ইফতারে কোন শবরত কী উপকার করে?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • জুন ৬, ২০১৮

গ্রীষ্মকালে রোজা পড়ায় এবার এর সময়সীমাও বেশ দীর্ঘ। প্রচণ্ড গরমে দিনভর রোজা রাখার পর সারা দিনের ক্লান্তি কাটাতে ইফতারে চাই এমন কিছু, যা ঝটপট গরমের ক্লান্তি দূর করবে। এ ক্ষেত্রে পুষ্টিগুণের পাশাপাশি শরীরের পানিস্বল্পতা দূর করতে শরবতের জুড়ি মেলা ভার। এক গ্লাস ঠাণ্ডা শরবত সারা দিনের ক্লান্তি মুছে শরীরকে চাঙ্গা করতেই শুধু ভূমিকা রাখে না, একই সঙ্গে অবসাদ ঘুচিয়ে দিতেও বেশ কার্যকরী। তাই রোজা শেষে ইফতারে সবার চাই স্বাস্থ্যকর এক গ্লাস শরবত।

এখন মৌসুমি ফলে বাজার সয়লাব। কাজেই এসব মৌসুমি ফল দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পারেন ঠাণ্ডা শরবত। কোনো রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি ছাড়াই এসব শরবত আপনাকে করবে আরও প্রাণবন্ত। এ ক্ষেত্রে রমজানে পুরো মাসজুড়ে সতেজ থাকতে একেক দিন বেছে নিতে পারেন পছন্দের একেকটি শরবত।

লেবু-আদার শরবত :

উপকরণ : লেবু ২টি, আদার রস ২ টেবিল চামচ, পুদিনা পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, চিনির সিরাপ এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ, বরফ কুচি পরিমাণমতো।

প্রস্তুতপ্রণালী : একটি পাত্রে ২ টুকরো লেবু চিপে সিরাপ দিয়ে শরবত তৈরি করে নিন। আদা কিউব করে কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন অথবা বাটোনি দিয়ে থেঁতলিয়ে নিন। এর পর আদা ছেঁকে পানি আলাদা করে রাখুন। সিরাপ দেওয়া লেবুর পানির সঙ্গে আদার পানি মিশান। সব শেষে বরফ কুচি, পানি, পুদিনা পাতা ও লেবু চারকোনা করে কেটে গ্লাসে দিয়ে আধঘণ্টা রেখে দিন।


 

উপকারিতা : আদা পানি এই রোজায় গ্যাসের সমস্যা দূর করে। দীর্ঘ সময় রোজা রাখার ফলে হাত পা ব্যথা হয়, আদার পানি শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ক্যান্সার, বমি বমি ভাব, রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এই পানি। ইফতারে অতিরিক্ত ভাজা- পোড়া খাবার বেশি খাওয়া হয়। তাই লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চর্বি কমাতে সাহায্য করে। অনেক সময় অতিরিক্ত গরম আর বৃষ্টির জন্য ঠাণ্ডা হতে পারে, তাই এই সময় লেবু–আদা শরবত শরীরকে রাখে ঠাণ্ডা। এ ছাড়া ব্রণ আর ত্বকের কালচে দাগ কমাতে লেবু আদা শরবত খুব উপকারী।

শসার শরবত :

উপকরণ : শসা ২৫০ গ্রাম, ধনেপাতা কুচি আধা টেবিল চামচ, বিট লবণ সামান্য, চিনি সামান্য, কাঁচা মরিচ ১টি এবং পানি সামান্য।

প্রস্তুতপ্রণালী : শসার খোসা ছাড়িয়ে এবং বীজ ফেলে কুচি করে নিন। এর পর সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হতে। এবার সুদৃশ্য একটা শরবতের গ্লাসে বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন শসার শরবত।


 

উপকারিতা : প্রতিদিন ইফতারে এক গ্লাস শসার শরবত পানে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার শক্তি বৃদ্ধি পায়। শসায় লারিসিরেসিনল, পিনোরেসিনল এবং সেকইসলারিসিরেসিনল রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে পানি, ভিটামিন কে, সিলিকা, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ক্লোরোফিল রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শসা মূত্রাশয়ের পাথরও প্রতিরোধ করে। এটি শরীরের সকল বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করবে। আবার যাদের হজমে সমস্যা আছে, তারা শসার সরবতে উপকার পেতে পারেন। তবে শসা যেভাবেই খান না কেন, এটি ওজন কমাতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

আমের শরবত :

উপকরণ : পাকা আম কুচি এক কাপ, চিনি স্বাদমতো, পানি আধা কাপ, লবণ এক চিমটি, পরিমাণমতো বরফ কুচি।

প্রস্তুতপ্রণালী : বরফকুচি বাদে সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এবার বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন আমের শরবত।


 

উপকারিতা : আমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও উচ্চ পরিমাণ খাদ্য আঁশ থাকায় এটা কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা, লিউকেমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আম প্রচুর খাদ্য আঁশ থাকায় তা হজমে সাহায্য করে। আবার এতে বিদ্যমান উচ্চ বিটা ক্যারোটিন অ্যাজমা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত আম খাওয়া ক্ষতিকর। তারা আম পরিমিত খাবেন। তবে সুস্থ মানুষের জন্য পাকা বা কাচা হোক সব আমই উপকার।

তরমুজের শরবত :

উপকরণ :  তরমুজ কুচি দুই কাপ, চিনি ২ টেবিল চামচ, বিট লবণ আধা চা চামচ, পাতি লেবুর রস ২ চা চামচ।

প্রস্তুতপ্রণালী : তরমুজ কুচিসহ সব উপকরণ মিশিয়ে ব্লেন্ড করে ফ্রিজে রেখে দিন আধা ঘণ্টা। প্রয়োজনীয় ঠাণ্ডা হলে নামিয়ে এনে পরিবেশন করুন রঙিন একগ্লাস ঠাণ্ডা তরমুজ শরবত।


 

উপকারিতা : তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি, প্রোটিন, কার্বহাইড্রেড, শর্করা, ভিটামিন সি পাওয়া যায়। সারাদিনের ক্লান্তি ও দুর্বলতা কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই শরবত। আবার টাইফয়েড জ্বরের তীব্রতা কমাতেও ভূমিকা রাখে তরমুজ। পুরুষের বন্ধাত্ব ঘুচাতেও তরমুজের জুরি মেলা ভার।

আনারসের শরবত :

উপকরণ : আনারস কুচি ১ কাপ, বিট লবণ আধা চা চামচ, চিনি ২ চা চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ২ চা চামচ, পানি পরিমাণমতো।

প্রস্তুতপ্রণালী : আনারস কুচির সঙ্গে বিট লবণ, চিনি, গোল মরিচের গুঁড়া ও পানি একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল আনারসের শরবত। এবার সুন্দর একটি গ্লাসে ঢেলে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।


 

উপকারিতা : আনারস পুষ্টির বড় একটি উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এতে প্রচুর ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট থাকায় তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। আনারস জ্বরের ও জন্ডিস রোগের জন্যও বেশ উপকারী।

বেলের শরবত :

উপকরণ : পাকা বেল, চিনি পরিমাণমতো, দুধ পাউডার আধা কাপ ও ঠাণ্ডা পানি।

প্রস্তুতপ্রণালী : প্রথমে বেল ফাটিয়ে নিন। এর পর চামচ দিয়ে ভিতরের সবটুকু বের করে নিন। এবার সামান্য পানি দিয়ে মাখিয়ে নরম করুন। বেলের আঠা ও বিচি ফেলে ভালোভাবে চটকে চালুনিতে ছেঁকে নিন। লক্ষ রাখবেন বেলের বিচি যেন না থেঁতলে যায়। বিচি থেঁতলে গেলে কিছুটা তিতা ভাব আসতে পারে। এবার ঠান্ডা পানি যোগ করুন। এই পর্যায়ে দুধ পাউডার যোগ করতে পারেন। চিনি যার যেমন ইচ্ছা মিশিয়ে নিন। আর ডায়াবেটিস রোগী হলে, আপনার জন্য নির্ধারিত চিনি ব্যবহার করুন। এবার বরফকুচি বাদে অন্য সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে গ্লাসে ঢেলে বরফকুচি মিশিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।


 

উপকারিতা : সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে ইফতারে বেলের শরবতের জুড়ি মেলা ভার। এর পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের চেয়ে অত্যন্ত বেশি। বেলের ভিটামিন ‘সি’ দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে যা  বসন্ত ও গ্রীষ্মকালীন ছোঁয়াচে রোগগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এই ফলে আঁশের পরিমাণও অনেক বেশি থাকায় তা হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস-এসিডিটির পরিমাণ কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ ছাড়া বেলের ভিটামিন ‘এ’ চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে পুষ্টি জোগায়। আবার যারা নিয়মিত বেল খায়, তাদের কোলন ক্যানসার , গ্লুকোমা, জেরোসিস, জেরোপথ্যালমিয়া (এগুলো চোখের অসুখ) হওয়ার প্রবণতা থাকে তুলনামূলকভাবে কম।

সূত্র : গুগল 
 

Leave a Comment