দার্জিলিং ভ্রমণের স্মৃতি

  • ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
  • ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯

জীবনে প্রথমবার দেশের বাইরে যাওয়া । সালটা ২০১৫। এপ্রিল মাস। সাথে ৩ জন চিকিৎসক ও তাদের পরিবার। সরকারী চাকুরী করি। সহজেই  অনুমতি পাওয়া গেল। জেট এয়ারওয়েজ এ কলকাতা গেলাম। আধা ঘণ্টার মত সময় লাগল । কলকাতায় আমার পরিচিত একজন ছিলেন। তিনি গাড়ী পাঠালেন । আমরা ছিলাম ১৩ জন। সবাই একসাথে উঠলাম । প্রথমে গেলাম পার্ক ষ্ট্রীট । সেখানে হোটেল ঠিক করা ছিল। যেহেতু প্লেন এ তেমন কষ্ট হয়নি তাই একটু বিশ্রাম নিয়েই বের হলাম। ভাল লাগছিল। নতুন দেশ। আমরা ছিলাম রাফি আহমেদ  ষ্ট্রীট এ। রাস্তা তেমন প্রশস্ত নয়। কিন্তু যানজট দেখতে পেলাম না। এর মধ্যে ট্রাম দেখলাম। চমৎকার লাগল । নিউমার্কেট খুব কাছেই ছিল। রাতে আর গেলাম না। পরদিন ভোরেই ঘুম ভাঙল । হোটেলের জানালা দিয়ে কলকাতা শহর দেখলাম। খুব ভাল লাগছিল। আগের দিন রাতেই আমরা গাড়ী ঠিক করে রেখেছিলাম। 

সকালে চলে এল। সবাই মিলে বের হলাম। নাস্তা করা হল । প্রথমে গেলাম হাওড়া ব্রিজে । কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। গল্প কবিতা বা সিনেমায় কলকাতার যেমন বর্ণনা তার সাথে মিল পেলাম। তারপর গেলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল । সেখানে গেটে কিছু পুলিশ ছিল। আমরা বাঙালি জেনে অনেক সাহায্য করল। ভিতরে ঢুকে ভাল লাগল ।কিন্তু ছিল খুব গরম। সবাই অস্থির হয়ে গেল। তাছাড়া ভেতরের পরিবেশ ও ভাল নয়। তাই দ্রুত বের হয়ে সায়েন্স সিটি তে গেলাম। মুগ্ধ হলাম। বেশী মজা পেল বাচ্চারা। এরপর দামী একটা হোটেল এ দুপুরের খাবার খেলাম।সেখান থেকে নিকো পার্ক। বাচ্চাদের আনন্দের অনেক উপকরণ এখানে আছে। সেখান থেকে হোটেলে ফিরে এলাম। চমৎকার দিন কাটল । ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়েই নিউ মার্কেট মার্কেট গেলাম। অনেক বাংলাদেশী চোখে পড়ল । সেখান থেকে খাওয়া সেরে হোটেলে ফিরলাম। ভাল ঘুম হল। পরদিন সকালে শিলিগুড়ি যাওয়ার ট্রেন ধরলাম। দেশ থেকেই শতাব্দী ট্রেনের নাম শুনেছিলাম । কিন্তু টিকেট পাইনি।

তাই নতুন এক ট্রেনে গেলাম। মান ভাল না। অনেক সময় লাগল । তাছাড়া বিরিয়ানি কিনে সবাই ধরা খেল। কেউ খেতেই পারলনা। সাত ঘণ্টার জায়গায় চৌদ্দ ঘণ্টা সময় লাগল । সবাই বেশ বিরক্ত হল। নেমেই  গাড়ী নিয়ে চলে গেলাম শিলিগুড়ি। হোটেল ঠিক করা ছিল। কিন্তু মান ভাল ছিলনা। দিনটা খারাপ গেল। যাই হোক পরদিন দার্জিলিং যাবার জীপ ঠিক করা হল। সকাল বেলাতেই বেরিয়ে পড়লাম । যখন জীপ পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগল ভাল লাগা শুরু হল।এত ভাল লাগছিল বলে বোঝানো সম্ভব নয়। প্রথমে গেলাম মিরিক। এত সুন্দর জায়গা আগে কখনো দেখিনি। সবাই খুশি হয়ে গেল। ঘণ্টা দুয়েক থেকে রওনা দিলাম দার্জিলিং এর দিকে। এভাবে চলতে চলতে কখন যে দার্জিলিং পৌঁছে গেলাম টেরই পাইনি । সুন্দর লাগছিল সব। নতুন দেশ, নতুন মানুষ । হোটেল ঠিক করা ছিল। উঠতে সবার একটু কষ্ট হল। সেখানাকার মানুষ খুব পরিশ্রমী । 

হোটেল এ ফ্রেশ হয়ে খাবারের সন্ধানে বের হলাম। Mcdonald’s  পেয়ে গেলাম। এরপর জীপ নিয়ে সোজা রক গার্ডেন এ। এত সুন্দর জায়গা। কিন্তু পথটা বেশ বিপদজনক মনে হল। অনেকে খুব ভয় পেল। সেখান থেকে ফিরে রাতে কেনাকাটা করলাম। রাতে বেশ ঠাণ্ডা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের কারনে কারেন্ট ছিলনা। একটু অসুবিধায় পড়লাম । যাই হোক রাত ৩ টার সময় টাইগার হিলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সঠিক সময়ে পৌঁছে গেলাম। যখন সূর্য উঠল সবাই আনন্দে ফেটে পড়ল ।এত সুন্দর দৃশ্য বর্ণনার অতীত ।মধুর স্মৃতি নিয়ে ফিরলাম। 

ফেরার পথে বুদ্ধ আশ্রম আর বাতাসিয়া লুপ দেখলাম। খুব ভাল লাগছিল। এরপর হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিলাম। তারপর সকালে ভাড়া গাড়ীতে দার্জিলিং শহর পুরা ঘুরলাম। ছোট শহর । পাহাড় কেটে করা। এত সুন্দর জায়গা যে আছে না গেলে কখনই জানা হতনা। চিড়িয়াখানায় গেলাম, চা বাগানে গেলাম, স্কুল ও জাদুঘর দেখলাম। চা খেলাম। দার্জিলিং এর চা জগৎবিখ্যাত। কিছু কেনাও হল। যদিও দেশে এসে সেই স্বাদ আর পাওয়া গেলনা। ব্যপারটা রহস্যই থেকে গেল। সারাদিন ঘুরে বিকেলে শিলিগুড়ির পানে রওনা দিলাম। ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল সারাজীবন দার্জিলিং থেকে যাই। সৃষ্টিকর্তা যদি বাঁচিয়ে রাখেন তবে অবশ্যই আবার যাব। তখন আমার বয়স  হয়তোবা বেড়ে যাবে কিন্তু দার্জিলিং এর বয়স বাড়বেনা । দার্জিলিং সত্যিই মায়াবি এক শহর । সবাইকে মায়ায় বেঁধে রাখে। একবার যে যাবে সে বারবার যেতে চাইবেই।


 

Leave a Comment