শের ওয়াং

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
  • এপ্রিল ১৩, ২০১৯

শের ওয়াং টেক বিশ্বে সেরা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। তাইওয়ানের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটার নির্মাতা হাইটেক কম্পিউটার (এইচটিযসি) করপোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তিনি। শের ওয়াং- এর জন্ম ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮। এইচটিসিতে একাধারে সহপ্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে কাজ করছেন শের ওয়াং। জনপ্রিয় এইচটিসি ব্র্যান্ডকে বিশ্ব বাজার প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে আনতে ওয়াং একসঙ্গে তিনটি দায়িত্বে কাজ করছেন। তাইওয়ানের তাইপে শহরে জন্ম নেয়া ওয়াং ২০০৭ সাল থেকেই প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এইচটিসি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তির মঞ্চে সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে ওয়াং নিজের যোগ্যতা আর দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। বয়স ৫৮ পেরিয়ে গেলেও পরিশ্রম করতে তার কোনো অনীহার ছাপ দেখেন না দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।

ওয়াংয়ের শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় ক্যালিফোর্নিয়ার দ্য কলেজ প্রিপারেটরি স্কুল ইন অকল্যান্ডে। এরপরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ওয়াং ১৯৮২ সালে তাইওয়ানের কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটারে যোগ দিয়ে নিজের পেশাজীবনের সূচনা করেন। পরে ১৯৮৭ সালে মাদারবোর্ডের চিপ ও সার্কিট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিআইএ টেকনোলজিস প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার ব্যাপারেও বেশ সুনাম আছে শের ওয়াংয়ের। তাইওয়ানে রাজনীতির সঙ্গেও সংশ্লিষ্টতা রেখেছেন তিনি। তাঁর স্বামী ওয়েন শি শেন বর্তমানে ভিআইএ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। এই দম্পতির দুই সন্তান। শের ওয়াং তাঁর কাজের নানা ধরনের স্বীকৃতি পেয়েছেন। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস ২০১১ সালে শের ওয়াং এবং তাঁর স্বামীকে যৌথভাবে তাইওয়ানের সবচেয়ে ধনী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১২ সালে ফোর্বস-এর করা ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ৫৬তম হন শের ওয়াং। এ ছাড়া গত বছরের তালিকায় তিনি আছেন ৫৪তম স্থানে

১৯৯৭ সালে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এইচটিসি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। একেবারে শুরু থেকেই চৌকস আর দক্ষতার সঙ্গে এইচটিসি ব্র্যান্ড পণ্যের নানা উন্নয়ন কার্যক্রমে সরাসরি তদারকি করে আসছেন ওয়াং। ব্যবসার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার ব্যাপারে বেশ সুনাম আছে তার। তাইওয়ানে রাজনীতির সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত আছেন। বর্তমানে তার স্বামী ওয়েন শি শেন ‘ভিআইএ’ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কাজ করছেন। ব্যক্তিজীবনে এই সুখী দম্পতির দুটি সন্তান আছে। ওয়াং তার কাজের বহু ধরনের স্বীকৃতি পেয়েছেন। বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০১১ সালে ওয়াং এবং তার স্বামীকে যৌথভাবে তাইওয়ানের সবচেয়ে ধনী হিসেবে উপস্থাপন করে। ২০১২ সাল থেকে ফোর্বস-এর করা ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকাতেও ধারাবাহিকভাবে অবস্থান পেয়ে আসছেন। নিত্যনতুন লক্ষ্য নিয়ে এইচটিসিকে প্রযুক্তি দুনিয়ায় শীর্ষে নিয়ে যেতে চান ওয়াং। ফোর্বসের দেওয়া তথ্যমতে ২০১৫ সালে কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার।

স্মার্টফোনের বাজারে আধিপত্য ও মুনাফা বাড়াতে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে এসেছে এইচটিসি। এ প্রসঙ্গে ওয়াং বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু এইচটিসি অনেক দিন শুধু দামি স্মার্টফোন তৈরিতেই আগ্রহী ছিল। এই কৌশলগত ভুলের কারণে বহু লোকসান গুণেছে এইচটিসি। এ ক্ষতি সামলে নিতেই কম দামি স্মার্টফোন তৈরিতে এইচটিসি এখন জোরালোভাবে কাজ করছে। স্মার্ট ব্যবসার দুনিয়ার এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে উদাহরণ তৈরি করেছেন ওয়াং।

এখন স্মার্ট গ্যাজেট হিসেবে স্মার্ট হাতঘড়ি তারুণ্যের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে আছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই স্মার্ট হাতঘড়ি বাজারে নিয়ে আনতে কাজ করছে। এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে এইচটিসি। ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এইচটিসি চেয়ারম্যান ওয়াং বলেন, এইচটিসি পরিধানযোগ্য ডিভাইস উৎপাদন ও মানোন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাবে। স্মার্ট দুনিয়ার উন্নয়নে এখন সব সময়ই নিত্যনতুন চাহিদার আর্বিভাব হয়ে থাকে। ইন্টারনেটের ব্যাপকতা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা আজ অন্ধকারে থাকার সামিল। তাই প্রযুক্তি দুনিয়ায় মানোন্নয়নের প্রতিযোগিতাও এখন কঠিন থেকে চরম পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। তাই প্রতিমুহূর্তের প্রতিযোগিতার চাপ সামলে উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে এখন সফল নারী ওয়াং। বিশ্ব উন্নয়নের সবচেয়ে কঠিন সময়ে নিজের দূরদর্শিতা আর দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে কোনো সহজ কাজ না তা ভালোভাবেই জানতেন ওয়াং। আর এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে নিজেকে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানকে দারুণভাবে সমুজ্জ্বল করেছেন ওয়াং। কঠিন আর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার সামর্থ্যকে নারীদের জন্য বাড়তি যোগ্যতা বলে মনে করেন ওয়াং। তাই ব্যবসা পরিসরে আরও বেশি নারী উদ্যোক্তাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ব্যবসায় নারীরাও সফল এমন আস্থার জন্য যত বেশি উদাহরণ সামনে আনা যাবে বৈশ্বিক উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ ততই বাড়বে বলে অভিমত প্রকাশ করেন ওয়াং।

টি/আ

Leave a Comment