একজন প্রিয়তি হওয়ার থেকে একজন আমি হওয়া ভালো : প্রিয়তি 

  • ফারজানা আক্তার
  • মার্চ ১৮, ২০১৮

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আইরিশ মডেল ও সাবেক মিস আয়ারল্যান্ড। পেশায় বৈমানিক। প্রিয়তির শৈশব ঢাকায় কাটলেও কৈশোরে চলে যান আয়ারল্যান্ডে। ২০০১ সালে উচ্চশিক্ষার্থে আয়ারল্যান্ড যান তিনি। আয়ারল্যান্ডে গিয়ে মাইক্রোসফট সার্টিফাইড সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করেন। মডেলিং ও অভিনয় জীবনে প্রিয়তি অর্জন করেছেন অনেক স্বীকৃতি ও পুরস্কার। তার মধ্যে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ইন্টারন্যাশনাল রানওয়ে কুইন্স রিকগনেশন অ্যাওয়ার্ডসে পুরস্কৃত হন তিনি। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মিস ইউনিভার্সাল রয়্যালটি ২০১৩, আয়ারল্যান্ডে মিজ আয়ারল্যান্ড ২০১৪, মিস হট চকোলেট ২০১৪, মিস ফটোজেনিক ২০১৪, সুপার মডেল অব দ্য ইয়ার ২০১৪, মিস আয়ারল্যান্ড আর্থ ২০১৫ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মিস আর্থ হিসেবে প্রথম রানার-আপ হওয়ার পর মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল খেতাব পান ২০১৬ সালে, মিস কমপ্যাশনেট ২০১৬, মিস বেস্ট গাউন ২০১৬, মিস ফিটনেস ২০১৬ হয়েছেন। যুক্ত আছে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডেও।  খুব কম বয়সেই তিনি এতো এতো সফলতা পেয়েছেন। ওমেন্সকর্নারের দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরো উঠে এসেছে না বলা অনেক কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার।   

ওমেন্সকর্নার : কেমন আছেন ?

প্রিয়তিঃ আমি ভালো আছি, আপনারা সবাই ভালো আছেন? 

ওমেন্সকর্নার : আমরাও ভালো আছি। আপনার সন্তানেরা কেমন আছে এবং তারা কোথায়, কোন ক্লাসে পড়ছে ? 

প্রিয়তিঃ আমার সন্তানেরা ভালো আছে, ওরা আমার সাথেই আছে। আমার ছেলে আবরাজ, ও পড়ছে ক্লাস টু তে। আর মেয়ে মুনিরা, ও ক্লাস ওয়ানে পড়ছে। 

ওমেন্সকর্নার : ব্যক্তি জীবনে আপনি একজন সিঙ্গেল মাদার। সিঙ্গেল মাদারের জার্নিটা কবে থেকে শুরু হলো ?

প্রিয়তিঃ আমি যখন থেকে পাইলট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই তখন থেকেই আমার এই জার্নিটা শুরু হয়। 

ওমেন্সকর্নার : সিঙ্গেল মাদার জার্নির শুরুর পথটা কেমন ছিলো ? কিভাবে পাড়ি দিলেন কঠিন সেই পথ? একটু বিস্তারিত বলবেন 

প্রিয়তিঃ আসলে শুরুর পথটা কেমন ছিল সেটা  বলে বোঝানো মুশকিল। শুরু করতে বা বলতেই আমার ভয় লাগছে কজ এই লাইফটা হ্যাপিলি কেউ চায় না কিন্তু কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয় নিজের প্রয়োজনে, নিজের লাইফ এর প্রয়োজনে। কিছু কিছু ডিসিশন আমাকে নিতে হয় আমার জন্য, আমার বাচ্চাদের জন্য। বেটার লাইফ এর জন্য। আসলে এই বিষয়টা বলে শেষ হবেনা। আর বলে বোঝানোও যাবেনা। আমি একটা বই লিখছি সেইটা রিলিজ হলে আপনারা আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন। 

সন্তানের সাথে প্রিয়তি 

ওমেন্সকর্নার : একদিকে সিঙ্গেল মাদার যাকে বাবা এবং মা দুইজনের দায়িত্বই সমানভাবে পালন করতে হয়। অন্যদিকে মডেলিং, সামাজিক কর্মকান্ড, বৈমানিক পেশা এতকিছু সামলানোর পরও আপনাকে দেখলে মনে হয় আপনার বয়সটাকে কৈশোরেই আটকিয়ে রেখেছেন! আপনার এই বয়স আটকিয়ে রাখার রহস্যটা কি ? কিভাবে এতটা তারুণ্য এখনো ধরে রেখেছেন ?

প্রিয়তিঃ বয়স আটকে কি রেখেছি আমি ঠিক জানিনা, আমি বলতেও পারবোনা। লাকিলি এখানকার ওয়েদার অনেক ভালো। আমি সব কিছু টাইমলি করি। প্রচুর পানি খাই, এক্সেসাইজ করি। যে কেউ হেলদি ওয়েদার এ থাকলে আমার মনে হয় তার মন ভালো থাকবে, স্কিন ভালো থাকবে। আর এখানে ফ্রুটস গুলা অনেক ভালো। ফ্রেশ ফ্রুটস। ওল ওভার এখানকার ওয়েদারটাই হেলদি। এটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট। ( হাসি...)  

ওমেন্সকর্নার : আপনার ডেইলি রুটিনটা একটু বলুন। 

প্রিয়তিঃ ও মাই গড। আমার ডেইলি রুটিন শুনলে তো অবাকই হবেন। সকাল ছয়টাই আমার দিন শুরু হয়। আর শেষ হয় রাত ১২ টাই। এর মধ্যেই আমার সব কিছু করতে হয়। ঘুম থেকে উঠি, ফ্রেশ হই। তারপর আমি কিছু ফ্রুটস খাই। বাচ্চাদের টিফিন বক্স রেডি করি। তারপর বাচ্চাদের ঘুম থেকে তুলে ওদের ফ্রেশ করিয়ে স্কুলের জন্য রেডি করি, ওদের ব্রেক ফাস্ট করাই। দ্যন ওদের স্কুলে দিয়ে তারপর আমি আমার কাজে চলে যাই। ফ্লায়িং এ। ওখানে বিকাল পাচটা-ছয়টা বেজে যায়। অনেক সময় বাচ্চাদের বিভিন্ন একটিভিটিস থাকে। স্কুলে প্যরেণ্টস মিটিং, সুইংমিং প্রাকটিস এমন অনেক কিছুই থাকে। তখন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি এসে সেগুলোও আমাকে করতে হয়। অফিস থেকে ফেরার পথে আমি জিমে যাই। সেখানে ওয়ার্ক আউট করি। প্রায় দিনই আমার বাসাতে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বেজে যায়। ছুটির দিন গুলোতে বেশির ভাগ আমার যে সোশ্যাল ওয়ার্ক গুলা থাকে সেগুলা করি। অনেক দূরে দূরে চলে যেতে হয়। আবার যদি এমন হয় বাচ্চাদের সময় দেয়া প্রয়োজন তাহলে ওদেরকে সময় দিই। আসলে পুরা ব্যপারটা আমি গুছিয়ে নিয়ে করি। যখন যেখানে বেশি টাইম দেয়া প্রয়োজন সেখানে টাইম দিই। কাজটা ভাগ করে নিই। রাতে এসে আমি শাওর নিই, ডিনার করি। তারপর যতটুকো সময় পাই একটু স্টাডি করি, যেটাই আমার ভালো লাগে। একটু রিল্যাক্স এর জন্য। বই পড়া বা নাটক মুভি দেখা। এভাবেই চলে যাচ্ছে আমার দিন-রাত।  

সামাজিক কর্মকান্ডে প্রিয়তি 

ওমেন্সকর্নার : আপনি কিছু সাহসী ফটোশুটে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশে থেকে আমরা যেগুলো ভাবতেও পারি না।  আপনার কাছের মানুষজন যেমন : আত্মীয় -স্বজনরা এই বিষয়টাকে কিভাবে নিয়েছেন ? তারা আপনাকে সাপোর্ট করেছেন?

প্রিয়তিঃ হ্যাঁ আমি কিছু ফটোশুট করেছি। আসলে আমি আয়ারল্যন্ডে আছি বলেই করতে পেরেছি বাংলাদেশে থাকলে আমি করতে পারতাম না। ফ্যামিলি সাপোর্ট থাকলেও দেখা যেতো তারা বিভিন্ন সামাজিক চাপে সেগুলা তারা আমাকে করতে দিত না। আর এই গুলা বিষয়ে আশেপাশের মানুষ গুলো অনেক পীরাদায়ক। ফ্যামিলিতে অনেক পেইন দেয় এগুলা। মানুষকে সামলাতে গিয়ে অনেক কিছুতে বাধা দেয় ফ্যামিলি থেকে। সত্যি বলতে বীদেশে আছি বলেই ফ্যামিলিতে সে রকম আমাকে বাধা দেয় না। এখানে আছি বলেই আমাকে তারা এসেপ্ট করে নিচ্ছে দেশে থাকলে তারা আমাকে করতে দিত না আমি ঠিক জানিনা। 

ওমেন্সকর্নার : বাংলাদেশে আমরা যারা ওয়ার্কিং লেডি তাদের অনেকের পরিবার থেকে তেমন সাপোর্ট করা হয় না। এই রকম পরিস্থিতিতে একটা মেয়েকে প্রচন্ড মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।  একদিকে তার প্যাশন , অন্যদিকে তার পরিবার। মেয়েটি তখন দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই রকম পরিস্থিতিতে একটা মেয়েকে কি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন ?

প্রিয়তিঃ হ্যাঁ বাংলাদেশে এটা আমি দেখেছি। যতো দিন যাচ্ছে তারা অনেক বেকওয়ার্ড হচ্ছে এমনকি আমার ফ্যামিলিতেও আমি দেখেছি। মেয়েরা অনেক সাহস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা পরিশ্রম করছে। কিন্তু বেশিরভাগ ফ্যামিলিতে মানসিক সাপোর্টটা তারা পায় না। খুব কম সংখ্যক ফ্যামিলিতে তারা সাপোর্ট পায়। দেখা যায় হাজবেন্ড, বাবা-মা সাপোর্ট দেয় তবে সংখ্যাটা অনেক কম। কিন্তু সত্যি বলতে মানুষের যে লিভিং কস্ট সেটা তো কেউ আপনাকে দিয়ে যাবেনা। কেউ এসে আপনার বাসা ভাড়া দিয়ে যাবেনা, আপনার খাওয়া খরচ দিয়ে যাবেনা। নিজেরটা নিজেই করতে হবে। যারা পিছন থেকে কথা বলে তারা তো আপনাকে কিছু দিয়ে হেল্প করবেনা। তাই যারা পিছন থেকে কথা বলবে, যাস্ট কিক দ্যম আউট। তাদের কথা না ভেবে নাক,কান-মুখ খিচে কাজ করতে হবে। যারা আপনাকে পিছন দিয়ে টেনে ধরবে যাস্ট তাদের ইগনোর করতে হবে। 

ওমেন্সকর্নার : ফেসবুকের একটি বিষয় আপনি খেয়াল করেছেন কিনা আমি জানি না ! এই বিষয়টা অনেক মেয়েকে এক ধরণের ট্রমার মধ্যে নিয়ে যায়। ফেসবুকে মেয়েদের ছবির পোষ্টের নিচে কিছু কুরুচিসম্পূর্ন মানুষ নোংরামী করে বেড়ায়।  আমি ইনবক্সের কথা বললাম না। শুধু কমেন্টস বক্সের কথা বললাম।  কিছু মানুষের নোংরামী দিনকে দিন বেড়েই চলছে।  এই বিষয়টা আমাদের এখানেই থামানো উচিত! কি ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে ? অথবা আইনের মাধ্যমে কি কোনো সমাধানে আশা যায় ? এর সমাধান আপনি কিভাবে দেখছেন একটু বিস্তারিত বলবেন। 

প্রিয়তিঃ ওহ মাই গড। এটা আমি কি বলবো। এটা অনেক কথা বলা যায় অনেক। মূল বিষয়টা হচ্ছে ইন্টারনেটটা ভুল মানুষের কাছে পৌছে গিয়েছে। শিক্ষার আলো পৌছানোর আগে তাদের হাতে ইন্টারনেট পৌছে গেছে। বিশ্ব কোথায় যাচ্ছে, পৃথিবী কোথায় যাচ্ছে এ বিষয়ে তারা জানেনা। এমন যারা করছে তাদের বেশিরভাগ দেখা যায় অশিক্ষিত। তারা বিভিন্ন মানুষকে গালাগালি করছে। খারাপ খারাপ কথা বলছে। একটা কথা আছেনা, অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা। আমাদের দেশে মানুষ ইন্টারটেইন হওয়ার জন্য অপরচিউনিটি কম। তারা খেলাধূলা করছেনা, সোশ্যাল ওয়ার্ক করছেনা, স্টাডি করছেনা। সোস্যাল মিডিয়ায় এসে কাকে গালাগালি করে নীচে নামানো যায় সেই চিন্তায় ব্যস্ত আছে। আমার মনে হয় ইন্টারনেট এর সাথে সাথে এদের কাছে সঠিক শিক্ষাও পৌছাতে হবে। 

ওমেন্সকর্নার : সম্প্রতি নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় কিছু সংখ্যক মানুষ কো - পাইলট পৃথুলাকে নিয়ে যেভাবে নোংরামী করছে , সেটাকে আপনি কি বলবেন ? সব ব্যাপারে মেয়েদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা কখনো পরিবর্তন হবে বলে আপনি মনে করেন ?  

প্রিয়তিঃ একজন মানুষ যখন ডাক্তার হয় তখন সে নারী বা পুরুষ থাকেনা, একজন মানুষ যখন শিক্ষক হয় তখনও নারী বা পুরুষ থাকেনা। ঠিক সেভাবে একজন মেয়ে যখন পাইলট হয় তখন সে নারী বা পুরুষ থাকেনা। সে তখন একজন পাইলট। টাকা থাকলেই যে কেউ পাইলট হতে পারেনা। পাইলট হওয়ার জন্য সাহসী হতে হয়। অনেক ট্রেইন লেভেল পার করতে হয়। পৃথুলা সাহসী ছিল বলেই সব লেভেল পার করে পাইলট হয়েছে। এই কিছু সংখ্যক মানুষ হচ্ছে অন্ধকার। আর অন্ধকারকে আমাদের জয় করতে হবে। তাদের এমন কথাতে কারো শিক্ষা, কারো ইন্টেলেজেন্সিতে বিন্দুমাত্র আচ পড়বেনা। দূর্ঘটনা দূর্ঘটনায়। সেটা যে কারোর দ্বারা যখন তখন হতে পারে। 

ওমেন্সকর্নার : সুযোগ পেলে একজন নারী ঘরে , বাহিরে কতটা পারদর্শী হতে পারে তার উজ্জ্বল প্রমাণ আপনি নিজেই।  নিজেকে এতটা যোগ্য করে গড়ে তোলার পিছনের মূলমন্ত্রটা একটু জানতে চাই। 

প্রিয়তিঃ শেখার কোন শেষ নেই। আমি এখনও শিখছি, ভবিষ্যতেও শিখবো। আরো সামনের দিকে যাবো বলে আশা রাখি। আর চাবিকাঠি বলতে যদি বলতে হয় তাহলে সেটা আমার মরহুম মা। আমার মা এর প্রেক্ষাপট আর আর আমার প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন হলেও প্রায় এক। আমার মা বিধবা হয়ে তার দুই সন্তাকে মানুষ করেছেন আমি সিংগেল মাদার হয়ে আমার দুই সন্তাকে মানুষ করছি। যুদ্ধটা একই। টিকে থাকার লড়াই, যুদ্ধে জয়ি হওয়ার লড়াই। আমি শুধু এতোটুকুই জানি আমার কাজটা আমাকেই করে নিতে হবে। কেউ আমাকে এসে বলবেনা এই নাউ তোমার মর্যদা এই নাই তোমার অধিকার। আর হ্যাঁ সুযোগ পেলে একটা মেয়ে অবশ্যই ভালো কিছু করতে পারবে এতে কোন সন্দেহ নেই। 

ওমেন্সকর্নার : আমাদের সমাজে ছোট ছোট কিন্তু ভয়ঙ্কর কিছু রোগ বাসা বেঁধেছে।  প্যারেন্টিং তার মধ্যে একটি। আপনি একজন মা, সাথে বাবার ভূমিকাও পালন করছেন। আপনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্যারেন্টিং বিষয়টা নিয়ে কিছু বলুন। 

প্রিয়তিঃ প্যারেন্টিং নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক বড় একটা ঘাটতি আছে। মায়েদের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ। আসলে মায়েদের ফোকাসটা অনেক কম। সন্তানের দায়িত্ব নেয়ার মতো শক্তিশালি হয়ে উঠতে পারছেনা মায়েরা। তাই সন্তানদের ডিসিশন তারা নিতে পারছেনা।   

ওমেন্সকর্নার : প্রিয়তির চোখে আয়ারল্যান্ড আর বাংলাদেশের মধ্যে দুইটা বিশাল তফাৎ দেখতে চাই। 

প্রিয়তিঃ বাংলাদেশ আর আয়ারল্যন্ড এর পার্থক্য হচ্ছে কালচার। আমি বাংলদেশের কালচারকে ভালোবাসি। আয়ারল্যন্ড এর কালচারকে আমি শ্রদ্ধা করি। সত্যি বলতে বাংলাদেশ এর কালচার এর উপর একটা কালো ছায়া পড়েছে। আয়ারল্যন্ড এর বর্তমান কালচার অনেক বেশি বেগবান। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও ক্যথেলিক বিষয় গুলা খুব বেশি মানতো কিন্তু তারা সময়ের সাথে সাথে স্মার্ট হয়েছে। মেয়ে, ছেলে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করছে। তার এগিয়ে যাচ্ছে। আসলে এই বিষয়টা বলতে গেলে তো অনেক কথা বলতে হয় ... (হাসি) 

ওমেন্সকর্নার : এতো অল্প বয়সে বিশাল সফলতা।  যেখানেই পা রেখেছেন সেখান থেকেই অর্জন ছিনিয়ে এনেছেন।  কিভাবে সম্ভব ? কিভাবে পেরেছেন ?

প্রিয়তিঃ আসলে আপনারা শুধু সফলতার গল্প গুলা জানেন বলেই এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু এটার পেছনে অনেক কষ্ট করেছি। হেরেছি, ভেঙে পড়েছি। আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। অনেক রকম কষ্টের মধ্যে দিয়েও গেছি। সব কিছু মিলিয়ে কিছু অর্জন আমার হয়েছে তবে তার রাস্তাটা সহজ ছিল না। 

ওমেন্সকর্নার : আপনার সুন্দর একটি সংসার আছে, ফুটফুটে দুইটি বাচ্চা আছে, ক্যারিয়ার, অভিনয় সবদিকে সফল।  তারপরও কেউ একজন নেই! সেই নেই মানুষটাকে মিস করেন ? বা সেই নেই মানুষটার জায়গায় 'আছে' হওয়ার পসিবিলিটি আছে ?

প্রিয়তিঃ আচ্ছা আপনি প্রেম-ভালোবাসার কথা যদি বলেন তাহলে বলবো, কাকে কখন কীভাবে ভালো লাগে সেটা আসলে কেউ জানেনা। আবার ভালো লাগলেই যে তার সাথে বনিবনা হবে এমনও না। ভালো লাগার পরেও দেখা যায় সেই মানুষটা আমার জন্য রাইট না। আর আমি আমার স্বাধীনতাটাকে খুব ইঞ্জয় করি। আর যেটুকো সফলতা আমার এসেছে তার পিছনে এই সিংগেল থাকারও কিন্তু ভূমিকা আছে। একজন মানুষের সাথে কমিটমেন্ট এ জড়ালে তার প্রতি দায়িত্ব থাকে। কিছু বাধা বিপত্তিও চলে আসে। আমি আসলে একা থেকেই ভালো উপভোগ করছি। তারপরও কোন কিছুর কথা তো সিউরলি বলা যায়না।

ওমেন্সকর্নার : প্রতিদিন আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন ? সেই অনুভূতি কেমন ?

প্রিয়তিঃ এটা আসলে থ্রিলিং একটা এক্সপেরিএন্স। প্রতিদিন নতুন নতুন আকাশ। নতুন নতুন বাতাসের গতিবিধি। আমি যেহেতু প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করি সেহেতু নতুন স্টুডেন্ট, নতুন নতুন মেন্টালিটি। সব মিলিয়ে আমি আমার জবটাকে খুব ইঞ্জয় করি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে সুস্থ্য রেখেছেন বলেই আমি এটা করে যেতে পারছি। 

ওমেন্সকর্নার : বাংলাদেশে আবার কবে আসবেন ?

প্রিয়তিঃ এটা আসলে বলা যায়না। কাজ কম হলেই চলে আসবো। 

ওমেন্সকর্নার : মিডিয়াতে যারা কাজ করে তাদের নিয়ে এমনি অনেক গুঞ্জন রয়েছে।  বিমানে বিমানবালাদের নিয়ে! আপনি একজন সফল পাইলট এবং মিডিয়াতেও সফল মডেল, অভিনেত্রী ! আপনি কি এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে কখনো পড়েছেন ? কিভাবে হ্যান্ডেল করেন বিব্রতকর সময়গুলো ?

প্রিয়তিঃ এট আপেক্ষিক একটা বিষয়। কেউ তো কাউকে জোর কিছু করছেনা। নিজে কিছু পাওয়ার আশায় বা কোন কারণে যদি নিজেরা মিউচিয়ালি কিছু করে। এটা নিয়ে আসলে কিছু বলা যায়না। আমার কথা যদি বলি তাহলে বলতে পারবো আয়ারল্যন্ড এ এমন কোন কিছুর আমি স্বীকার হইনি। অনৈতিক প্রস্তাব যদি বলেন এটা এরা বোঝেই না। তারা মেয়দের সম্মান করে। আর যদি কারো প্রতি আকর্ষণ ফিল করে তবে পোলাইটলি অফার করে। মেয়েটা যদি এগ্রি না থাকে তাতেও কোন সমস্যা নেই। এতে সম্পর্কে ফাটল ধরেনা। বাংলাদেশে আমি শক্তভাবে মডেলিংএ কিছু করতে পারেনি কজ অলওয়েজ দ্যয়ার লুকিং ফর সামথিং। হয়তো সেখানে আমি আনলাকি ছিলাম। ভালো কারো সাথে আমার দেখা হয়নি। অবশ্যই সেখানে ভালো মানুষও কাজ করছে।   

ওমেন্সকর্নার : যারা প্রিয়তিকে দেখে উৎসাহিত হয় এবং একজন প্রিয়তি হতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য কিছু বলুন।

প্রিয়তিঃ একজন প্রিয়তি হওয়া থেকে আমি বলবো যে একজন আমি হওয়া ভালো। হ্যাঁ ইন্সপায়ার হওয়া যায় যে কাউকে দেখে। পৃথিবীর কোন কিছুই সর্টকাট না। তাই সর্টকাট ওয়ে না খুজে নিজেকে যোগ্য করে তোলা। প্লান করা। আর যারা নিজের ইচ্ছার শক্তিকে সাপোর্ট দেয় সেই মানুষ গুলার সাথে সময় দেয়া। আমি পারবো এই কথাটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। 

ওমেন্সকর্নার : আপনার জীবনী নিয়ে একটি বই বের হওয়ার কথা, এবং একটি সিনেমাও! সেগুলো কাজ কতটুকু এগিয়েছে ?

প্রিয়তিঃ কিছু অপেশাদার আচরণ কারণে এটা একটু দেরি হচ্ছে। কিছু বাধা-বিপত্তি এসেছে। যা হোক আমি আশা করছি এটা এই বছরের মধ্যেই শেষ করতে পারবো। আর সিনেমার ব্যপারটাও অনেক স্লো স্লো এগোচ্ছে কারণ এখানে সবার একটা করে পারমানেন্ট জব আছে। পাশাপাশি এই কাজ গুলা করে। তাই সবাই এক জায়গা হয়ে কাজ করা একটু সময় সাপেক্ষ। 

ওমেন্সকর্নার : আপনি আপনার স্বপ্ন এবং সন্তানদের নিয়ে ভালো থাকুন।  আপনাদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা। 

প্রিয়তিঃ আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ। আমার সন্তানদের জন্য দোয়া করবেন তারা যেন ভালো মানুষ হয়। কারণ সফল হওয়ার চেয়ে একজন ভালো মানুষ হওয়া খুব জরুরি। ওমেন্স কর্নার এর পাঠক, এর সাথে যারা আছে সবার জন্য অনেক অনেক শুভ-কামনা। 

Leave a Comment