রোযায় স্বাস্থ্য পরামর্শ: যে কাজগুলো করবেন না

  • আল আমীন 
  • মে ২৪, ২০১৮

চলছে রমযান মাস। এ মাসে মুসলমানগণ সারাদিন রোযা রাখেন। আর রোযায় রয়েছে বিভিন্নরকম ধর্মীয় বিধি-নিষেধ। এসব বিধি-নিষেধ ছাড়াও রোযা রেখে আমাদের দৈনন্দিন কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণেই পুষ্টিবিদরা বলছেন দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর সেহরি ও ইফতারে খাদ্য দ্রব্য বাছাইও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। জীবনাচরণেও কিছুটা পরিবর্তন এসে থাকে এই সময়ে, পরিবর্তন আসে নিয়মিত কাজের ধরণেও। তবে বিশেষ করে যারা বছরের অন্য দিনগুলিতে বিভিন্নরকম ডায়েট চার্ট অবলম্বন করে থাকেন, রোযা রাখলে তাদের জন্য আলাদা করে আর ডায়েট কন্ট্রোল করা লাগবে না। এমনটাই বলে থাকেন পুষ্টিবীদ্গণ। আজকের আলোচনায় আমরা জেনে নেব, স্বাস্থ্য রক্ষায় রোযায় কী করনীয় বা বর্জনীয় সে ব্যপারে। 

রোযা রেখে যেটা হয় যে, সারাদিনে সমস্তরকম পানাহার থেকে বিরত থাকা হয়। কিন্তু দিনের শেষে এসে আমরা ইফতারে অনেকেই ভাজাপোড়া খাবার খাই। যেটা আমাদের শরীরের জন্য একদমই ভাল কিছু নয়। সুতরাং সেহরী এবং ইফতারে আমাদের উচিত হবে ভাজাপোড়া খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা। এক্ষেত্রে অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলছেন, “মাছ ডাল ভাত আদর্শ খাবার। ভোররাতে গরুর মাংস এড়িয়ে মুরগী খেলে ভালো হবে। তবে প্রয়োজন শাক সবজি ও ডাল শরীরের জন্য ভালো হবে।’’ খাদ্য তালিকায় বেশি করে রাখবেন, পানি, ফল, চিড়া, রুটি, ভাত, সবজি, ডাল, ডিম। হালিমও রাখতে পারেন। গোলাম মাওলা বলছেন মানসম্পন্ন হালিম শরীরের জন্য উপকারী।  সেহরী কিংবা ইফতারে তেহারি বিরিয়ানী খাচ্ছেন? সাবধান! অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং এসব ভারি খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

খেয়াল রাখুন রোযায় পানিশুন্যতা না দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। রোযায় অতিরিক্ত পরিশ্রম যথাসাধ্য কমিয়ে আনুন। আবার অলসও বসে থাকবেন না। ডায়াবেটিস রোগী যদি রোযা রাখেন, তারাবীহ নামাজ পড়েন, তাহলে আর ব্যায়াম না করলেও চলবে। নিজেই বাছাই করুন, আপনি কোন খাবার বেশি পছন্দ করেন, কোন খাবার আপনার ভাল হজম হয়, সেটাই খাওয়ার চেষ্টা করুন। রোযা রেখে হজমজনিত জটিলতা বা ফুড পয়জনিং হলে সেটা ভাল কিছু নয়। তাই আগেই সাবধান হতে চেষ্টা করুন । 

ইফতারে একবারেই বেশি খেয়ে ফেলবেন না। যদিও সারাদিন পর ইফতারের সময় আসলে মনে হয়, অনেক খাব, অনেক খিদে পেয়েছে। কিন্তু ওই সময়ই একবারে অনেক খেয়ে ফেলা স্বস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই, ইফতারে আগে হাল্কা কিছু খেয়ে রোযা শেষ করুন। তারপর আস্তে আস্তে অল্প করে অন্যান্য খাবার খান।   খাবার গ্রহণে মোটেও তাড়াহুড়ো নয়। ধীরে সুস্থে খান। ভাল করে চিবিয়ে খান। ঘুমান ঠিকমতো। রোযা রেখে ঘুমের ঘাটতি শরীরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। 

এবার আসি ব্যায়াম বা শরীরচর্চার ব্যপারে।  অনেকেই নিয়মিত শরীর চর্চা করেন। কিন্তু রোজার সময়ে অন্য সময়ের মতো ব্যায়াম করা সম্ভব হয় না। অধ্যাপক গোলাম মাওলার পরামর্শ হল, কোনভাবেই রোযা রেখে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা ঠিক হবে না। তবে শরীর সায় দিলে হালকা শরীর চর্চা কেউ চাইলে সন্ধ্যার পর করতে পারে, যদিও শরীরের ওপর চাপ পড়ে এমন কিছু করা যাবে না।  তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হেলথ ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইউনুস বলছেন, যারা রোযা করবেন তাদের জন্য নামায বিশেষ করে ইফতারির পর রাতে তারাবীহ’র নামায নিয়মিত আদায় করাটাই বড় ব্যায়াম হতে পারে। এছাড়া ইফতারি বা রাতের খাবারের পর হাঁটাচলাও ব্যায়াম হিসেবে ভালো হবে। 

ঢাকার একটি সুপরিচিত হোটেলের ব্যায়ামাগারের প্রধান প্রশিক্ষক মিন্টু আকরাম বলছেন রোযার সময় অর্থাৎ রোযা পালন করে ভারী উপকরণ ব্যবহার করে ব্যায়াম উচিত হবে না। সুতরাং, আমাদের উচিত হবে এসব ব্যপারে সতর্ক থেকে রোযা পালন করা। এতে আপনার স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত হবে।
 

Leave a Comment