ইন্দিরা গান্ধী- ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ১১, ২০১৯

তার পুরো নাম ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী। তিনি ভারতের প্রথম ও আজ পর্যন্ত একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী। প্রভাবশালী নেহেরু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করায়, তিনি এক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেন। তার পিতামহ মতিলাল নেহেরু একজন প্রথম সারির কংগ্রেস নেতা ছিলেন। তার পিতা জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তার ছেলে রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

উনার জন্ম এলাহবাদে। নেহেরু পরিবার সবসময়ই জড়িত ছিল রাজনীতিতে৷ যার কারণে ছোটবেলা থেকেই বাপ-দাদার রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়েন ইন্দিরা গান্ধী৷ ভারতবর্ষ তখনো ব্রিটিশদের দখলে৷ ব্রিটিশদের ভারত দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি৷ ইন্দিরার বয়স যখন মাত্র চার তখনই তাঁর বাবা এবং তাঁর দাদা কারাবন্দি হন৷ কারণ তারা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী৷ ইন্দিরা গুটিয়ে যান নিজের মধ্যে৷ একা থাকতেন, বেশির ভাগ সময়ই একা কাটাতেন৷ বলা প্রয়োজন, মহাত্মা গান্ধী ইন্দিরার রাজনৈতিক জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিলেন৷

১৯৩৬ সালে ইন্দিরার মা কমলা নেহেরু পরলোক গমন করেন৷ ইন্দিরা হয়ে পড়েন ভীষণভাবে একা৷ ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার সময়ই ইন্দিরার পরিচয় হয় ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে৷ ১৯৩৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন৷ ১৯৪১ সালে অক্সফোর্ড থেকে ফিরে এসে ইন্দিরা গান্ধী পিতার সাথে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি বিয়ে করেন সাংবাদিক ফিরোজ গান্ধীকে৷ বিয়ের কিছুদিন পরই তাঁরা কারাবন্দী হন৷ এলাহবাদের নৈনি কারাগারে তাঁরা ৮ মাস বন্দী থাকেন৷ ইন্দিরা গান্ধী দুটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। তারা হলেন সঞ্জয় এবং রাজীব৷

১৯৫০ সাল থেকে অপেশাগত ভাবে জওহরলাল নেহেরুর অফিস সহকারীর কাজ করে আসছিলেন। ১৯৬৪ সালের জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পর ভারতের রাষ্ট্রপতি তাকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। তখন ইন্দিরা লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মন্ত্রীসভায় তথ্য ও প্রচার মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ব্রিটিশ শাসন থেকে৷ সে বছরই ইন্দিরার বাবা জওহরলাল নেহেরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন৷ তখন থেকেই ইন্দিরা প্রায় ছায়ার মত বাবার পাশে পাশে থাকতেন৷

১৯৬৬ সালে প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বচিত হন৷ ১৯৭১ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে ইন্দিরা গান্ধী দ্বিতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷ একটানা ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইন্দিরা গান্ধী৷ এই পর্যায়ে রাজন্য ভাতা বিলোপ, ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের মত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচী রূপায়ন করেন৷ ১৯৭১এ তৃৃতীয় ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে ভারত তার বলিষ্ঠ নেতৃৃত্বে জয়লাভ করে৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে৷ ১৯৭৫ সালে তিনি দেশে শান্তি এবং শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ জরুরি আইন জারী করেন৷ এ জন্য সমালোচিত হন ইন্দিরা গান্ধী৷ এরপর ১৯৮০ সালে চতুর্থবারের মত নির্বাচনে বিজয়ী হন ইন্দিরা গান্ধী, হন প্রধান মন্ত্রী৷

১৯৮৪ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধীর আদেশে শিখদের পবিত্র ধর্মাশালা স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনা হানা দেয় ( operation Blue star )। তার খেসারত ইন্দিরা গান্ধী দেন সে বছরই ৩১শে অক্টোবর৷ তাঁর নিজের দেহরক্ষীরাই তাঁর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়৷ সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ বছর ভারত শাসন করেছেন ইন্দিরা গান্ধী৷ তুখোর রাজনীতিবিদ ইন্দিরা গান্ধী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন ভারতে৷ ২৫ বছর পর ভারত তথা বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গণ স্মরণ করছে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে৷ ইন্দিরা গান্ধীর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর কোন নারী এখনো আসেননি।

Leave a Comment