জেন গুডল- শিম্পাঞ্জি বিশেষজ্ঞ

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯

ভালেরি জেন মরিস গুডল একজন ইংরেজ প্রাইমেটলজিস্ট এবং নৃবিজ্ঞানী, এথোলজিস্ট এবং জাতিসংঘের শান্তিদূত।তিনি মূলতঃ শিম্পাঞ্জি বিশেষজ্ঞ নামেই বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তিনি জেন গুডল ইন্সটিটিউট এবং দ্যা রূটস্ এন্ড সুটস এর প্রতিষ্ঠাতা। একই সাথে তিনি পশু সংরক্ষণ এবং কল্যাণ বিষয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করেছেন।

তিনি তাঁর জীবনের ৫৫ বছর ব্যয় করেছেন শিম্পাঞ্জিদের সামাজিক এবং পারিবারিক জীবনযাপনের উপর গবেষণা করে, গম্বে স্ট্রিম ন্যাশনাল পার্কে। তিনি আবিষ্কার করেন শিম্পাঞ্জিরা সর্বভূক এবং শিখিয়ে দিলে তাঁরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে। জেন গুডল ১৯৩৪ সালে লন্ডন, ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম হার্বার্ট মরিস গুডল ও মাতার নাম মার্গারেট ম্যানফ্যানউই জোসেফ।

বাল্যকালে পিতার কাছ থেকে পাওয়া "জুবলি" নামক এক খেলনা বানর প্রাপ্তির মাধ্যমে প্রাইমেট বর্গের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। পরবর্তীতে বাস্তব জীবনেই তিনি বানর প্রজাতি নিয়ে কাজ শুরু করেন। গুডল দুইবার বিয়ে করেছেন। ২৪ মার্চ, ১৯৬৪ সে একজন ডাচ বন্য জীবন চিত্রগ্রাহক ব্যারন হুগো ফ্যান লাভিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি লন্ডনের একজন নামকরা ফটোগ্রাফার ছিলেন। এই দম্পত্তির এক পুত্র সন্তান রয়েছেন। ১৯৭৪ সালে এই দম্পত্তির বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে সে ডিরেক ব্রাইকিসানকে (তানজানিয়ার সাবেক সাংসদ ও জাতীয় পার্কের সাবেক পরিচালক) বিয়ে করেন। ডিরেক অক্টোবর ১৯৮০ সালে ক্যানসারে মারা যান।

তিনি সবসময় প্রাণী এবং আফ্রিকা সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেন । তিনি ১৯৫৭ সালে কেনিয়ায় এর বন্ধুর ফার্মে যান। সেখানে তিনি কিছুদিন তার এক বন্ধুর সহায়িকা হিসেবে কাজ করেন। এরপর তাঁকে জন নেপার এবং ওসামা হিলের সাথে লন্ডন, ইংল্যান্ডে পশুর ওপরে পড়ালেখার জন্য পাঠানো হয়। তখন তিনি একজন শিম্পাঞ্জি গবেষণাকারী হিসেবে একজন হোমিডিস বিশেষজ্ঞের সহায়িকা হিসেবে নিযুক্ত হন। এই সূত্রে তাকে তানজানিয়া পাঠানো হয়।

গুডল শিম্পাঞ্জিদের সামাজিক ও পারিবারিক গবেষনার জন্য সবচেয়ে বেশী পরিচিত। তিনি কাসাখেলা শিম্পাঞ্জি কমিউনিটি নিয়ে তানজানিয়ার গম্বি স্ট্রিম জাতীয় পার্কে ১৯৬০ সালে গবেষনা শুরু করেন। কিন্তু তানজানিয়ায় আসার পর প্রথম প্রথম হতাশ হতে হয় জেনকে। শিম্পাঞ্জিদের কাছে যাওয়া প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়। তাকে দেখা মাত্রই এরা দৌড়ে পালায়। বইনোকুলার চোখে লাগিয়ে দূর থেকে তাদের দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পায় না সে।

একদিন চমৎকার এক বুদ্ধি আসে জেনের মাথায়। সে এক কাঁদি কলা নিয়ে প্রতিদিন একই সময় একই স্থানে বসে থাকতে শুরু করে। এভাবে একদিন একটা অল্পবয়স্ক শিম্পাঞ্জি কলা খাওয়ার লোভে নিজেই এগিয়ে আসে জেনের কাছে। জেন তাকে কলা খেতে দেয়। শিম্পাঞ্জিটিও জেনের হাত থেকে কলা নিয়েই আবার পালিয়ে যায়। প্রতিদিন একই কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন জেন, একসময় বন্ধু হয়ে যায় শিম্পাঞ্জিরা। তিনি শিম্পাঞ্জি পর্যবেক্ষনের সময় তাদের নাম্বার দ্বারা মনে না রেখে সে শিম্পাঞ্জিদের ফিফি, ডেভিড এরকম নাম প্রদান করতেন। সে প্রত্যেকের সাথে এক এক জন আলাদা মানুষের মতো আচরন করতেন, যা সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে অভাবনীয় ছিলো। তার দেয়া বানরদের কিছু নাম:

* ডেভিড গ্রেব্রেড, ধুসর রং-এর গুডঅলের পর্যবেক্ষিত প্রথম শিম্পাঞ্জি;
* গোলিয়াত, ডেভিড গ্রেব্রেডের বন্ধু, অন্যদের চেয়ে বড় বপু এবং দলের নেতা হওয়ার কারনে গোলাইত নাম দেওয়া হয়;
* মাইক, গোলিয়াতের মতই আরেক শিম্পাঞ্জি;

তিনি মনে করেন, "শুধু মানুষ-ই নয় শিম্পাঞ্জিদের মাঝেও সুখ, দুংখ,আনন্দ ও ভালবাসা রয়েছে"। সে দিনের পর দিন শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে গাছে গাছে চড়ে বেড়ায়। সাংকেতিক ভাষায় এদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। এদের মতো একই খাবার খেতে থাকে জেনও। মানুষের সঙ্গে শিম্পাঞ্জিদের অনেক মিল খুঁজে পায় জেন। যেমন- এরাও মানুষের মতোই সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। তাছাড়া শিম্পাঞ্জিরা খুবই বুদ্ধিমান। এরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য একধরনের সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে। এমনকি প্রয়োজন হলে ছোটখাট হাতিয়ারও তৈরি করতে পারে। এসব হাতিয়ার ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে অংশ নেয়।

১৯৭৭ সালে জেন আফ্রিকায় তার গবেষনার সুবিধার জন্য জেন গুডল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। জেন গুডল ইন্সটিটিউটের মূল কাজ ছিলো গম্বি স্ট্রিম জাতীয় পার্কের গবেষনায় সহায়তা করার সাথে সাথে সারা পৃথিবীতে নন-হিউমান রাইটস্ প্রোজেক্টের মাধ্যমে শিম্পাঞ্জি ও নরবানরদের আধিকার নিশ্চিত করা।

Leave a Comment