নির্জনতার গারো পাহাড়ে জেগে থাকা এক গ্রাম

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • নভেম্বর ৩০, ২০১৭

ভ্রমণপিয়াসী অনেকেরই নজর কেড়েছে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম বিরিশিরি। যে এলাকাটিতে এক সময় পর্যটকদের আনাগোনা ছিল না, সেটিতেই এখন বিভিন্ন উৎসবে রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনগুলোতে লেগে যায় ভিড়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যমের কল্যাণে গ্রামটির পরিচিত এখন দেশজুড়ে।

কোলে গারো পাহাড় আর বুকে সোমেশ্বরী নদীকে নিয়ে বেড়ে ওঠা  বিরিশিরিতে আছে চীনা মাটির পাহাড়, স্বচ্ছ নীল পানির লেক, গারো পাহাড়, স্রোতস্বিনী সোমেশ্বরী নদী, সুসং রাজার ঐতিহাসিক বাড়ি।

বহু কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় অনাবিল সৌন্দর্যের আঁধার নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার গ্রামটিতে। গ্রামটা যাতায়াতের রাস্তাগুলো এখনো এতটা ভালো হয়নি। ট্রেনে গেলে দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে হয়। সেই সাথে লোকাল ট্রেনের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা না থাকলে পোহাতে হবে কষ্ট। আর সড়কপথে বাসে গেলে ময়মনসিংহের পর বেশ খানিকটা এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা পার হতে হবে। খুব বিলাসী আরামদায়ক বাস নেই এই রুটে। বিরিশিরিতে অবস্থানের জন্য খুব ভালো মানের হোটেলও নেই ।

একটু কষ্ট করেই পৌঁছাতে হয় বিরিশিরিতে। তবুও একটু অবসর খোঁজা মানুষ ছুটে যায় বারবার। কী আছে ওই গ্রামে? কেন বারবার ছুটে যাওয়া ? চোখজুড়ানো সবুজের সাথে আপনি অনুভব করবেন অপার্থিব নিঃশব্দতা। এখানে আসা পর্যটকরা যদি শুধু হৈ-হুল্লোড় করেই ফিরে যায়, কিন্তু এর নীরবতা, নিঃশব্দতার সৌন্দর্য টের না পায়, তাহলে এখানে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’

ঢাকার সেই যান্ত্রিকতা থেকে আপনি যদি নিস্তার পেতে ছুটে আসতে চান, তাহলে উচিত হবে ঢাকার সেই জীবনযাপনকে ঢাকাতেই রেখে আসা। বিরিশিরি গ্রামের নিজস্ব একটা শব্দ আছে। সেই সুরকে আপনি বুঝতে না পারলে এখানে আসাটাই বৃথা থেকে যাবে।’
 
রাত ৮টার পর পরই আস্তে আস্তে বন্ধ হতে থাকে দোকানপাট। খাবারের দোকানগুলো রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার ভেতর বন্ধ হয়ে যায়। গণমানুষের শোরগোল-হট্টগল নেই তেমন।  সব কোলাহল বন্ধ হয়ে জেগে উঠে নির্জনতার কোলাহল। নানা রকম পোকা ডেকে চলছে।

বিরিশিরির অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে যেমন রয়েছে নদী, পাহাড়সহ প্রাকৃতিক নানা দৃশ্য, তেমনি এলাকাটির পরিবেশ, জীবনযাপনেও রয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। পুরো রূপ-বৈচিত্র্য উপভোগ করতে হলে মিশে যেতে হবে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে। কয়েকটি নির্দিষ্ট স্পট নয়, বরং পুরো বিরিশিরির পথ-ঘাট জীবনযাপনকে তার মতো করে দেখতে পারলে সবটাই হয়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসু মনের তৃষ্ণা মেটানোর খোরাক।

এই এলাকা মূলত গারো অধ্যুষিত গ্রাম। এখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দারা গারো সম্প্রদায়ের। সেই সঙ্গে আছে বাঙালি হিন্দু-মুসলিম ও হাজং সম্প্রদায়ের বসবাস। স্থানীয়রা জানান যে , এখানে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা নেই বললেই চলে। নিজস্ব প্রথা-কালচার মেনে চলে এই এলাকার বাসিন্দারা। এ কারণে সাম্প্রদায়িক সমস্যাও এখানে নেই।

‘এখানকার কৃষ্টি-কালচারের দিকে নজর রেখেই পর্যটকদের চলাচল করা উচিত। পর্যটকদের আনাগোনা যেসব স্পটে বেড়ে যায়, খুব বেশি সেসব জায়গার অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, তা নানা রকম দূষণের শিকার হয়। এখানেও যদি তাই হয়, তাহলে বিরিশিরিও তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারাবে।’

উৎরাইল বাজার থেকে রিকশা নিয়ে কিছু দূর এগুলোতেই চোখে পড়বে সোমশ্বরীর একটি শাখা নদী। বর্ষায় নদীর পানি বেড়ে টইটুম্বুর হয়ে আছে। স্রোতস্বিনী সোমেশ্বরী যেন তার রূপ যৌবনের অহংকার নিয়ে গম্ভীরভাবে বয়ে যাচ্ছে।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment