৩৭তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার, নারীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

  • ওমেন্স কর্নার ডেস্ক
  • নভেম্বর ৬, ২০২০

৩৭তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মনিষা কর্মকারের সব বাধা জয়ের গল্পটি বাংলাদেশের সকল নারীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। সংসার, চাকরি, সামাজিক সংগঠন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা পেরিয়ে মনিষার 'নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট' হয়ে ওঠার গল্প।

স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ সংগীতশিল্পী অজয় কর্মকারের দ্বিতীয় কন্যা মনিষা কর্মকার৷ ছোটবেলা থেকেই বাবার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পদচারণার সুবাদে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা ছিল তার। সে সময়ে ছোট্ট মনিষা বাবাকে প্রশ্ন করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা পায়। মনিষার বাবা মনিষাকে বুঝিয়েছেন, ইউএনও-ম্যাজিস্ট্রেটের অনেক ক্ষমতা। সমাজে তাদের স্থান অনেক উপরে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে কতদিন পরপর চেকআপ করবেন?

মফস্বলে বেড়ে ওঠার কারণে নানামুখী সমস্যার অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়েছে মনিষাকে। মাধ্যমিকের অর্ধেকটা সময় বাবার হাত ধরে স্কুকে যেতে পারলেও কলেজ জীবনের পর্ব ছিল আরও নাজুক। কলেজের আঙিনায় গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ মনিষার একদমই হয়নি। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও মনিষার ক্ষেত্রে কলেজ জীবনের বাস্তবতা এমনই চজিল। শুধুমাত্র বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের পর্ব শেষ করতে হয়েছে তাকে।

উচ্চমাধ্যমিকের পর্ব শেষ করে বন্ধুরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং-এ ব্যস্ত সময় পার করছে, সেই সময়ে মনিষা কর্মকারের ব্যস্ততা ছিল বিয়ের পিঁড়িতে বসা নিয়ে। সদ্য এইচএসসি পাস করে বিয়ের পিঁড়িতে বসায় মনিষার ইচ্ছা না থাকলেও এড়ানো যায়নি পারিবারিক পদক্ষেপ কিংবা সেই সময়ের সার্বিক সামাজিক পরিস্থিতির কারণে। সংসার সামাল দিতে গিয়ে মনিষা কর্মকারের য়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিং করাটা আর হয়ে ওঠে নি। সংসারধর্মে ব্রতী হলেও পড়াশোনাটা বন্ধ করেনি মনিষা। সারাদিনের সাংসারিক কাজকর্ম সেরে সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, মনিষার তখন পড়াশোনার উপযুক্ত সময় হতো। রাত দুই-তিনটা পর্যন্ত পড়াশোনা করে পরবর্তী দিনের সংসার সামলানোর প্রয়োজনে ঘুমাতে হয়েছে তাকে। প্রতিদিনের ধারাবাহিক নিয়মটা এমনই ছিল, গতানুগতিক। কখনো গভীর রাতে দৈনিক তিন ঘন্টা, কখনো দুই ঘন্টা আবার কোনদিন পড়াশোনাবিহীনই কাটাতে হয়েছে। সাংসারিক বাধা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে বাধা হয়ে দাঁড়ালেও অসম্ভব হয়ে ধরা দেয়নি মনিষার জীবনে। যার ফলস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগে চান্স হয় তার।

আরো পড়ুনঃ স্বামী ও স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ কেমন হওয়া উচিত ?

বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বন্ধুদের অনেকেরই প্রশাসন এবং পুলিশ ক্যাডারে চাকরি হয়ে যায়। এটা দেখে মনিষার আগ্রহ জন্মে বিসিএস এ অংশ নেওয়ার। সেই থেকে বিসিএসের পড়াশোনার দিকে ঝুঁকতে থাকে মনিষা। অন্তত একবার চেষ্টা করে দেখি এমন প্রত্যয়ে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিলেও কৃতকার্য হননি মনিষা। এরপর ৩৬তম পরীক্ষায়ও আগের পুনরাবৃত্তি।

৩৫ এবং ৩৬তম বিসিএসে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকের মত, সেও কিছুটা হতাশ ছিল, কিন্তু মনোবল হারাননি। কিছুদিন আগে যখন ৩৭য়ম বিসিএসের অ্যাডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তির সংবাদটি জানা হয়, তখন মুহুর্তের প্রাপ্তির সংবাদে অতীতের সব বাধা নিমিষেই ভুলে যায় মনিষা। প্রাপ্তির আনন্দে মুহুর্তেই ভুলে যান অতীত, যে অতীতে তাকে সামলাতে হয়েছে দুই বাচ্চা, সাংসারিক কাজকর্ম, স্বামী, চাকরির নিয়মানুবর্তিতা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াবলী।

আরো পড়ুনঃ মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ এবং প্রতিকার

সার্বিক বিষয়ে মনিষা কর্মকার বলেন, 'মফস্বলের মেয়ে হওয়া এবনহ মেয়ে হয়ে জন্মানোর যে সব বাড়াবাড়ি বা নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছি৷ বেশ জোরালোভাবেই বিশ্বাস করি- আমার মত মেয়ে এতগুলো বাধা অতিক্রম করে সফল হতে পারলে অন্য কারো পক্ষেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া অসম্ভব কিছু না। এছাড়াও চোখের সামনে বন্ধুদের বিসিএস ক্যাডার হওয়া দেখা এবং ছোটবেলায় বাবার ম্যাজিস্ট্রেটদের অবস্থান সম্পর্কে বলা কথাগুলো আমার জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা ছিল। আমার শাশুড়ির ভূমিকা ছিক বিশেষভাবে উল্লেখ করার মত। বাচ্চাদের দেখাশোনা এবং সংসারে তার সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা এক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে। বাবা-মা এবং স্বামীর উৎসাহও ছিল সীমাহীন।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment