বিবি রাসেল! আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশী ফ্যাশন মডেল

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ৭, ২০১৯

বিবি রাসেল একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশী ফ্যাশন মডেল এবং নকশাকার। অনেকের কাছে "বিবি আপা" নামে পরিচিত। বিশ্বখ্যাত এ মডেল ও ফ্যাশন ডিজাইনারের বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজ বিবি প্রোডাকশনের প্রতিষ্ঠাতা বিবি রাসেল বাংলাদেশের পোশাককে বিশ্ব দরবারে চিনিয়েছেন অনেকটা একাই। তিনি তার পরিবারের ৫ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। পিতা পরলোকগত মুখলেসুর রহমান এবং মাতা শামসুন্নাহার রহমান। বিবি রাসেলের মাতা পিতা দুজনেই সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষ ছিলেন।

ঢাকায় বড় হওয়া এ উদ্যোক্তা কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষে লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশনে পড়াশোনা করতে যান। এরপর বিবি রাসেল সেখানে ফ্যাশন মডেল হিসেবে বিভিন্ন নামি-দামি প্রতিষ্ঠান এবং ডিজাইনারদের সঙ্গে কাজ করেন। প্রথমে যাত্রা শুরু করেন ছবির মডেল হিসেবে। এরপর বিভিন্ন প্রখ্যাত মডেলদের সাথে তিনি র‍্যাম্প মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

১৯৯৪ সালে এ উদ্যোক্তা দেশে ফিরে বিবি প্রোডাকশনের সূচনা করেন। এটি মূলত দেশের সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে পোশাক তৈরি করে। প্রথমে তিনি ‘উন্নয়নের জন্য ফ্যাশন’ এ স্লোগানে তার প্রতিষ্ঠান শুরু করলেও পরে ‘কারুশিল্পী এবং তাদের স্বপ্নকে বাঁচান’স্লোগান নিয়ে এগোতে থাকেন। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার বিবি রাসেলের ফ্যাশন চিন্তায় উজ্জ্বল এবং রঙিন বর্ণের সমাহার লক্ষণীয়। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের গ্রাম্য এলাকায় ৩৫,০০০ তাঁতীকে চাকরি দিয়েছে।

ইউনেসকোর সহায়তায় ১৯৯৬ সালে ‘উইভারস অব বাংলাদেশ’ নামে বিবি প্রডাকশন প্রথম ফ্যাশন শো করে প্যারিসে। বিবির কাজের একমাত্র লক্ষ্য, ফ্যাশনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন। হাতে বোনা খাদি, মসলিন, জামদানি ও উন্নতমানের সুতি কাপড়ের ব্যবহারে তাঁর ডিজাইন ও ফ্যাশন সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে অন্য রকম মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্বের আটটি দেশে আটটি দোকান খোলা হচ্ছে বিবি রাসেলের নামে, যেখানে পাওয়া যায় তাঁর ডিজাইন করা দেশি তাঁতের পোশাক। এসবের বাইরেও কিছু কাজ আছে বিবির। গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্রের পোশাক পরিকল্পনা করছেন তিনি। এর আগে তানভীর মোকাম্মেলের ‘লালন’ ছবির পোশাক পরিকল্পনাও করেছিলেন। আরণ্যক নাট্যদলের ‘এবং বিদ্যাসাগর’ মঞ্চ নাটকের পোশাক পরিকল্পকও তিনি।

অনেক পুরস্কার আর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বিবি রাসেল। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি “দ্য ক্রস অফ অফিসার অফ দ্য অর্ডার অফ কুইন ইসাবেলা” (The Cross of Officer of the Order of Queen Isabela) পুরস্কারে ভূষিত হোন তিনি। বর্তমানে বিবি গবেষণা করে বের করার চেষ্টা করছেন বিস্কুটের খালি প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট কিভাবে কাজে লাগানো যায়। চিপস খেয়ে প্যাকেটটি রাস্তায় ফেলে দেয় অনেকেই। কোমল পানীয় খেয়ে ক্যানটি ড্রেনের মধ্যে ছুড়ে ফেলে। বিবি রাসেল পরিত্যক্ত এ জিনিসগুলো পুনর্ব্যবহারের জন্য নতুনভাবে তৈরি করতে চান। রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে কাপড়ের সঙ্গেও সামঞ্জস্য রেখে স্যান্ডেল, ব্যাগ, পার্স, গয়না ও ডায়েরি বানানোর পরিকল্পনা নিচ্ছেন তিনি। বিবি রাসেলকে নিয়ে গর্বিত আমরা, গর্বিত বাংলাদেশ।

Leave a Comment