ঘুরে আসুন নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ থেকে 

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ১০, ২০১৮

কারো যদি লোকালয়ের সঙ্গ ছেড়ে প্রকৃতির একেবারে গহিনে ডুব দেওয়ার ইচ্ছে থাকে, তাহলে এসব স্থানের থেকে উত্তম আর কিছুই হতে পারে না। এমনই একটা জায়গার নাম হলো নিঝুম দ্বীপ। শীতকালে অতিথি পাখির কলতানে মুখর এ অঞ্চল ঘুরে আসতে পারেন। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণে ১৯৫০-এর দশকে এই দ্বীপটি জেগে ওঠে, এরপর ক্রমে পলি জমে দ্বীপটি আজকের আকার ধারণ করে। ১৯৭৪ সালের দিকে বন বিভাগ এই দ্বীপের উত্তর অংশে ব্যাপকভাবে বনায়ন করে, যার ফলে আজ ১৫ বর্গমাইল দ্বীপটির বেশির ভাগই পরিণত হয়েছে অভয়ারণ্যে। শুরুতে ‘চর ওসমান’ নামে পরিচিত হলেও ১৯৭৯ সালে সাবেক মন্ত্রী আমিরুল ইসলাম খান এই দ্বীপের নাম দেন ‘নিঝুম দ্বীপ’।  

বর্তমানে নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হলো এখানকার হরিণ। মূলত ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত কোনো লোকবসতি ছিলো না এখানে। তাই দ্বীপটি ছিলো জনমানবশূন্য নিঝুম। এরপর বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে এখানে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়া হয়। বর্তমানে নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারী অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। চিত্রা হরিণই নিঝুম দ্বীপের প্রধান বন্যপ্রাণী। একর প্রতি চিত্রল হরিণের ঘনত্ব সুন্দরবনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। এখানে বাঘের মতো কোনো মাংসাশী প্রাণী না থাকায় দ্রুতগতিতে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে উদয়ী নখরবিহীন উদবিড়াল, মেছো বাঘ ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে রয়েছে নিশি বক, দেশি কানিবক, গোবক, দেশি পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, কালোহাঁস, কোড়া, তিলা লালপা, তিলা সবুজপা ইত্যাদি। এই উদ্যান দেশি গাঙচষার অন্যতম প্রধান বিচরণস্থল। সরীসৃপের মধ্যে রয়েছে দেশি গুঁইসাপ ও নানান জাতের সামুদ্রিক কচ্ছপ। সামুদ্রিক কচ্ছপের গুরুত্বপূর্ণ প্রজননস্থল এই নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে কেওড়া গাছ। ইদানীং বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও রোপণ করছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ।

কীভাবে যাবেন : ঢাকার সদরঘাট থেকে ‘এমভি ফারহান’ নামে একটাই লঞ্চ যায় হাতিয়া। বিকেল সাড়ে ৫টায় যাত্রা শুরু করে হাতিয়ার তমরুদ্দীন ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা। ডেকের টিকেট ৩৫০ টাকা, কেবিন সিঙ্গেল ২ হাজার টাকা, ডাবল চার হাজার টাকা। 
হাতিয়া নেমে মাছ ধরার ট্রলারে জনপ্রতি ২০০ টাকা দিয়ে পৌঁছাতে পারেন নামার বাজারে। ট্রলার না পেলে মোটরসাইকেলে (জনপ্রতি ৩০০ টাকা) করে যেতে পারেন মোক্তারঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ৫-১০ মিনিটে মেঘনা পার হয়ে পৌঁছাবেন নিঝুম দ্বীপে। এরপর আপনাকে আবার মোটরসাইকেল (জনপ্রতি ৫০টাকা) অথবা রিকশা (১০০ টাকা) করে নামার বাজারে যেতে হবে। এ ছাড়া আপনি ট্রেনে করে যেতে পারেন নোয়াখালীর মাইজদী পর্যন্ত। সেখান থেকে ট্রলারে করে যাওয়া যায় নিঝুম দ্বীপ। ফেরার সময়ও একটাই লঞ্চ ছাড়ে, হাতিয়া থেকে ঠিক দুপুর সাড়ে ১২টায়। অথবা আপনি ট্রলারে করে মাইজদী গিয়ে ঢাকার ট্রেন ধরতে পারেন।


তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment