খনা কি বা কে বা এর পেছনের ইতিহাস সেটা কি সবাই জানি?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ১১, ২০১৯

আমরা সবাই খনার বচনের কথা জানি, কিন্তু এই খনা কি বা কে বা এর পেছনের ইতিহাস কি সেটা কি সবাই জানি?

খনা ছিলেন জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারী। উনি তার বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত ছিলেন। কথায় আছে তার আসল নাম লীলাবতী। তার নাম কীভাবে খনা হলো এটিও ভাবার বিষয়। প্রচলিত ধারণা অনুসারে লীলাবতীর জন্ম হয়েছিল এক শুভক্ষণে। এজন্য তিনি ক্ষণা। এখান থেকেই পরিবর্তিত হয়ে খনা নামটি এসেছে। আরেকটি ধারণানুসারে খনা নামের উৎপত্তি ভিন্ন। উড়িয়া ভাষায় খোনা মানে হলো বোবা। লীলাবতীর জিব কেটে দেবার ফলে তিনি বোবা হয়ে যান বলে সেখান থেকে তার নাম খোনা বা খনা হয়ে থাকতে পারে।
মূলতঃ খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই 'খনার বচন' নামে বহুল পরিচিত।

ধারণা মতে ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাসাত মহকুমার দেউলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম ছিল অনাচার্য। অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে, তিনি ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা। কোনোটারই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ সভার প্রখ্যাত জোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহির ছিলেন খনার স্বামী। কথিত আছে বরাহ তার পুত্রের জন্ম কোষ্ঠি গণনা করে পুত্রের আয়ূ এক বছর দেখতে পেয়ে শিশু পুত্র মিহিরকে একটি পাত্রে করে সমুদ্র জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌছলে সিংহলরাজ শিশুটিকে লালন পালন করেন এবং পরে কন্যা খনার সাথে বিয়ে দেন।

খনা এবং মিহির দু'জনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। মিহির একসময় বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পড়লে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি কৃষি, আবহাওয়া, খাদ্য সম্বন্ধে বেশ কিছু বচন প্রদান করেছিলেন। সেগুলো মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছিল। পরবর্তীতে কৃষি নিয়ে, আবহাওয়া নিয়ে, খাদ্য নিয়ে অন্যান্য যারাই কোনো শ্লোক বা বচন প্রদান করেছে সেগুলো খনার নামে পরিচিতি পেয়েছে।

খনার দেওয়া বচনে সে খুব তাড়াতাড়ি পরিচিত হয়ে উঠে। একারণে সভার পদ হারানোর সম্ভাবনা দেখেন শ্বশুর। একপর্যায়ে সম্ভবত খনার সাথে তার তর্কও হয়। একজন নারীর তর্কে না পেরে এবং রাজ সভাসদের পদ হারানোর ভয়ে পুত্রকে আদেশ দেন তার জিহ্বা কেটে নিতে যেন আর কোনোদিন কথা বলতে না পারে। স্বামী ও শ্বশুর মিলে তার জিহ্বা কেটে দিলে সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাতেই খনা মৃত্যুবরণ করেন। কথিত আছে, জিহ্বা কেটে ফেলার আগে তিনি ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন তার কিছু কথা বলার আছে, কারণ জিহ্বা কেটে ফেললে সেগুলো আর বলা সম্ভব হবে না। তাকে অনুমতি দেয়া হলো। একজন সে কথাগুলো লিখে রাখার চেষ্টা করলো কিংবা শ্রুতিতে ধরে রাখার চেষ্টা করলো। সেগুলোই পরবর্তীতে খনার বচন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে

Leave a Comment