মানুষ কখনও নিজেদের গৃহপালিত লেখকের লেখা পড়ে না!

  • ফারজানা আক্তার 
  • ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯

'মনের কষ্টের চেয়েও শরীরের কষ্ট বড়। মন ব্যথা পেলে শুধু মনই ব্যথা পায়। শরীর কষ্ট পেলে মন আর শরীর দুটোই কষ্ট পায়।'

উক্ত লাইনটি 'বাসন্তী লেন- A Realism of Life' নামক একটি বই থেকে নেওয়া। বইটির লেখক তানভীর মেহেদী। এটি তার লেখা দ্বিতীয় বই। তার লেখা প্রথম বইয়ের নাম ৩৬/ডি। তানভীর মেহেদীর এক্টিভিটি অনলাইনেও দেখার মতো। অনলাইনে তার মজার সব লেখার জন্য তিনি খুব জনপ্রিয়। লেখকের অনলাইন জীবন, লেখক জীবন, প্রফেশনার জীবনের পাশাপাশি তার লেখা দুইটি বই নিয়েও গল্প থাকছে এই সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার। 

ওমেন্স কর্নার : অনলাইনের তানভীর মেহেদী, আর অফলাইনের তানভীর মেহেদীর মধ্যে প্রধান পার্থ্যক কী?

তানভীর মেহেদী : অনলাইনে ইনসমনিয়ে ইনসমনিয়া লাগে, অফলাইনে শুধু ঘুমে ধরে।

ওমেন্স কর্নার : প্রফেশনালি আপনি কি করছেন ? প্রফেশনের মজার কোন ঘটনা যদি পাঠকদের উদেশ্য বলতেন!

তানভীর মেহেদী : আমি একজন জাহাজী। সিম্যান, সেইলর, মেরিন অফিসার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার যেটা বললে মানুষ চেনে সেটাই। আর আমার প্রফেশনের সবই মজার ঘটনা। এই ধরেন জাহাজে যখন রোলিং হয় (ঢেউ এর কারণে নড়াচড়া করে) তখন রোলার কোস্টারের ফিল পাওয়া যায়। তবে প্র‍্যাকটিকালি এটা অনেক কষ্টের ঘটনা।

ওমেন্স কর্নার : ছোটবেলায় তানভীর মেহেদী বড় হয়ে নিজেকে কোন প্রফেশনে দেখতে চেয়েছিলো ?

তানভীর মেহেদী : জজ, ব্যারিস্টার, রুবেল, আজমখান, পুলিশ।

ওমেন্স কর্নার : ছোটবেলা আপনি কি খুব দুষ্ট ছিলেন? ছোটবেলার কোন স্মৃতি যা এখনো মনে পড়লে হাসি পায়!

তানভীর মেহেদী : আমি ভেজা বেড়ালের মত দুষ্ট ছিলাম। আব্বা আম্মা জানতেনই না তাদের ছেলে এমন। একবার আমার এক স্যারকে গিয়ে আম্মা বললেন, ও তো অনেক চুপচাপ থাকে। কারও সাথে কথাই বলে না। স্যার বললেন, আপা! স্যরি, আপনি আপনার ছেলেকে চেনেন না। 

ওমেন্স কর্নার : লেখালেখির শুরুটা কার হাত ধরে এবং কিভাবে?

তানভীর মেহেদী : আমার নিজের হাত ধরেই। স্কুল লাইফ থেকেই প্রশ্নের উত্তর না জানলেও যখন হাবিজাবি লিখে পৃষ্ঠা ভরে রেখে আসতাম তখন থেকেই মনে হত আমার মধ্যে একটা লেখক লেখক ব্যাপার আছে।

ওমেন্স কর্নার : এবার খুব সিরিয়াস প্রশ্ন। আপনার প্রিয় লেখক কে?

তানভীর মেহেদী : হুমায়ূন আহমেদ।

ওমেন্স কর্নার : পরিবার, আত্মীয় - স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে লেখালেখি নিয়ে কেমন সাড়া পাচ্ছেন ?

তানভীর মেহেদী : পরিবার, আত্মীয়- স্বজন এবং বন্ধু বান্ধব শ্রেণির মানুষেরা কখনও নিজেদের গৃহপালিত লেখকের লেখা পড়ে না। 

ওমেন্স কর্নার : আপনার পাঠক কারা? কাদের কথা মাথায় রেখে আপনি লিখেন?

তানভীর মেহেদী : ঢাকা- চিটাগাং- সিলেট- ময়মনসিংহ- খুলনা- রংপুর- রাজশাহী এবং বরিশাল। নরমালি এই কয়টা বিভাগের মানুষদের কথা মাথায় রেখে আমি লিখি।

ওমেন্স কর্নার : এবারের বইমেলায় আপনার লেখা 'বাসন্তী লেন- A Realism of Life' বই এসেছে। বইটি নিয়ে যদি কিছু বলতেন!

তানভীর মেহেদী : এই বইটাতে আমি পুরোপুরি জীবনের গল্প বলতে চেয়েছি। এজন্যই "A Realism of life". বাসন্তী লেন বলতে চেয়েছে, জীবনের চেয়ে বড় কিছু নেই।

ওমেন্স কর্নার : আগের বইটা মানে "৩৬/ডি" নিয়েও যদি কিছু বলতেন!

তানভীর মেহেদী : "৩৬/ডি" সেক্স ওয়ার্কারদের নিয়ে লেখা উপন্যাস। আমরা চাইলেই যাদের গল্প বলতে পারি কিন্তু যাদের জীবন বদলে দিতে পারি না, ৩৬/ডি তাদের নিয়েই লেখা। এবং ৩৬/ডি উপন্যাসটা উৎসর্গ করা হয়েছে সেক্স ওয়ার্কারদের।

ওমেন্স কর্নার : আপনার দুইটি বই প্রকাশিত হয়েছে। দুইটি বই কি ভিন্ন ভিন্ন পাঠকদের উদেশ্য লেখা, নাকি একই শ্রেণীর ?

তানভীর মেহেদী : এখন পর্যন্ত যারা আমার বই পড়ছে তারা হয়ত অন্য কোন প্লাটফর্ম থেকে আমার লেখার সাথে পরিচিত। সো, ভিন্ন ভিন্ন পাঠক ব্যাপারটা না। মোটামুটি সব ধরণের পাঠকদের জন্যই দুটো বই।

ওমেন্স কর্নার : আপনার জন্য এবং আপনার বইয়ের জন্য অনেক শুভ কামনা। 

তানভীর মেহেদী : ওমেন্স কর্নারের জন্যও আমার অনেক অনেক শুভকামনা। ম্যান, উইমেন কিংবা আমার মত সিম্যান, সবাই একসাথে মিলেমিশে "আমিত্ব" মুক্ত হোক আমাদের পৃথিবী।

Leave a Comment