নারীবাদ নিয়ে আমার তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই : ফারহানা হোসেন

  • ফারজানা আক্তার
  • মার্চ ৩, ২০১৮

লেখালেখির জগৎতে লেখকদের পাশাপাশি লেখিকারাও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। ফারহানা হোসেন তাদেরই একজন। ওমেন্সকর্নারের সাক্ষাৎকারে এই লেখিকা তার মজার এবং স্মৃতির কিছু ঘটনা এবং ২০১৮ সালের বইমেলায় প্রকাশিত তার বই  'নিষুপ্ত নিষাদ' নিয়ে নানান কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার। 

ওমেন্সকর্নার : কেমন আছেন ?

ফারহানা হোসেন : ভালো আছি।

ওমেন্সকর্নার : এবারের বইমেলায় পাঠক আপনার কয়টি বই পাচ্ছে ? 

ফারহানা হোসেন : ২০১৮ বইমেলায় আমার দুটি বই পাওয়া যাবে।একটি 'উত্তরী হাওয়া' ২০১৭ বইমেলায় প্রকাশিত হয়। অন্যটি 'নিষুপ্ত নিষাদ' যেটি এবার প্রকাশিত হয়েছে।

ওমেন্সকর্নার : 'নিষুপ্ত নিষাদ' নিয়ে কিছু বলুন। 

ফারহানা হোসেন : .' নিষুপ্ত নিষাদ' কাব্যগ্রন্থ। কাব্যের মধ্য দিয়ে নারীর আবেগ,  প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি,  বঞ্চনা, দুঃখ ও প্রেমগাঁথাকে মূলতঃ তুলে ধরতে চেয়েছি। এছাড়া সমাজে নারীর অবস্থানকেও স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি।

ওমেন্সকর্নার : নিজের লেখা ছাপা অক্ষরে প্রথম কবে দেখেছিলেন ?

ফারহানা হোসেন : গতবছর হুট করেই মনে হলো লেখাগুলোকে গ্রন্থিত করলে ভালো হবে। নিজের অনুভূতি অন্যদের সাথে ভাগ করা যাবে। এ লক্ষ্যেই 'উত্তরী হাওয়া' র জন্ম হয়। নবজাতককে ১০ই ফেব্রুয়ারী ২০১৭ প্রথম দেখেছিলাম। আমার প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয় আমার বন্ধু ফরিদ ছিফাতুল্লাহ সম্পাদিত কক্সবাজারের দৈনিক পত্রিকা 'বাঁকখালী'র সাহিত্য পাতায়। এটি একটি স্মরনীয় দিন এবং বন্ধু ফরিদ ছিফাতুল্লাহর প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। যা আমাকে পরবর্তী লেখালেখিতে অপরিসীম সাহস যুগিয়েছে।

ওমেন্সকর্নার : লেখালেখির জগৎতে বিশেষ কিছু প্রাপ্তি ? একটু বিস্তারিত বলবেন 

ফারহানা হোসেন : সমালোচনা পেয়েছি প্রচুর। নতুন ধাঁচের লেখা নিয়ে উপস্থিত হবার জন্য মাশুল দিতে হয়েছে। বলতে পারেন এখনও হচ্ছে। কারন একটি সম্পূর্ন নতুন মাত্রায় লিখি আমি। অনেক সমালোচনার পরও 'নিষুপ্ত নিষাদ'কাব্যগ্রন্থে বিন্দুমাত্র ছন্দের বা কথার বা ভাবের পরিবর্তন করিনি আমি। এটাই আমার অনুপ্রেরণা। যেকোনো সমালোচনাকে আমি নির্বিকারভাবে গ্রহণ করতে পারি।

ওমেন্সকর্নার : কারো অনুপ্রেরণায় এই লেখালেখির সাথে যুক্ত হয়েছেন ? নাকি শখে ?

ফারহানা হোসেন : শুরু করেছিলাম ফেসবুক লেখিকা হিসাবে।  বন্ধুরা আহা বাহা করে মাথায় তুলে ফেললো। ঝোঁকের বশে কাজ করা আমার আজীবনের অভ্যাস।সেটাই অনুপ্রেরণা হিসাবে এবারও এগিযে দিলো এমন একটি চ্যালেন্জিঙ কাজে। কারন আপনি জানেন কবিতা লেখা একধরনের এভারেস্ট জয়ের মতো কাজ। খুব অল্প কথায় সহজ ভাবে অনুভূতি প্রকাশ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এটি। তাছাড়া ছন্দ ধরে রাখা আসলে দুরূহ।  শখ উবে যাবার সম্ভাবনাও থেকে যায়।তাই শখের বশে কবিতা আগে লিখলেও এখন খুব সাবধানেই লিখি।

ওমেন্সকর্নার : লেখিকা হিসেবে আপনি এখন মেলায় যান। আপনার অনুভূতি কেমন হয় ? 

ফারহানা হোসেন : গত বছর প্রথম গিয়েছিলাম লেখিকা হিসাবে, তখন উত্তেজনা ছিলো আকাশসমান। এবছর গম্ভীর হয়ে মেলায় গিয়েছি। নারীদের হালকা ভাবা থেকে বিরত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। জানিনা সফলতা কতোটুকু তবে আমার মনে হয় কবি ভাবার কাজটি একটু স্পর্ধার মতো। আরো সময় লাগবে।

ওমেন্সকর্নার : লেখালেখির বাহিরে একটি প্রশ্ন। আপনি কি নারীবাদী ?

ফারহানা হোসেন : জ্বি না! নারীবাদী নই বা ছিলাম না। নারীবাদ নিয়ে আমার নিজস্ব ব্যাখ্যা হলো, নারীরা যে নারী তা তারা নিজেরা ভেবে যতটা হীনম্মন্যতায় ভোগে, পুরুষেরা বোধকরি ততোবার ভাবেনা।

ওমেন্সকর্নার : নারীবাদী মানেই কি পুরুষবিদ্বেষী ? বর্তমানে আমাদের দেশে তথাকথিত নারীবাদীরা যেমনটা করছে! এই বিষয়ে আপনার মতামত কি ?

ফারহানা হোসেন : আগেই বলেছি,  নারীবাদ নিয়ে আমার তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। অধিকার এভাবে অর্জিত হয়না। খাটো জামা আর সিগারেট ফুঁকলেই তাকে পুরুষ ভাববেন না নিশ্চয় আপনি? আসলে গোড়াটা হলো শিক্ষা। আপনার মন কতোটা উদারভাবে সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবতে পারে, সেটাই আপনার দৃষ্টিভঙ্গি।কতোটা আধুনিক সমাধান দিতে পারবেন এইসব পিছিয়ে পড়া মেযেদেরকে সেটাই আসল মানসিকতার পরিচয়। 

ওমেন্সকর্নার : মেলায় ফিরি। মেলা শেষ।  এখন পর্যন্ত পাঠকের কেমন সাড়া পেয়েছেন ?

ফারহানা হোসেন : পাঠক প্রতিক্রিয়া খারাপ ভালো দুটোই পেয়েছি। তবে অনেকেই এ লেখাগুলোকে প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন তাঁরা সহজে আমার অনুভূতিগুলোকে স্পর্শ করতে পেরেছেন।আবার অনেকে অভিযোগ করেছেন, হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত হবার কারনে তাঁর ছায়া আমার ওপরে প্রবল। সহজ ভাষায় পাঠককে আকৃষ্ট করার প্রবণতা আমার মধ্যে দৃষ্ট।যদিও এই সমালোচনাকে আমি আশীর্বাদ ভাবি। 

ওমেন্সকর্নার : আপনার এবং আপনার বইয়ের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।  

ফারহানা হোসেন : ভালো থাকবেন।


 

Leave a Comment