মহান সেবাব্রতে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল

  • কামরুন নাহার স্মৃতি
  • মার্চ ১২, ২০১৯

সেবাব্রতী মহিলাদের আদর্শ ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ইতালির ফ্লোরেন্সে তাঁর জন্ম। তিনি তাঁর বাবা মায়ের সাথে লন্ডনে বাস করতেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে গরিবদের উপর তাঁর সহানুভূতি জন্মাতে থাকে। প্রায়ই তিনি দরিদ্রদের কুটিরে গিয়ে তাদের দেখাশোনা করতেন, তাদের রোগ হলে শয্যার ধারে রাত জেগে সেবা করতেন। কিছুকাল পরে জার্মানির কাইজরওয়ের্থ-এ একটি নার্সিং শিক্ষাকেন্দ্রে তিনি নার্সিং শিক্ষা লাভ করেন। লন্ডনে ফিরে তিনি একটি ছোট হাসপাতাল স্থাপন করেন। এদিকে ১৮৫৩খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ার দক্ষিণাংশে ক্রিমিয়াতে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্ক, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও সার্দিনিয়ার যুদ্ধ বাধে, এই যুদ্ধে আহত সৈন্যদের জন্য হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা সবাই বুঝতে পারে। কিন্তু কে নেবে এই বিরাট কাজের ভার? প্রশ্নটা ক্রমেই সবার মাঝে আলোড়ন তুলে দিল। কর্তৃপক্ষ কাগজে বিজ্ঞাপন দেন। অনেকেই দরখাস্ত করেছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলকেই কর্তৃপক্ষ মনোনীত করলেন।

এক সপ্তাহের মধ্যেই নাইটিংগেল ৩৮জন শিক্ষিতা নার্সকে নিয়ে ক্রিমিয়ার অন্তর্গত স্কুটারির হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। স্কুটারির হাসপাতালে গিয়ে তিনি দেখলেন শত শত রোগী চরম অব্যবস্থার জন্যে কষ্ট পাচ্ছেন। তাঁদের পোষাক নোংরা, খাদ্য জঘন্য, ওষুধপত্রের অভাব। দশ দিনের মধ্যে নাইটিংগেল সেখানে খোবিখানা খুললেন, ভালো রাঁধুনি যোগাড় করে রোগীদের পথ্য তৈরির ভার নিলেন। তিনি হাসপাতালটিকে আনন্দনিকেতন করে তুললেন। অতি যত্ন করে মায়ের মতো স্নেহে তিনি রোগীদের সেবা যত্ন করতেন। রাত আটটায় যখন অন্য সব নার্স কাজের শেষে বিশ্রাম করতে যেতেন তখন তিনু রোগীদের বিছানার ধারে ধারে দীপ হাতে নিয়ে বেড়াতেন। রোগীদের কাছে তিনি ছিলেন স্বর্গের দেবীর মতো  তারা তাঁর নাম দিয়েছিলেন 'দ্বীপহস্তা মহিলা'।

অবশেষে ১৮৫৬ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শেষ হল। ইংল্যান্ডে ফিরে আসার কিছুদিন পর নাইটিংগেল অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হাসপাতালের কাজে তাঁকে দারুন পরিশ্রম করতে হয়েছিল। আরোগ্য লাভের পর তিনি অনেককাল নার্সের কাজ করে বহু হাসপাতালের নিয়মকানুন বেঁধে দেন। তাঁরই উপদেশে নতুন নতুন হাসপাতাল গড়ে উঠতে থাকে এবং তাঁর আদর্শে আজ বহু মহিলা এই মহান সেবাব্রতে আত্ননিয়োগ করে জগতের কল্যানে রত আছেন। এইরকম এক মহিয়সী  হলেন মাদার টেরেসা _ যাঁর ভারতব্যাপী অসামান্য সেবাকর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ 'নোবেল পুরস্কার' এ তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছে। 

 

Leave a Comment