ঘুরে আসুন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি থেকে

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • অক্টোবর ২২, ২০১৭

বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে ঢাকা জেলা সদর থেকে পয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অবস্থিত। বাংলাদেশের সব বড় জমিদারগুলোর একটি এই বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে ঐতিহ্য বুকে ধরে  কালের সাক্ষী হিসেবে এখনো সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে এই জমিদারবাড়ি। এই প্রাসাদটির সব ভবনগুলো কিন্ত একসাথে স্থাপিত হয় নি। জমিদার পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকার বিভিন্ন সময়ে এই ভবনগুলো স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে এই প্রাসাদটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত ও পরিচালিত এবং কেন্দ্রীয় ব্লকটি যাদুঘর। একটি নিম্নবিত্ত সাহা পরিবার থেকে বালিয়াটী জমিদার বংশের উদ্ভব হয় ।

জমিদার বাড়ির দর্শনীয় স্থানসমূহঃ

দৃষ্টিনন্দন ইমারত, নির্মাণ কৌশল আর অলংকরণে অপূর্ব সাজে সজ্জিত বালিয়াটি জমিদার বাড়ী। বিশাল বিশাল ভবন আপনাকে জমিদার আমলে জমিদারদের বিত্ত বৈভবের কথাই স্মরণ করিয়ে দিবে। বিশাল বিশাল ঝড়-তুফান, বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে এখনো টিকে আছে এই জমিদারবাড়ি। একই লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে চারটি বহুতল ভবন এবং এদের পেছনে অন্দরমহল এবং রয়েছে কয়েকটি পুকুর।

আরো পড়ুনঃ চুল পড়া কমাতে পেঁয়াজের তেল, জেনে নিন তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি!

জমিদারবাড়ির ভেতরে রং মহল নামে একটি ভবন রয়েছে, সেখানে এখন জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। জমিদার চত্বরটি উঁচু প্রাচীরে ঘেরা এবং ২০০ কক্ষের প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে প্রাচীন শিল্পের সুনিপুণ কারুকাজ। প্রায় ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার জমির ওপর ছড়িয়ে রয়েছে সাতটি দালানের সমাবেশ। প্রতিটি দালানই ঊনবিংশ শতকে নির্মিত এবং জমিদারবাড়ি প্রবেশের দরজায় দুপাশে রয়েছে দুটি তেজী সিংহের পাথরের মূর্তি। দরজা পার হলেই দেখতে পাবেন প্রশস্ত আঙিনা। বর্তমানে এখানে ফুলের বাগান করা হয়েছে। বাড়ির প্রতিটি দেয়াল ২০ ইঞ্চি পুরু আর গাঁথুনিতে সিমেন্টের পরিবর্তে চুন-সুরকি আর শক্তিশালী কাদামাটি ব্যবহার করা হয়েছে । লোহার রডের পরিবর্তে লোহার পাত ব্যবহার করা হয়েছে। ভিতরে রয়েছে লোহার সিঁড়ি।  ধারণা করে হয়, সামনের প্রাসাদগুলোকে ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করতেন আর অন্দরমহলে গোবিন্দরামের পরিবার বসবাস করতেন।

বালিয়াটি প্রাসাদঃ

স্থাপত্যকৌশলের অন্যতম নিদর্শন বালিয়াটি প্রাসাদ। সুবিশাল এই প্রাসাদটি পাঁচটি স্বতন্ত্র ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত। পূর্বদিকের একটি ব্লক ছাড়া চারটি ব্লকের দুটিতে একটি দ্বিতল ভবন এবং একটি টানা বারান্দা বিশিষ্ট ত্রিতল ভবন রয়েছে। প্রাসাদটির পেছনে রয়েছে অন্দরমহল। উত্তরদিকের ভবনটি কাঠের কারুকার্যে তৈরি।

গোলাবাড়িঃ

এই গোলাবাড়িটি লবণের একটি বিশাল গোলা ছিল বলেই ধারণা করা হয়। জমিদারবাড়ির  ঐতিহ্য শুরু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। জমিদাররা ধর্মপ্রাণ ছিলেন এবং তাদের বাড়ির মন্দিরেই  পূজা অর্চনা করা হতো। স্বাধীনতা যুদ্ধে এখানে ব্যাপক লুটপাট করা হয়।

আরো পড়ুনঃ এই উপায়ে কমলা এবং কমলার খোসা ব্যবহার করুন শীতে ত্বকের যত্নে!

পশ্চিম বাড়িঃ

জমিদারবাড়িটির অবস্থান বালিয়াটির পশ্চিম অংশে বলেই এর নাম রাখা হয়েছে পশ্চিম বাড়ি। ১৮৮৪ সালে জমিদারের উত্তরাধিকার জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

পূর্ববাড়িঃ

জমিদারবাড়িটির অবস্থান বালিয়াটির পূর্ব অংশে বলেই এর নাম রাখা হয়েছে পূর্ববাড়ি। এ বাড়ির প্রথম জমিদার পুরুষ রায় চাঁন। তিনি দুইটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের সম্পত্তির দশ আনা অংশ এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সন্তানদের দান করেন ছয় আনা অংশ। দশ আনার ওপর অবস্থিত বাড়িটিই বর্তমানে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান। পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত চারটি সুবৃহৎ অট্টালিকা বিদ্যমান। এগুলো বড় তরফ, মেঝো তরফ, নয়া তরফ এবং ছোট তরফ নামে পরিচিত। ছয় আনির জমিদার বাড়ির অস্তিত্ব বর্তমানে নেই।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি কখন খোলা/বন্ধ থাকেঃ

সরকারি ছুটির দিনগুলো ছাড়াও বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রোববার পূর্ণদিবস আর সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়।

খরচ / টিকেট মূল্যঃ বাংলাদেশী দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটের মূল্য ২০ টাকা আর বিদেশি দর্শনার্থীরাও টিকিটের মূল্য রাখা হয় ২০০ টাকা।

আরো পড়ুনঃ ঠান্ডা না গরম পানিতে গোসল করবেন শীতে!

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া, আরিচা বা মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠে যেতে পারেন। মানিকগঞ্জের ৮ কিমি আগেই সাটুরিয়া বাসস্টপে নেমে যেতে হবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা। সাটুরিয়া বাসস্টপে থেকে ১২ কিমি দূরে এই বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অবস্থান। সাটুরিয়া থেকে পাকুটিয়াগামী রাস্তায় সাটুরিয়ার জিরোপয়েন্টে নামতে হবে। এখান থেকে মাত্র ১ কি.মি এর কম দূরত্ব বালিয়াটি জমিদার বাড়ির।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment