রানী প্রথম এলিজাবেথ

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
  • মার্চ ২৪, ২০১৯

রানী প্রথম এলিজাবেথ ১৭ নভেম্বর ১৫৫৮ থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাণী, ফ্রান্সের রাণী (পদাধিকার অনুসারে) ও আয়ারল্যান্ডের রাণী ছিলেন। ১৫৩৩ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের গ্রিনউইচে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। টিউডর রাজবংশের পঞ্চম ও সর্বশেষ রানী ছিলেন তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন রাজা অষ্টম হেনরি। এলিজাবেথের বয়স যখন মাত্র আড়াই বছর তখন তাঁর মা অ্যান বোলিনকে শিরচ্ছেদ করে হত্যা করা হয় এবং এলিজাবেথকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে ভাই ষষ্ঠ এডওয়ার্ড সিংহাসনের ভার অর্পণ করেন লেডি জেন গ্রে-এর উপর। ১৫৫৮ সালের ১৭ নভেম্বর এলিজাবেথ সেবান রানী প্রথম মেরির স্থলাভিষিক্ত হন।

প্রোটেস্ট্যান্ট বিদ্রোহীদের সহযোগিতা দানের অভিযোগে এলিজাবেথ ক্যাথলিক অনুসারী মেরির শাসনকালে এক বছর অন্তরীণ ছিলেন। পরবর্তীকালে রানী হিসেবে এলিজাবেথের প্রথম পদক্ষেপ ছিল ইংলিশ প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ প্রতিষ্ঠা করা, যার সর্বোচ্চ গভর্নর ছিলেন তিনি নিজেই। এলিজাবেথ অবিবাহিতা ছিলেন। এজন্য বিতর্কও তাঁর পিছু নিয়েছিল। রানী ছিলেন অবিবাহিত। তাই ইতিহাসের পাতায় চিরকুমারী রানী হিসেবেই বেশি পরিচিতি পান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই কেন তিনি অবিবাহিত ছিলেন এই নিয়ে হয়েছে বিস্তর আলোচনা। যখন স্বামীর ঘর-সংসার করার কথা, যখন ছেলেমেয়ের স্নেহময়ী মা হওয়ার কথা তখন তার রাজ্যাভিষেক ঘটে। দিনটি ছিল ১৫৫৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। মাত্র ২৬ বছর বয়সে এলিজাবেথের অভিষেক হয়। রানী হয়ে রাজ্য পরিচালনা শুরু করার পরই একটি প্রশ্ন সবার সামনে এসে দাঁড়ায় আর তা হলো- কে হবে রানীর স্বামী? টিউডর রাজবংশের শেষ উত্তরাধিকারিণী রাজত্বের প্রথম দিকেই এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বিয়ে করা। কারণ তার বিয়ের মধ্য দিয়েই উত্তরাধিকার নির্বাচিত করা যেত সহজেই। যাতে তার মৃত্যুর পর রাজসিংহাসন নিয়ে গৃহযুদ্ধের সূচনা না হয়।

স্বাভাবিকভাবেই সেই সময়ে ইউরোপের সবচেয়ে কাঙ্খিত পাত্রী ছিলেন রানী প্রথম এলিজাবেথ। গোটা ইউরোপের বিভিন্ন রাজপরিবার থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা রানীকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন এলিজাবেথের সৎ বোন রানী মেরির স্বামী স্পেনের রাজা ফিলিপ, তৎকালীন সুইডেনের প্রিন্স এরিক, রোমান হলি এমপেরোর ফার্ডিনান্দের ছেলে আর্চডিউক চার্লস এবং এমন আরও অনেকেই। এদের মধ্যে একমাত্র স্পেনের রাজা ফিলিপকে এলিজাবেথ সরাসরি ‘না’ করেন। সিংহাসনে আসীন রানীর বিয়ে অনেকটাই জটিল একটা বিষয় তা ইতিহাস উপলব্ধি করে। কারণ ভুল কাউকে বিয়ে করা মানে পুরো রাজ্যের ওপর তার প্রভাব পড়া। তাই এই বিষয়ে অনেক সাবধানী হওয়া জরুরি ছিল। আবার রাজনৈতিক কারণগুলোও এ ক্ষেত্রে খুব স্পষ্ট। যেমন ভুলের কারণে রানীর অবস্থা তার সৎ বোন রানী মেরির মতো হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।

এলিজাবেথকে এমন কাউকে স্বামী হিসেবে বেছে নিতে হবে যে ইউরোপের কোনো ক্ষমতাশালী রাজা হবে না, কিন্তু পদমর্যাদা খুব ভালো হবে এবং শুধু রানীর স্বামী হিসেবেই থাকবে। সব কিছু মিলিয়ে রানীর মন্ত্রীরা প্রাথমিকভাবে সুইডেনের প্রিন্স এরিককে রানীর স্বামী হিসেবে ভেবেছিলেন। কারণ, এরিক ছিলেন ইংল্যান্ডের জনগণের মাঝে তুমুল জনপ্রিয়। মৃত্যুর ২০ বছর পরও সোনালি যুগের শাসক হিসেবে সমাদৃত ছিলেন তিনি। তাঁর শাসনকাল "এলিজাবেথান এরা" বা এলিজাবেথীয় যুগ নামে পরিচিত। শেকসপিয়রের নাটকে এলিজাবেথান এরা ঘুরেফিরে এসেছে। ১৬০৩ সালের ২৪ মার্চ রিচমন্ডে পরলোক গমন করেন তিনি। রানীর মৃত্যু নিয়ে অনেক রকম কথা প্রচলিত আছে। যেমন অনেকে বলেন, রানীর প্রসাধনীর সঙ্গে বিষ মিশানো ছিল যা রক্তের সঙ্গে মিশলে মৃত্যুবরণ করেন রানী। আবার অনেকে বলেন, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

টি/আ

Leave a Comment