হার না মানা লৌহমানবী মুনিবা মাজারি

  • তানজিলা আক্তার 
  • জানুয়ারি ১৭, ২০১৮

মুনিবা মাজারি একজন পাকিস্তানী নাগরিক। তিনি একাধারে একজন মানবাধিকার কর্মী, চিত্রশিল্পী, টেলিভিশন উপস্থাপক, মোটিভেশনাল স্পিকার এবং গায়িকা। ১৯৮৭সালে ৩রা মার্চ জন্মগ্রহণ করা এই নারী বাবা-মায়ের কথা মানতে মাত্র ১৮বছর বয়সে বিয়ে করে নেন। যদিও তিনি বিয়ে নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। ২০০৭সালে বিয়ের দু'বছর পর যখন তিনি এবং তার স্বামী গাড়িতে করে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তখন গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়। গাড়ি বড় একটি খাদে পরে যাওয়ার আগেই তার স্বামী লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু মুনিবা বের হতে পারেনি। গাড়িটি খাদে পরার পর মুনিবা খেয়াল করে যে তার শরীরে কোনো অংশ কাজ করছে না। 

গাড়ি এক্সিডেন্টের পর মুনিবাকে প্রায় অনেকদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো। মারাত্মকভাবে মুনিবার হাত, পা, মেরুদন্ড, কলার ফেটে যায়।মুনিবা একজন চিত্রশিল্পী হতে চেয়েছিলো কিন্তু তখন ডাক্তার এসে জানায় যে তিনি আর আঁকতে পারবেনা। কারন তার হাত মারাত্মকভাবে ভেঙেছে। পরদিন ডাক্তার এসে জানায় মুনিবা আর কোনোদিনই হাঁটতে পারবেনা। মুনিবা এ পর্যন্ত মেনে নেয়। কিন্তু তারপরের দিন ডাক্তার এসে জানায় তার পিঠের মেরুদণ্ড যেভাবে ভেঙেছপ তাতে করে তিনি আর কোনোদিনও মা হতে পারবেননা। এই কথা শুনে মুনিবা প্রচন্ড পরিমাণ ভেঙে পরে নিজেকে প্রশ্ন করেন তবে কি কারনে বেঁচে আছেন তিনি? 

মুনিবা

হাসপাতালে সাদা দেয়ালে মনে মনে রঙ মেখে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়া মুনিবা একদিন তার ভাইকে বলে কিছু ছোট ক্যানভাস আর রঙ এনে দিতে। তার ভাই সেগুলো এনে দিলে তিনি প্রথমেই আঁকে একটি ডেডবডি। সবাই তা দেখে বলে অনেক সুন্দর, অনেক রঙ মাখানো একটি সুন্দর আর্ট। কিন্তু কেউ সেই হাসপাতালে ডেডবডির কষ্ট দেখেনা। একসময় মুনিবা বুঝে এই পৃথিবীতে কেউ কারো কষ্ট বুঝেনা। বাঁচতে হবে নিজের জন্যে, নিজেকে তৈরি করতে হবে নিজের জন্যেই। সকল ভয়কে জয় করতে হবে। তিনি তার সকল ভয় লিখে ফেলেন ডায়েরীতে। সকল ভয় জয় করার চেষ্টায় নামেন মুনিবা। তার সবচেয়ে বড় ভয় ছিলো ডিভোর্স। যখন তিনি বাসায় চলে আসে, তিনি জানতে পারে তার স্বামী বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি তখন তার স্বামীকে শুভকামনা জানিয়ে মেসেজ দেয়। একই সাথে তিনি সব ভয় জয় করে নেন।

মুনিবা কোনোদিন মা হতে পারবেনা, এ বিষয়টা তাকে পুরোপুরিভাবে ভেঙে দেয়। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে ভাবে পৃথিবীতে অনেক শিশু অনাথ আশ্রমে বড় হয়, অনেক শিশু পথেঘাটে থাকে। তিনি অনাথ আশ্রমে নিজের নাম দিয়ে রাখে। দু'বছর পর তিনি একটি কল পায় একটি বাচ্চাকে নেয়ার জন্যে। তিনি বলেন ঠিক তখন তার প্রসব ব্যাথার মতো অনুভূতি হচ্ছিলো। তিনি ঐ বাচ্চাটিকে নিজের ছেলে করে নেয়। মুনিবা মাজারিকে পাকিস্তানের লৌহমানবী বলা হয়। তিনি ২০১১সালে বিবিসির ১০০সর্বাধিক অনুপ্রেরণামূলক নারীর মধ্যে নিজের স্থান করে নেন। ২০১৫সালে ফোর্বসের "আন্ডার থার্টি ইম্পেক্ট চ্যালেঞ্জ" বিভাগে নাম উঠে মুনিবা মাজারির। তিনি পাকিস্তানের "ইউএন ওমেন পাকিস্তান" এর ন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেন।

মুনিবা বলেন যে হুইলচেয়ারে বসা মানুষেরা ভাবে এই পৃথিবীর যোগ্য লোকেরা তাদের মেনে নিবেনা। পৃথিবীকে তখন দেখিয়ে দিতে হবে যে সবাই পারে। কেউ ব্যর্থ নয়। নিজে যখন সঠিক পথ বেছে নিবো, সবাই তা অনুসরণ করবে। বর্তমান সমাজ নিজের প্লান মতো কিছু নাহলেই হতাশায় ভুগে, কিন্তু সবকিছুর স্বাদ নিতে হয়। জীবন একটা পরীক্ষা, এটাকে আলিঙ্গন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বলে মুনিবা বলেন। মুনিবা মাজারিকে পাকিস্তানের লৌহমানবী বলা হয়। তিনি ২০১১সালে বিবিসির ১০০সর্বাধিক অনুপ্রেরণামূলক নারীর মধ্যে নিজের স্থান করে নেন। ২০১৫সালে ফোর্বসের "আন্ডার থার্টি ইম্পেক্ট চ্যালেঞ্জ" বিভাগে নাম উঠে মুনিবা মাজারির। তিনি পাকিস্তানের "ইউএন ওমেন পাকিস্তান" এর ন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেন।

 

Leave a Comment