বান্দরবানের বগালেকের আদিবাসী গল্প!

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • মার্চ ৭, ২০১৮

বগা লেকের জন্ম ইতিহাস নিয়ে স্থানীয় আদিবাসী গ্রামগুলোয় একটি মজার মিথ প্রচলিত আছে, সেইটি অনেকটি এই রকম – “অনেক অনেক দিন আগে একটি চোঙা আকৃতির পাহাড় ছিল। দুর্গম পাহাড়ে ঘন অরণ্য। পাহাড়ের কোলে বাস করত আদিবাসীর দল। ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা। পাহাড়ি গ্রাম থেকে প্রায়ই গবাদিপশু আর ছোট বাচ্চারা ওই চোঙ্গা আকৃতির পাহাড়টিতে হারিয়ে যেত। গ্রামের সাহসী পুরুষের দল কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখতে পায়, সেই পাহাড়ের চূড়ার গর্তে এক ভয়ঙ্কর দর্শন বগা বাস করে। বম ভাষায় বগা মানে ড্রাগন। কয়েকজন মিলে ড্রাগনটিকে আক্রমণ করে হত্যা করে ফেলে। ফলে ড্রাগনের গুহা থেকে ভয়ঙ্কর গর্জনের সঙ্গে আগুন বেরিয়ে আসে। নিমিষেই পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম এক পাহাড়ি লেকের জন্ম হয়”

তবে প্রকৃত অর্থে বুৎপত্তিগত কারন বিশ্লেষন করতে গিয়ে বাংলাদেশের ভূ-তত্ত্ববিদগণ মনে করেন বগাকাইন হ্রদ (বগা লেক) মূলত মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। তবে অনেকে ধারনা করেন এটি মহাশূন্য থেকে ছুটে আসা উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলেও সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। কেউ কেউ আবার ভূমিধ্বসের কারণেও এটি সৃষ্টি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে কোন না কোন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারনে এই পাহাড় চুড়ায় এমন হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে।

বান্দরবন থেকে ৭০ কিমি দূরে রুমা উপজেলায় কেওক্রাডাং এর কোল ঘেষে এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২,৪০০ ফুট (কেওক্রাডাং-এর উচ্চতা ৩,১৭২ ফুট)। ফানেল বা চোঙা আকৃতির আরেকটি ছোট পাহাড়ের চূড়ায় বগা লেকের অদ্ভুত গঠন অনেকটা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো।

রুমা উপজেলার পূর্ব দিকে শঙ্খ নদীর তীর থেকে ২৯ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি মৌজার নাম ‘নাইতং মৌজা’। এই মৌজার পলিতাই পর্বতশ্রেণীর অন্তর্গত একটি পাহাড়ের চূড়ায় হ্রদটি অবস্থিত। এই হ্রদটি তিনদিক থেকে পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫৭ মিটার ও ৬১০ মিটার উচ্চতার মধ্যবর্তী অবস্থানের একটি মালভূমিতে অবস্থিত। এর গভীরতা হচ্ছে ৩৮ মিটার (১২৫ ফুট)। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ হ্রদ এবং এর থেকে পানি বের হতে পারে না এবং কোনো পানি ঢুকতেও পারে না। এর আশেপাশে পানির কোনো দৃশ্যমান উৎসও নেই। তবে হ্রদ যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগা ছড়া নামে পরিচিত। হ্রদের পানি কখনও পরিষ্কার আবার কখনওবা ঘোলাটে হয়ে যায়। কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। এই প্রস্রবণ থেকে পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের পানির রঙ বদলে যায়।

কিভাবে যাবেন : বান্দরবান থেকে বগালেক দুইভাবে যেতে পারেন। যেভাবেই যান না কেন প্রথমে আপনাকে বান্দরবন হতে চান্দের গাড়ীতে করে যেতে হবে রুমা বাজার।অসংখ্য গর্তে এবং বাঁকে পরিপূর্ণ উঁচু নিচু এই রাস্তা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে পাহাড়ি জীবন কত কঠিন!! এরপর রুমা বাজার থেকে আবার চান্দের গাড়ি ভাড়া করে ১১ মাইল পর্যন্ত আসতে হবে। সেখান থেকে ২০-৩০ মিনিট খারা পাহাড় বেয়ে উঠলেই বগালেক। এটা নিঃসন্দেহে বাস্তবের রোলার কোস্টার। রাস্তায় দেখবেন পাহাড়ি জীবনধারা, পার্বত্য বনাঞ্চল, হাতি। সবচেয়ে অবাক হবেন, এই খাড়া পাহাড়ে গাড়ি কিভাবে উঠবে ? প্রতিটা বাঁকেই আপনার মনে হবে, এইবারই বুঝি গাড়িটা নিচে পড়ে যাবে। ড্রাইভার গুলি খুবই দক্ষ সুতরাং তেমন কোন সমস্যা হয়না।রুমা বাজার থেকে চান্দের গাড়িতে ৪ ঘণ্টা লাগে বগালেকে যেতে ।রুমা বাজারে অবশ্যই বিকাল ৪ টার মধ্যে পৌছাতে হবে, ৪ টার পরে সেনাবাহিনী আর নতুন কোন চান্দের গাড়ি বগালেক এর উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার অনুমতি দেয় না।

দ্বিতীয় পথটি ঝুকিমুক্ত কিন্তু দীর্ঘ আর কষ্টের। রুমা বাজার হতে ঝিরি পথ ধরে হেটে যেতে হয় বগালেক। এই পথটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার লম্বা। সময় লাগবে প্রায় ৮ ঘন্টা। যারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে খুবই শক্ত এবং জীবনে রোমাঞ্চকর যাত্রার সম্মুখীন হতে চান কেবল তারাই এই পথে যাবার চিন্তা করবেন। এটি রীতিমত চ্যালেঞ্জ। এই পথে পাড়ি দিতে হবে কমপক্ষে ৫০টির মত ঝিরি, বহু উচুনিচু পাহার, পাথুরে পিচ্ছিল পথ, জঙ্গল আর ছোট বড় অনেক ঝর্না। পথটি যেমন কষ্টকর তেমনি তেমনি দৃষ্টিনন্দন ও আহা মরি সুন্দর। প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী আপনার কষ্টকে পুরোই ভুলিয়ে দেবে।

চান্দের গাড়ী : রুমা বাজার থেকে বগালেক পর্যন্ত চাঁদের গাড়ীর ভাড়া ২০০০- ২৫০০/- টাকা। তবে পর্যটন মৌসুমে তা ৪০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত হতে পারে। রিজার্ভ গাড়ীর ছাড়া লোকাল চাঁদের গাড়ীতে ভাড়া পড়ে ৭০-১০০ টাকা।

তথ্য এবং ছবি : গুগল  

Leave a Comment