পৃথিবী কি সত্যিই এতোটা সুন্দর?

  • মাহাদী হাসান 
  • মার্চ ২৪, ২০২১

খলিলুল্লাহ ধীর পায়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একটু আগেই তাকে গোসল করিয়ে নামাজ ও তওবা পড়ানো হয়েছে। কিন্তু খলিলের মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তার ভাবলেশহীন মুখ দেখে মনে হচ্ছে মৃত্যু কোন কঠিন বিষয় না, খুবই সহজ ব্যাপার। যেন এর আগেও অনেকবার ফাঁসিতে ঝুলে তার মৃত্যু হয়েছে।

মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছে কী জানতে চাইলে সে বলেছে ফাঁসির সময় তার চোখ যেন বাঁধা না হয়। সে দুনিয়া দেখতে দেখতে মরতে চায়। চিরপরিচিত এই পৃথিবী থেকে একেবারে চলে যাবে অথচ চোখ বাঁধা থাকবে এটা খলিল মেনে নিতে পারছে না। সে কারাকর্তৃপক্ষের কাছে বার বার অনুরোধ করেছে, মৃত্যুর সময় তার চোখ যেন বাঁধা না থাকে। কাল রাতেও সে নির্বিকার ভঙ্গিতে গান গেয়েছে,

‘ও কারিগর দয়ার সাগর,
ওগো দয়াময়,
চান্নীপশর রাইতে যেন
আমার মরন হয়...’

আরো পড়ুন :  ঘুমের সমস্যা, পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ওজন কমাতে জিরার দারুন টোটকা!

কার গান এটা— হুমায়ুন আহমেদের? একজন কিংবদন্তী লেখক এই গানটির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, চান্নীপশর রাতে যেন তার মরন হয়। সৃষ্টিকর্তা তার প্রার্থনা শোনেননি। তার মৃত্যু হয়েছিলো শ্রাবণের এক ঘোর অমানিশার এক রাতে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা খলিলের কথা শুনেছেন। ভরা পূর্ণিমার রাতে তার ফাঁসি হচ্ছে। ঘোরলাগা জোছনায় খলিলের ছায়া পড়েছে মাটিতে।

সে ফাঁসির মঞ্চে উঠে দাঁড়ালো, তার দুই হাত পেছনে বাঁধা। জেল সুপার হাফিজ অসহায় ভঙিতে দাঁড়িয়ে আছেন। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি চোখ বন্ধ করে ফেললেন। সময় ঘনিয়ে এসেছে। তিনি কিছুতেই এই দৃশ্য দেখতে চান না। হাফিজের পাশে একজন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছেন। ফাঁসির পর ডাক্তার খলিলের মৃত্যু নিশ্চিত করবেন। এটাই নিয়ম। তারাও হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন। হাফিজের হাত থেকে সাদা রুমালটা মাটিতে পড়ে গেল। তিনি অস্ফুট স্বরে বললেন— বিদায়।

খলিল ঘাড় ঘুরিয়ে শেষবার চারপাশটা দেখলো। তার চোখে বিস্ময়। চারপাশের পৃথিবীটা ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে। পৃথিবী কি সত্যিই এতোটা সুন্দর?

বই: কারাগার
ধরন: উপন্যাস
লেখক: মাহাদী হাসান
জনরা: পরাবাস্তব থ্রিলার
প্রচ্ছদ: সাবিহাতুল ফাতেমা
প্রকাশক: স্বদেশ শৈলী
স্টল নং: ৩৭৫

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment