাবে চুপ করে যেতে হবে। শাশুড়ি'মাকে দেখে খুব খারাপ লাগছে, নিজের মধ্যে অপরাধবোধ প্রবলভাবে জেগে উঠছে। কিন্তু আবার মনের মধ্যে কোথাও যেন কেউ বলছে, এটা তোমার অধিকার। তোমরা দু'জন দু'জনকে ভালোবাসো। এতে কোন অপরাধ নেই, নেই কোন ভুল কিংবা পাপ।

অন্য একজন সুরে সুর মিলিয়ে বললেন,

- তা শুনলাম নাকি মেয়েটা নিজে থেকে এখানে এসেছে, রাহাতের চেহারা কি ভোলাভালা! ও যে এতো বড় একটা কাজ করবে ভাবতেও পারিনি আমরা। আর মেয়ের বাবা-মা'ই বা কেমন, মেয়েটাকে একা ছেড়ে দিল!

অন্যজন সঙ্গে সঙ্গেই বললেন,

- কি আর করবে বলো, ঝুট-ঝামেলা পোহাতে তো আর হলোনা আবার মেয়ের জন্য জামাইও তো আর মন্দ না, তাইনা? তবে রাহাত কিন্তু এটা একদম ঠিক করেনি। আর মেয়েটার কথাই বলি, এভাবেই বিয়ে করতে হতো নইলে কি আর বিয়ে হতো না, না স্বামী - শ্বশুরবাড়ি পেতি না! লাজলজ্জা আজ কোথায় চলে গেছে!

কথাগুলো আমার বুকের ভেতর কাঁটার মতো বিঁধে যাচ্ছিল। মানুষ এভাবে কথা বলতে পারে আমি ভাবতেও পারিনা। আমার জন্য আমার বাবা-মায়েত নামে অচেনা, অজানা লোকজন খারাপ কথা বলছে ভেবেই বুকের ভেতর দুমড়েমুচড়ে শেষ হয়ে যেতে লাগলো। সত্যিই আমি আমার বাবা-মাকে অসম্মানের রাস্তায় এনে দাঁড় করিয়েছি। সব দোষ আমার৷ আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল, তোমরা থামো এবার। যা বলার হয় আমাকে বলো কিন্তু আমার বাবা-মায়ের নামে কেউ খারাপ কথা বলোনা। ওরা আমার জীবন, আমার পৃথিবী, আমার সমস্ত সংসার।

আমার আর এসব কথা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনতে ইচ্ছে করছে না। নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালাম কিন্তু রাহাত ওর হাত দিয়ে আমাকে আটকে দিল। কিছু বললাম না, রাহাত জানে আমি বাবা-মা শব্দটাকে কতোটা ভালোবাসি। রাহাত আস্তে করে শুধু বললো,

- বসো।

রাহাতের যতই কথা শোনাই আর যাই করি রাহাতের কথার ওপর কথা বলতে কেন যেন মন সায় দেয় না। চুপচাপ বসে গেলাম। রাহাত একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার তার মায়ের দিকে। ঠিক কি করতে চাচ্ছে সে, বুঝতে পারছি না। কিন্তু ওর চোখ মুখ স্পষ্ট জানান দিচ্ছে, আজ ও এমন কিছু করবে যা আগে কখনো করে নি। আমার খুব ভয় করছে। মনে মনে নিজেকে নানান কথা বুঝিয়ে স্বান্তনা দিচ্ছি কিন্তু মন মানছেই না। রাহাতের এমন লাল চোখ এর আগে আমি সত্যিই দেখিনি। এই এতোগুলো বছর ওর সাথে সম্পর্ক ছিল, একটা দিনও ওকে রাগতে দেখিনি আমি৷ আমার জন্য সবসময় ওকেই অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘন্টার পর ঘন্টা, তবুও কোন অভিযোগ ছিল না কোনদিন। আমিই সবসময় রাগ করতাম, রেগে লাল হয়ে যেতাম। আর ও দাঁত কেলিয়ে বলতো, তোমাকে রাগলে এতো সুন্দর লাগে জানতাম না! এখন থেকে রোজ রাগাবো তোমায়।

ওর পাগলামি আমাকে ওর থেকে দূরে থাকতেই দিতো না। সহপাঠী কিংবা কাছের কারো সাথে কখনো রাগতে দেখিনি ওকে।

রাহাত দাঁড়িয়ে খুব শান্ত ভাবে বললো, আপনাদের কথা বলা শেষ? কথা বলা শেষ হয়ে থাকলে এখন আসতে পারেন!

শাশুড়ি'মাকে তোয়াক্কা না করে রাহাত হড়হড় করে বলে গেলো কথাগুলো। শান্ত মানুষগুলো একবার জ্বলে উঠলে আগুন ধরে যায়, এ আমি বেশ ভালোই জানি। শাশুড়ি'মায়ের আগুনঝরা চোখ অগ্রাহ্য করে নিজের চোখে আগুন জ্বালাচ্ছে রাহাত৷ আজ সংসারে তুলকালাম কান্ড হবে, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে!

(চলবে...)

Leave a Comment