‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের কেন্দ্র এখন ঢাকা, কোলকাতা নয়‘

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
  • ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯

কবি আফরোজা সোমার কবিতায় থাকে মন্ত্রমুগ্ধ যাদু সম্ভার। পাঠককে আকৃষ্ট করে রাখে দারুন সম্মোহনে। এ সময়কার বাংলাদেশের শক্তিশালী কবির তালিকা করলে অনায়াসে চলে আসবে তার নাম। বর্তমানে তিনি অ্যামেরিকান ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ এর মিডিয়া ও ম্যাস কমিউনিকেশান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশান বা বিবিসি রেডিওতে নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে খন্ডকালীন কর্মী হয়ে কাজ করছেন ২০১৩ থেকে। এবারের মেলায় আসছে তার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘পরমের সাথে কথোপকথন‘।

তন্ময় আলমগীর : প্রথমেই আপনার পরিচয়টা জানতে চাই।

আফরোজা সোমা : পরিচয় শব্দটি বেশ রহস্যময়। ব্যাপৃতও বটে। জন্ম পরিচয়, কর্ম পরিচয়, লেখক পরিচয় ইত্যকার নানান প্রসঙ্গ এর সাথে জড়িয়ে-প্যাঁচিয়ে থাকে। পরিচয় প্রসঙ্গেই কদিন আগে বিস্তৃত একটি লেখা লিখেছিলাম। সেখানে পরিচয় নিয়ে বৃহৎ পরিসরে বক্তব্য তুলে ধরেছি। পরিচয় একদিকে যেমন কেজো অর্থ বহন করে আরেক দিকে দার্শনিক অর্থও বহন করে।

সময় থাকলে সেই লেখাটি আপনিও পড়তে পারেন এবং আপনার পাঠকদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দিতে পারেন। যাই হোক, এখানে আমার জন্ম, কর্ম, শিক্ষা ও লেখক পরিচয় তুলে ধরছি।

জন্ম বৃত্তান্ত: জন্মেছিলাম এক মঙ্গলবারে। ১৯৮৪ সালে। তখন শরৎকাল। ১৭ই আশ্বিনের এক সকালে বৃষ্টি থেমে রোদ উঠার পর আমার জন্ম। ছিলাম বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান।

বেড়ে উঠেছি কিশোরগঞ্জে। নরসুন্দা নদ বয়ে গিয়েছিল বাড়ির সামনে দিয়ে। প্রায় মৃত হলেও সেই নদের বুকে তখনো বর্ষাকালে টুইটম্বুর করতো পানি; পানিতে ফুটতো শাপলা-শালুক; নদীর দুই তীর মোহন হয়ে থাকতো কাশফুলের মায়ায়। আমাকে সম্মোহন করে নরসুন্দা কবে যে ঢুকে গেছে আমার ভেতর, তা আমি জানি না। তাই নরসুন্দা আমার পরিচয়েরও অংশ।

বিদ্যার্জনের ইতিবৃত্ত: কিশোরগঞ্জের সরকারী আদর্শ শিশু বিদ্যালয়, এসভি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং গুরুদয়াল সরকারী কলেজ ছিল আমার বিদ্যাপীঠ। পরবর্তীতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স।

কর্মজীবন: বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত। অ্যামেরিকান ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ এর মিডিয়া ও ম্যাস কমিউনিকেশান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এর আগে বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষকতার সুযোগ ঘটেছে স্ট্যাট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এর সাংবাদিকতা বিভাগে।

শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশান বা বিবিসি রেডিওতে নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে খন্ডকালীন কর্মী হয়ে কাজ করছি ২০১৩ থেকে। এর আগেও খন্ডকালীন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট হিসেবে ক’বছর জড়িত ছিলাম বিবিসি বাংলায়।

এছাড়া কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে জার্মান রেডিও ডয়চে ভেলে, বাংলাদেশী এফএম রেডিও চ্যানেল রেডিও টুডে, সংবাদ সংস্থা ফোকাস বাংলা, ইংরেজী কাগজ ঢাকা ট্রিবিউন ও যমুনা টিভিতে কাজ করেছি। তবে, জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি ঘটেছিল দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায়। ২০০৫ সালে। তখন ‘ঢাকায় থাকি’ বলে প্রথম আলোর যে নগর পাতা বের হতো সেখানে প্রদায়ক হিসেবে কাজের শুরু।

লেখালেখির ইতিবৃত্তান্ত: প্রথম কবিতার বই অন্ধঘড়ি। ২০১০ সালে বেরিয়েছিল কথা প্রকাশ থেকে। পরবর্তীতে আরো তিনটি কবিতার বই বেরিয়েছে। হারমোনিকা, ডাহুক ও পরমের সাথে কথোপকথন যথাক্রমে প্রকাশ হয় ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে ।  

প্রথম কবিতা লিখি ১৯৯৬ সালে। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। আমার কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে। নবধারা সাহিত্য পত্রিকায়। আমার লেখা প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় সম্ভবত ২০০২ বা ২০০৩ সালে। কিশোরগঞ্জের দৈনিক শতাব্দির কণ্ঠ পত্রিকায়।

লেখালেখির শুরু থেকেই কবিতা ও গল্প লিখি। পরবর্তীতে, সাংবাদিকতা সূত্রে কলাম এবং বিশ্লেষনধর্মী সংবাদ গদ্য বা নিবন্ধ লেখার সূত্রপাত। আর গবেষণা ও প্রবন্ধ লেখায় হাতেখড়ি হয় শিক্ষকতার সুবাদে।

তন্ময় আলমগীর : দীর্ঘ চার বছর পর এবারের মেলায় প্রকাশিত হলো আপনার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘পরমের সাথে কথোপকথন’। চার বছর পর কেন? কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?

আফরোজা সোমা : কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। বই বের করার কথা ভাবিনি। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বোধহয়, আমার যোগাযোগহীনতা। মানে, ‘আমার কাছে পাণ্ডুলিপি আছে’ এই কথাটিই আসলে বলা হয়ে ওঠে না। আর যারা যোগাযোগ করেছিল, ঘটনাচক্রে তাদের সাথে ব্যাটে-বলে মেলেনি। তাই, দেরী হলো।

তন্ময় আলমগীর : কাব্যগ্রন্থ ‘পরমের সাথে কথোপকথন‘ এর ব্যাপারে কিছু বলুন।

আফরোজা সোমা : পরমের সাথে কথোপকথন বলে আমার একটি ছোট্ট সিরিজ কবিতা আছে। সেই নামেই বইটির নামকরণ। এতে ৪৫টি কবিতা রয়েছে। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বৈভব। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শতাব্দি জাহিদ। বইমেলার ৪২২ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাবে মেলার ২২তম দিন থেকে।

প্রেম ও আধ্যত্মিক অনুসন্ধান বা স্পিরিচুয়াল সার্চ— এই দুই ধরণের অনুভূতিজাত কবিতা রয়েছে গ্রন্থে। এই দুই বোধের বাইরেও কয়েকটি কবিতা রয়েছে। যেখানে প্রধান হয়ে উঠেছে সমাজের অসংগতি এবং মানুষের আচরণের বৈপরিত্য। আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানমূলক কবিতাগুলোকে আপনি হয়তো সুফি দর্শন ও মিস্টিক ঘরানার কবিতাও ভাবতে পারেন। এই কবিতাগুলো মূলত নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া ও আলাপনের সারৎসার। আর প্রেম তো চিরকালীন বিষয়। রোমান্টিক সেই কবিতাগুলোয় রয়েছে বিরহ, বিচ্ছেদ ও মিলনের আকুতি।

তন্ময় আলমগীর : হাওরবেষ্টিত প্রাকৃতিক লীলাভূমিতে আপনার বেড়ে ওঠা। কাব্যচর্চার জন্য পরিবেশ কতটৃকু ভূমিকা রাখে?

আফরোজা সোমা : কিশোরগঞ্জের একটি বিস্তৃত অংশ জুড়ে হাওড় রয়েছে। কিন্তু এই জেলা পুরোটাই হাওড়াঞ্চল নয়। আমার বেড়ে ওঠা কিশোরগঞ্জ শহরে। শহরে বা তার আশ-পাশে হাওড় নেই। হাওড় একটু দূরে। শহরের মানুষদের মাঝে হাওড়বাসীদেরকে ‘ভাটি অঞ্চলের মানুষ’ বলে ডাকার চল ছিল। তো ভাটি অঞ্চল বলে খ্যাত সেই হাওড় দেখার সুযোগ আমার জীবনে বিশেষ আসেনি। কলেজে পড়ার সময় একবার ৪/৫ ঘন্টার জন্য একজনের সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার জীবনে এইটুকুই হাওড়ের স্মৃতি। ফলে, কবিতা বা সাহিত্য চর্চায় হাওড়ের প্রভাব কতটুকু প্রবল হতে পারে তা প্রতক্ষ্যভাবে আমার বলার সুযোগ নেই।

তবে, আমি নরসুন্দার কথা বলতে পারি। আমার চিত্তের গভীরে পড়েছে নরসুন্দার প্রভাব।

এছাড়া, পৃথিবীর আরো অনেক কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীর জীবনের দিকে তাকালেও দেখা যায় যে, তাদের জীবনেও প্রকৃতির প্রভাব ছিল বিস্তর। মানে একজন ঊষর মরুর কবির মনে আদিগন্ত বিস্তৃত ধূলির উপর ছড়িয়ে থাকা ভোরের রোদ যে আবহ নিয়ে আসবে শ্বেতশুভ্র তুষার ঢাকা বিস্তীর্ন অঞ্চলে বেড়ে উঠা একজনের মনে হয়তো সেই আবহ আনবে না।

তন্ময় আলমগীর : কবি, শিক্ষক, সাংবাদিক আপনার এই তিন পরিচয়ের ব্যাপারে আলাদা আলাদা কিছু বলুন।

আফরোজা সোমা : শিক্ষকতা আমার পেশা। তবে, এটি শুধুই রুটি রুজির জন্য নয়। এর প্রতি ভালোবাসা আছে। শিক্ষকতার প্রতি আমার ছেলেবেলা থেকেই আকর্ষণ ছিল। পেশাটির একটি দারুণ দিক হচ্ছে, কাজের সুবাদেই প্রতিদিন প্রচুর তরুণ-তরুনীর সাথে দেখা হয়। তারা প্রাণোচ্ছল, স্বপ্নবান, টগবগে আর আবেগপ্রবণ। ক্লাশে কোর্সের পড়ার ফাঁকে ফোঁকরে নানান কায়দায় আমি ওদের সাথে জীবন নিয়ে আলাপ করি। জীবন যে শুধুই পাঠ্যবইয়ের বাঁধা বুলি, উঁচু গ্রেড আর বেশি সিজিপিএ অর্জনের ঘোড়দৌড়ের মাঠ নয় সেইসব নিয়ে ওদের সাথে কথা বলি।   

সাংবাদিকতা পেশাটি দারুণ। এতে ক্লান্তি আসার সুযোগ নেই। প্রতি মুর্হুতে নতুন-নতুন ঘটনা আর গল্পে সাংবাদিকের জীবন ভরপুর। বাংলাদেশের বাস্তবতায় দু:খী ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি বিরাট হাতিয়ার সাংবাদিকতা। এই পেশাটির প্রতি আমার গভীর টান রয়েছে। তাই, শিক্ষকতা আমার পূর্ণকালীন পেশা হলেও, কোনো না কোনো ফর্মে আমি নিজেকে সবসময় সাংবাদিকতার সাথে জড়িয়ে রেখেছি।

পেশা হিসেবে কোনো না কোনো কাজ প্রায় প্রত্যেক মানুষকেই করতে হয়। মানে পেশা হচ্ছে রুটি রুজির উপায়। যদি আমার রুটি রুজির দরকার না হতো তাহলে আমি পূর্ণকালীন কোনো কাজে নিজেকে নিয়োগ করতাম না। আমি বরং সার্বক্ষণিকভাবে আত্মনিয়োগ করতাম লেখায়।

আমার মাথা ভরা গল্পের প্লট। আমার আলমারি ভরা বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বই। আমাদের উপমহাদেশের একটি বড় ঘটনাকে কেন্দ্র গল্প লেখার প্রতি ক’বছর আগে আমার প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। সেই বিষয়ে বাজারে যত প্রকারের বই আছে মোটামুটি সেসবের অধিকাংশই সংগ্রহ করে রেখেছি রিসার্চ ম্যাটেরিয়াল হিসেবে; তৎকালীন বাস্তবতা জানার জন্য। কিন্তু হয়ে উঠছে না। গুছিয়ে ওঠাটা হয়নি।

লেখা পূর্ণ মনোযোগ দাবী করে। লেখকের প্রস্তুতি আমাদের পুরানে বর্ণিত মুনি-ঋষিদের সাধনার চেয়ে এক বর্ণও কম নয়। সাধনায় কবি ও লেখক হয়ে উঠতে হয়। কিন্তু রুটি রুজির তাগিদে রোজ জীবনের একটা বড় সময় খরচ হয়ে যায়। মাথা ভরা গল্পের প্লট নিয়ে কেজো কাজের ফাঁকে লেখার জন্য সময় বের করাটা অনেক সময় মুস্কিলই বটে। এতো কিছু করে লেখার জন্য মনোযোগ ধরে রাখতে দম প্রয়োজন।

লেখকের প্রস্তুতি অনেক দীর্ঘ ও ব্যাপক। সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন সব বিষয়েই নিবিড় জ্ঞান ও পর্যবেক্ষণ থাকাটা জরুরি মনে করি। লেখকের জন্য বিশ্ব বীক্ষণ থাকা আবশ্যক। তাই, লেখকের পাঠের তালিকাও বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন।

আমি নিজে যেখানে যেভাবে কবি ও লেখক হিসেবে দেখতে চাই, তেমন লেখক অর্থাৎ নিজের মনোমত লেখক এখনো নিজের কাছে হয়ে উঠতে পারিনি। নিজের মনের মতন এখনো হয়ে উঠতে না পারলেও, আমার কবি ও লেখক সত্তাটিকেই আমার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ও প্রকৃত পরিচয় বলে মনে করি।

তন্ময় আলমগীর : শিক্ষার্থী বা নতুন প্রজন্মের মধ্যে কতটুকু সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা লক্ষ্য করছেন?

আফরোজা সোমা : শিক্ষার্থীরা বা তরুণেরা যে বই পড়েন না, এমন নয়। তাদের একটি অংশ ঠিকই নিজেদের আগ্রহ অনুযায়ী সাহিত্য পড়েন। এখন আপনি যদি প্রশ্ন করেন যে, পড়ুয়া এই অংশের সংখ্যাটি কেমন? এর উত্তরে হয়তো কিছু তেতো সত্য উঠে আসবে।

শিক্ষার্থী বা নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা এই সমাজেরই অংশ। দুই-চারটা ব্যতিক্রম ছাড়া, এই সমাজে সাহিত্যকে ও সাহিত্যিককে খুব সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা হয় না। এই সমাজে বিবিএ পড়া ভালো বেতনের একজন সেলস এক্সিকিউটিভের কদর বেশি; একজন মামুলী অভিনেতা বা অভিনেত্রীর তারকাখ্যাতি ও সম্মান বেশি; পড়শু দিন গান শিখে আজকে একটি গানের মিউজিক ভিডিও করে পত্রিকায়, রেডিওতে টিভিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া একজন গায়কের প্রচার ও মর্যাদা বেশি। ৫ মিনিটের একটি শর্ট ফিল্ম বানালেও তাকে পরিচালক হিসবে স্বীকৃতি দিয়ে তার জন্য ভাবার অনেক লোক আছে; তার জন্য অনুদান নিয়ে প্রস্তুত আছে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম।

আর কবিতা ও কবিকে, সাহিত্য ও সাহিত্যিককে ধীরে ধীরে ঠেলে দেয়া হয়েছে কোণায়; প্রান্তে। কবি ও সাহিত্যিককে অধীত জ্ঞানের আধার হিসেবে নয়, বরং আজকাল তুলে ধরা হয় ক্ষ্যাপাটে, পাগলাটে, আর্থিকভাবে অসফল, উচ্ছনে বা গোল্লায় যাওয়ার নামান্তর হিসেবে। এই ক্ষেত্রে কবিতা বা সাহিত্য যারা চর্চা করছেন তাদের যে দায় নেই তা নয়। ‘কবিতা লেখা সহজ’ তাই ‘যত কাক তত কবি’ বা ক্ষেত্রভেদে ‘কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি’ বচনের তৈরি হয়। ‘ট্র্যাশ’ বনাম ‘মহৎ’ এই দুই ক্ষেত্র সিনেমা, চিত্রকলা, সঙ্গীতসহ শিল্পের সকল শাখাতেই রয়েছে। তবে, মোটাদাগে, বাংলা সাহিত্য হয়ে উঠেছে নম:শুদ্রের শিল্প। আর সাহিত্যের মধ্যে সম্মান যা কিছু এই নগরে অবশিষ্ট আছে তা রয়েছে বাংলা ভাষাভাষী ইংরেজী সাহিত্য চর্চাকারীদের ঘিরে।

শিক্ষর্থীরা সমাজেরই সন্তান। তারা সাহিত্য কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে কেন ‘লুজার’ এর খাতায় নাম লেখাবেন! এরচেয়ে আড়াই মিনিটের একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়ে বা কিছু ফুটেজ জোড়া দিয়ে কুড়ি মিনিটের একটা প্রামাণ্যচিত্র বানিয়ে চলচিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সমাজের চোখে সম্মানের জীবন বেছে নেবেন। কবিতা ও সাহিত্যে নিজেকে নিয়োগ করে কেবলি টিনের তলোয়ার হয়ে বেঁচে থাকায় তরুণদের আগ্রহ না হওয়াটাই স্বাভাবিক।

তাই, সাহিত্যের প্রতি আলাদাভাবে ভালোবাসা দেখানোর কোনো কারণ নেই। যারা ভবিষ্যতে লেখক হবেন তারা নিজের তাড়না থেকেই পড়বেন। আর যেহেতু সাহিত্য রাতারাতি তারকা বনে যাবার বা কাড়ি কাড়ি অর্থ উপার্জনের কোনো প্ল্যাটফর্ম নয় তাই এক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ একটু কম হবে; এটিই স্বাভাবিক।

তন্ময় আলমগীর : দিনদিন কবিতার পাঠক কমে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ শুনি। কবিতার প্রাচীন জৌলুসের অভাব নাকি আধুনিকতা মানেই ক্রিটিক্যাল?

আফরোজা সোমা : এই প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর অন্য আরেকটি সাক্ষাতকারে ক’বছর আগে দিয়েছিলাম। এখানে আরেকবার বলি। কবিতার পাঠক কোন কালে বেশি ছিল? কোন দেশে কবিতার বই গানের অ্যালবামের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে? কবিতা কি শ্রীদেবী বা মাধুরীর নাচ যে ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে দিনমজুর— সকলেই হেলে পড়বেন কোমরের বিভঙ্গ দেখে?

কবিতাও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মতন। কবিতার পাঠকের প্রস্তুতি প্রয়োজন। শুধু কবিতার কথাই বা বলি কেন? বাংলাদেশের এফডিসি কেন্দ্রীক সিনেমা যারা দেখেন সেইসব দর্শককে একবার ধরে বেঁধে বসিয়ে দিন ঋত্বিক ঘটক বা টেরেন্স মালিক বা ইংমার বার্গম্যানের সিনেমার সামনে। ছে! ছে! বলে তারা ঠোঁট উল্টোবে। বাজি ধরে বলছি। অর্থাৎ সমস্যাটা সিনেমার নয়। দর্শকের। দর্শক কানেক্ট করতে পারছে না। কবিতার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। পাঠক যদি রবীন্দ্রনাথের ভাষার মধ্যেই সাঁতার কাটতে থাকেন জীবননান্দ বা বিনয় মজুমদার তার কাছে ‘কী লেখে ছাই’, ‘বুঝি না কিছু’, ‘কবিতা দুর্বোধ্য’ ইত্যকার মন্তব্যই করবেন।

এখন আপনি কি বার্গম্যানকে বলবেন যে, “ভাই, আপনি এইভাবে সিনেমা বানাইয়েন না। আমরা বুঝি না। আপনি বরং আলফ্রেড হিচককের মতন সিনেমা বানান। তাইলে আমরা বুঝবো।”? অথবা আপনি কি পাগলাটে চিত্রকর সালভাদর দালিকে অতীতে ফেরত গিয়ে বলবেন, “কী আঁকলেন এটা! ঘড়ি কেমনে গইল্যা পইড়া যায়! ধুর! যত সব আজগুবি ব্যাপার!”?  

জানি, এই কথাগুলো বলবেন না। কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে এসবই ঘটছে। কবিকে পরামর্শ দিচ্ছেন এফডিসির দর্শকতুল্য পাঠকেরা যে কিভাবে কবিতা লিখতে হবে। এ এক তেলেসমাতিই কাণ্ডই বটে!  

তবে, এখানে আরেকটি বিষয় অতি অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, সময় পাল্টেছে। মানুষের বিনোদনের জন্য এখন মাধ্যমের অভাব নেই। সময় কাটানোর জন্য মাধ্যম এখন ভুরি ভুরি। আশির দশকের বাংলাদেশ আর এই একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষ প্রান্তে দাঁড়ানো বাংলাদেশ এক নয়। নেটফ্লিক্সে একাউন্টটা করে নিলেই একেবার লেটেস্ট হলিউডি সিনেমাটা এখন আঙুলের ডগায়। ফলে, সময় কাটানোর জন্য এখন আর শরৎ বাবুর ‘দত্তা’ কি ‘দেবদাস’ পড়ার দরকার নেই। অতএব, সময়ের পরিবর্তনের ফলে, শুধু কবিতা নয় সামগ্রীক অর্থেই গ্রন্থ পাঠের উপযোগিতা কমেছে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, ফেসবুক বা সিনেমা কি গ্রন্থের বিকল্প হতে পারে? না। পারে না। কিন্তু পাঠমুখী প্রজন্ম তৈরি করতে হলে গণমাধ্যমের এবং পারিবারিক সংস্কৃতির একটি বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। তো আপনিই বলুন, বাংলাদেশে গ্রন্থপাঠের জন্য জাতীয়ভাবে কতখানি মনোযোগ দেয়া হয়েছে? এই দেশে কয়টি গণগ্রন্থাগার রয়েছে? সেই গণগ্রন্থাগারগুলোর বাস্তব চিত্রটাইবা কেমন?  

এই দেশের মনোবৈকল্য কাটাতে আব্দুল্লাহ আবু সাইয়িদ স্যারের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশে যেভাবে চেষ্টা করছে সেরকম তৎপরতা আরো প্রয়োজন। পাড়ায়-পাড়ায় গণগ্রন্থাগার গড়ে তুলতে হবে। দেশ যে ক্রমশই ধর্মীয় উন্মত্ততা, উগ্রবাদের দিকে যাচ্ছে; দেশে যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে; দেশে যে ‘যা হোক কোনো একটা উপায়ে’ কেবলি অর্থ উপার্জনের এক মহামারী তৈরি হয়েছে; দেশের কবি, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মাঝে ‘যা হোক কোনো মতন’ দু’চারটা পুরষ্কার বাগিয়ে নিতে পারলেই যে খুব কিছু একটা করে ফেল্লাম বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠছে— সেগুলোর পেছনেও সেই একই কারণ।  

গ্রন্থাগার ও গ্রন্থপাঠের কোনো বিকল্প নেই। গ্রন্থপাঠ গুরুত্ব পেলে গ্রন্থের লেখকও মর্যাদায় অভিসিক্ত হবেন। কবিতা কোনো আসমানী বস্তু নয়। কবিও নয় কোনো দৈবসত্তা। নগরে আগুন লাগলে দেবালয় যেমন এড়ায় না, তেমনি সারা দেশের সবক্ষেত্রে পচনেরই বহিপ্রকাশ সাহিত্যিক এই শূন্যতা; কবিতার এই নম:শূদ্রতা। এদেশে লক্ষীর পেছনে অধিকাংশ মানুষ উন্মুখ হয়ে ছুটছে। আর স্বরস্বতী পড়ে আছেন অবহেলায়; ঠিক আজকের বাংলাদেশের অবহেলিত কবি ও সাহিত্যিকদের মতই।

তন্ময় আলমগীর : ওপার বাংলার কবিদের সাথে আপনার পরিচয় আছে। তাদের কাব্যভাষা আর অামাদের কাব্যভাষার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু এবং কেন?

আফরোজা সোমা : এটি একটি বিস্তৃত আলাপ। অন্য আরেকটি সাক্ষাৎকারে এই নিয়ে একবার বেশ বিস্তারিত বলেছিলাম। সংক্ষেপে এখানে আরেকবার বলি। ভাষা হচ্ছে মানুষের চিন্তার অনুবাদ। মানুষ যে পারিপার্শ্বিকতায় জীবন-যাপন করেন, যে রাজনৈতিক বাস্তবতায় থাকেন, যে বোধ-বুদ্ধি উপলব্ধি দিয়ে তাড়িত হন সেসবই অনূদিত হতে থাকে ভাষার ভেতর দিয়ে।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভাষা বাংলা। সাহিত্যিকেরা লেখেনও বাংলায়। কিন্তু আজকের একুশ শতকের এই তৃতীয় দশকের প্রারম্ভের কোলকাতার বাস্তবতা আর বাংলাদেশের বাস্তবতা এক নয়।

বাংলাভাষা, বাংলা সাহিত্য ও বাংলা সংস্কৃতির কেন্দ্র এখন ঢাকা তথা বাংলাদেশ। অতীতে এককালে এই গৌরব কোলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের ছিল। সুনীল, সমরেশ, বুদ্ধদেব, শক্তি, জয়, বিনয় তাঁরাই সেই কেন্দ্রের শেষ চিহ্ন।

বিরাট বিশাল ভারতের আরো অনেকগুলো প্রদেশের মতই পশ্চিমবঙ্গও একটি প্রদেশমাত্র। হিন্দি ও ইংরেজীর প্রবল চাপে বাংলাভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি খোদ কোলকাতাতেই এখন ত্রাহি ত্রাহি দশায় আছে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তাদের সাহিত্য ও সিনেমার পাঠক, দর্শক বা ভোক্তা নেই। কারণ ভারতে সব প্রদেশেই এমন সাহিত্য ও সিনেমা বিরচিত হচ্ছে।

তাই, পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের কাছে এখন বাংলাদেশই মক্কা বলে বিবেচিত হতে বাধ্য। তারা কেউ যদি এদেশের পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় তবেই সে পাবে একটা বিরাট দেশের পাঠককূল; তবেই তার কাটতি বাড়বে। ফলে, বর্তমানের কলকাতাকেন্দ্রীক সাহিত্যের সাথে আজকের বাংলাদেশের সাহিত্যকে তুলনা করার আগে বাংলাদেশীদের অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।
 
রাজনৈতিকভাবে কোলকাতার সাথে বাংলাদেশের বিচ্ছেদের পর কেটে গেছে ৭০ বছরের বেশি। এই সত্তর বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রদেশের আর একটি দেশের ভাব-ভঙ্গি-ভাষা ও প্রকাশে বিস্তর ফারাক ঘটে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। একটু নিবিড় পাঠ ও পর্যবেক্ষণ করলেই সেই ফারাক প্রতীয়মান হয়ে ওঠে।

তন্ময় আলমগীর : কবিতায় নারীর অধিকার নিয়ে কতটুকু বলেছেন আর কতটুকু বলতে চান?

আফরোজা সোমা : কবিতা কোনো প্রপাগাণ্ডা টুল নয় যে এটিকে আমি লিফলেটের মতন করে একই কথা লিখে-লিখে বিলি করে যাবো। মানব জীবন এক বিরাট ক্ষেত্র। এর সাথে শুধু মহাভারতেরই তুলনা করা চলে। জীবনের এই বিরাট প্রেক্ষাপটে নানান বোধ দিয়ে তাড়িত হয়ে কবিতা লেখা হতে পারে। এছাড়া নিপীড়িত মানুষের পক্ষে আমার কবিতা সবসময়েই সোচ্চার। এরই ধারাবাহিকতায় নিপীড়িত নারীর বাস্তবতাও কবিতায় এসেছে। ব্যাস। ওইটুকুই। এর বেশি কিছু নয়।

তবে, কবিতার বাইরে আমার প্রচুর কাজ আছে নারী অধিকার নিয়ে। প্রচুর লেখালেখি রয়েছে। নারী নিপীড়ন বন্ধে আমি সদা সোচ্চার। লেখালেখি থেকে টক শো— সবখানেই উইমেন রাইটস ডিফেন্ডার হিসেবে আমি সক্রিয়। সমাজের বৈষম্য দূর করে শান্তি আনতে নারী নিপীড়ন বন্ধের বিকল্প নেই।

তন্ময় আলমগীর : কবিতার পাশাপাশি গল্পও লিখছেন। সে প্রসঙ্গে অন্যদিন জানবো। সম্প্রতি পারস্য কবি আল্লামা রুমির কাব্যানুবাদ করছেন। আরো অনেক কবি থাকতে রুমির কবিতা কেন?

আফরোজা সোমা : একটা সময় ছিল যখন প্রায় প্রতিদিনই রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়া হতো। মানে রোজকার প্রার্থনা যেমন মনে প্রশান্তি এনে দেয়, তেমনি ছিল রোজকার রবীন্দ্র পাঠ। কিন্তু গত ক’বছর হলো, প্রার্থনার অংশ হয়ে উঠেছেন রুমি। কোনো বিশেষ চিন্তা করে অনুবাদ শুরু করিনি। পড়তে-পড়তেই একদিন কী মনে করে যেনো একটা কবিতা অনুবাদ করলাম। তারপর থেকে বেশ কিছু অনুবাদ করেছি। এর মধ্যে দু’জন প্রকাশকও রুমির কবিতা দিয়ে বই প্রকাশে আগ্রহ জানিয়ে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু আমি এখনি রুমির বই করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নই। অনুবাদ করতেই হবে, এই বোধে তাড়িত হয়ে আমি কোনো দিন রুমির কবিতা অনুবাদ করিনি। রুমির কাছে আশ্রয় পাই। তাই তার কাছে যাই। অনুবাদকর্মটাও সেই প্রশান্তিরই বর্ধিতাংশ।

তন্ময় আলমগীর : কাব্যচর্চা নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

আফরোজা সোমা : কোনো পরিকল্পনা নেই। লিখব। লিখে যাবো। সেই নরসুন্দা নদের মতন যতদিন ভেতরে বইবে কবিতার নহর, ততদিন বয়ে যাবে। যদি কখনো এই ফল্গুধারা বন্ধ হয়ে যায়, তো যাবে। এখানে জোরজবরদস্তির কিছু নেই।

এখানে ভারতীয় লেখক আর কে নারায়নের একটি গল্পের কথা মনে পড়ছে। আমার খুব প্রিয় গল্প। আগেও বিভিন্ন সময়ে এই গল্পটির কথা উল্লেখ করেছি। গল্পটির নাম আন্ডার দি বেনিয়ান ট্রি। সেই গল্পে এক গল্পকথক চরিত্র ছিল। কিন্তু একদিন সে আর তার মধ্যে কোনো গল্প খুঁজে পায় না। সে ফুরিয়ে যায়। যদি আমারো এমন কখনো হয়, তো আমিও সেই গল্প কথকের মতই চুপ হয়ে যাবো। কুস্তি করে, ছন্দের জোড়া তালি দিয়ে কবিতা লিখার কসরৎ করবো না।   

তবে, এখনো আমার কাছে অগ্রন্থিত অনেক কবিতা আছে। এগুলো দিয়ে অনায়াসেই কয়েক ফর্মার কবিতার বই হয়ে যাবে।

এছাড়া আমি তো শুধু কবিতাই লিখি না। প্রচুর গদ্য লিখি। বিভিন্ন রকমের গদ্য। গল্প লিখি। কলাম লিখি। প্রবন্ধ লিখি। আশা করি, কবিতার পাশাপাশি এসব লেখাও চলবে। কবিতা যদি কখনো নরসুন্দার মতন মরে যায়ও তখনো আমার গল্প, গদ্য, কলাম ও প্রবন্ধ লেখা চলবে, আশা করি।  

তন্ময় আলমগীর : পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

আফরোজা সোমা : জীবন একটা অদ্ভুত অমূল্য উপহার। রোজ ভোরের সূর্যের মায়াবী কিরণের দিকে তাকিয়ে আমার খুব আনন্দ হয়; তুমুল বাঁচতে ইচ্ছে করে। ভোরের আলোর দিকে তাকালে আমার এই জন্ম দিয়ে অপরের জন্য কল্যাণকর কিছু করার আন্তরিক ইচ্ছে কাজ করে।

আপনারাও বাঁচুন। প্রাণ ভরে বাঁচুন। জীবনটাকে প্রতিযোগিতা বা রেসের ঘোড়া হিসেবে নেবেন না। কারো কাছে আপনার কিচ্ছু প্রমাণ করার নেই। অন্যের চোখে আপনি নিজের জীবনটাকে দেখবেন না। আপনি কারো চেয়ে ছোটোও নন, বড়ও নন। আপনি একটি মায়াবী প্রস্রবণ। মা প্রকৃতি পরম মমতা দিয়ে আপনাকে সৃজন করেছেন। অন্যের ক্ষতি না করে, অপরের অমঙ্গল না করে বাঁচার আনন্দে বাঁচুন; তুমুলভাবে বাঁচুন।   

তন্ময় আলমগীর : আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আফরোজা সোমা : আমার সাক্ষাৎকার নেবার জন্য এবং পাঠকের সাথে আমার সংযোগের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আপনাকে এবং উইমেন্স কর্নারকে অনেক ধন্যবাদ।

 

Leave a Comment