কেনীয় নাগরিক হিসেবে প্রথম নোবেলজয়ী নারী ওয়াঙ্গারি মাথাই

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯

প্রথম শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নারী অধ্যাপিকা ওয়াঙ্গারি মাথাই ১৯৪০ সালের ১ এপ্রিল কেনিয়ার নায়েরি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ওয়াঙ্গারি মাথাই। কিকুয়ু নামের বিখ্যাত এথনিক পরিবারে তার জন্ম। এ পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে এ জেলায় বসবাস করছিলেন। ১৯৪৩ সালের দিকে তারা নাকুরু শহরের কাছে এক শ্বেতাঙ্গের খামার রিফট ভ্যালিতে চলে আসেন। কারণ এখানে ওয়াঙ্গারির বাবা কাজ পেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালের শেষদিকে তার মা ও দুই ভাইসহ তারা ফিরে আসেন আহেথিতে। কারণ তার দুই ভাইয়ের পড়াশোনার জন্য কোনো প্রাইমারি স্কুল ছিল না ওই খামারের ভেতর বা তার আশপাশে। তার বাবা ওই খামারেই থেকে যান।

কেনীয় নাগরিক হিসেবে তিনিই প্রথম নোবেলজয়ী নারী। এছাড়াও পূর্ব এবং মধ্য আফ্রিকায় তিনিই প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনকারী নারী। ১৯৭৭ সালে গ্রিন বেল্ট মুভমেন্ট নামের পরিবেশবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে আজীবন পরিবেশ রক্ষায় সংগ্রাম করেছেন মাথাই।
এ ছাড়া নাগরিক ও নারী অধিকারের জন্যও আজীবন লড়াই চালিয়ে গেছেন এই সংগ্রামী নারী ওয়াঙ্গারি মাথাই।

আট বছর বয়সে ওয়াঙ্গারি আহেথি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। এগারো বছর বয়সে মাথাই নায়েরির ক্যাথলিক মিশন পরিচালিত সেন্ট সেসিলিয়াস ইন্টারমিডিয়েট প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে সেন্ট সেসিলিয়ায়ার কোর্স শেষ করেন এবং কেনিয়ার ক্যাথলিক গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ পান। ১৯৬৪ সালে আমেরিকার মাউন্ট সেন্ট স্কলাসটিকা কলেজ থেকে জীববিজ্ঞানে বিএস, ১৯৬৬ সালে পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস এবং ১৯৭১ সালে নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যানাটমি বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেন।

১৯৬৯ সালের মে মাসে তিনি এমওয়াঙ্গি মাথাইকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির রয়েছে তিন সন্তান। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তারা এক ছাদের তলায় থাকেন। ১৯৭৯ সালে তাদের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। একটি গাছ লাগালেই মিলবে কয়েক সেন্ট। আফ্রিকার দরিদ্র নারীদের জন্য এ অভিনব পরিকল্পনা নিয়েই ‘গ্রিন বেল্ট মুভমেন্ট’ সংস্থা তৈরি করেছিলেন অধ্যাপক ওয়াঙ্গারি মাথাই। নাইরোবির একমাত্র পার্কে বহুতল ভবন তৈরির সরকারি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেও আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন এ সংগঠক। আর সেই থেকেই মাথাইয়ের সঙ্গে চূড়ান্ত সংঘাত তৈরি হয় কেনিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল অ্যারাপ মোইয়ের। জেল-জলকামান-পুলিশের লাঠি দিয়ে সরকারের তীব্র দমননীতির সামনেও পিছিয়ে যাননি মাথাই এবং তার ‘গ্রিন বেল্ট মুভমেন্ট’।

অধ্যাপিকা মাথাই তার পরিবেশ ও সামজবাদী কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে ফোর্বস এবং টাইম ম্যাগাজিনের তৈরি বিশ্বের একশ’ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ছিলেন মাথাই। ২০০৬ সালে মাথাইকে ফ্রান্স সরকার সে দেশের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদক ‘লেজিও দ্য অনার’-এ ভূষিত করে। এ বছরই তিনি ভারতের ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গেই তিনি চালিয়ে গেছেন নারীর ক্ষমতায়নের কাজ। সেই দীর্ঘ আন্দোলনের একটা পর্ব থেমে যায় ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১১। দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের পর ৭১ বছর বয়সে তিনি কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির এক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

Leave a Comment