অ্যানা ফ্র্যাংক যিনি মানসম্পন্ন লেখনীর জন্য পরিচিত!

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯

আনেলিস মারি ‘আন’ ফ্রাংক (Annelies Marie "Anne" Frank) হচ্ছেন হলোকস্টের স্বীকার সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও বিখ্যাত ইহুদি নারী। তিনি তাঁর মানসম্পন্ন লেখনীর জন্য পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার তাঁর দিনলিপি এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক পঠিত বই। তাঁর জন্ম ভাইমার জার্মানির ফ্র্যাংকফুর্ট আম মাইন শহরে, কিন্তু তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। জাতীয়তায় ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন জার্মান। নাৎসি জার্মানির সেমিটিক বিদ্বেষী নীতির কারণে তিনি তাঁর জার্মান নাগরিকত্ব হারান। 

১৯৩৩ সালে ফ্রাংকের পরিবার আমস্টারডামে চলে যায়। সেই বছরেই নাৎসিরা জার্মানির ক্ষমতায় আসে। ১৯৪০ সালে তাঁরা নাৎসি জার্মানির আমস্টারডাম দখলের কারণে সেখানে অন্তরীন হয়ে পড়েন। ১৯৪২ সালের দিকে ইহুদি জনগণ নিধন বাড়তে থাকায় তাঁরা তাঁর বাবার অটো ফ্রাংকের লুকানো কক্ষে লুকিয়ে অবস্থান করতে থাকেন। দুই বছর পর, ৪ আগস্ট ১৯৪৪ সালের সকালে তাঁরা জার্মান নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন। কে তাঁদের লুকানো বাসগৃহের কথা জার্মানদের কাছে বখশিসের বিনিময়ে জানিয়ে দিয়েছিলো তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তাঁরা ধরা পড়েন ও তাঁদেরকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আন ফ্রাংক ও তাঁর বোন মার্গো ফ্রাংককে বার্গেন-বেলজান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ১৯৪৫ সালে টাইফাসে আক্রান্ত হয়ে তাঁরা দুজনেই মৃত্যুবরণ করেন।

জার্মান নাজি বাহিনী যখন নেদারলেন্ডস এ অভিযান চালায় তখন অ্যানা ও তার পরিবার একটি বাড়িতে লুকিয়ে থাকেন। অ্যানা তার এই লুকিয়ে থাকা দিন গুলুর বর্ননা লেখা শুরু করে। অ্যানা ১৯৪২ সালে তার ১৩তম জন্মদিনে তার বাবার কাছ থেকে একটি লাল-সাদা চেক প্রিন্টের কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট লক লাগানো অটোগ্রাফ খাতা পান। এই খাতাতেই ১৯৪২ সালের ১২ জুন থেকে তিনি তার দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ ঘটনা, কারো সঙ্গে কথা না বলতে পারা, নেদারল্যান্ডের অধিবাসী ইহুদিদের জীবনযাপন, বিধিনিষেধ ও পরবর্তীকালে অ্যানা নিজের অনুভূতি, বিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কে লিখেছেন। অ্যানা ডায়রিটিকে কিটি বলে সম্বোথন করতেন।

যুদ্ধ শেষে তাঁর পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা ব্যক্তি বাবা অটো ফ্রাংক আমস্টারডামে ফিরে আসেন, এবং অ্যানার দিনলিপিটি (ডায়েরি) খুঁজে বের করেন। তাঁর প্রচেষ্টাতেই দিনলিপিটি ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়। এটি মূল ওলন্দাজ ভাষা থেকে পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালে প্রথম বারের মতো ইংরেজিতে অনূদিত হয়। এর ইংরেজি নাম হয় দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়াং গার্ল। এটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ডায়েরিটি অ্যানার ১৩তম জন্মদিনে উপহারস্বরূপ দেওয়া হয়েছিলো। যেখানে অ্যানার জীবনের ১২ জুন ১৯৪২ থেকে ১ আগস্ট ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত সময়ের ঘটনাগুলো ফুটে উঠেছে।

১৯৪৭ সালে কিছু অনুচ্ছেদ মুছে ফেলে ডাচ ভাষায় ডায়রিটি প্রথমবার প্রকাশ করেন অ্যানা ফ্র্যাংকের বাবা অটো ফ্র্যাংক। সে সময় ডায়রিটির ৩ কোটি কপি বিক্রি হয়। এখন পর্যন্ত বইটি ৬০টির ও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। বইটি বিংশ শতাব্দির জনপ্রিয় বইয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এছাড়া বইটি অবলম্বনে অনেক নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।

Leave a Comment