কোয়েম্বাটুর মহা নগরের খুঁটিনাটি ( প্রথম পর্ব )

  • ফারজানা আক্তার 
  • মে ৭, ২০১৯

কোয়েম্বাটুর যাওয়ার প্রধান উদেশ্য ছিলো চিকিৎসা। চিকিৎসার পাশাপাশি কোয়েম্বাটুর ঘুরে ফিরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল কিছুটা। সেই ঘুরে ফিরে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু লেখার চেষ্টা মাত্র। কোয়েম্বাটুরকে যতটুকু নিজে দেখেছি আর গুগল করে এর সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি আজকের পর্বে তারই কিছু অংশ থাকবে। 

কোয়েম্বাটুর ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগর ও ভারতের ১৬ তম বৃহত্তম মহানগর। কোয়েম্বাটুর তামিলনাড়ু রাজ্যের  পশ্চিমে কঙ্গনাড়ু অঞ্চলের শহর। শহরটি নওয়াল নদীর তীরে অবস্থিত এবং পশ্চিমা ঘাট পর্বত দ্বারা বেষ্টিত। চেন্নাইয়ের পর জনসংখ্যা আর এলাকাভেদে কোয়েম্বাটুর রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এটি কোয়েম্বাটুর পৌরসংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এটি কোয়েম্বাটুর জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। কোয়েম্বাটুর ভারতের দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত পর্যায়-২ শহরের অন্তর্গত এবং দক্ষিণ ভারতের একটি প্রধান শিল্পকেন্দ্র। তুলা উৎপাদন এবং বস্ত্র শিল্পের কারণে শহরটিকে প্রায়ই "দক্ষিণ ভারতের ম্যানচেস্টার" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কোয়েমম্বাটুরকে "পাম্প সিটি" হিসাবেও উল্লেখ করা হয় এবং এই শহর ভারতের প্রায় চাহিদা অর্ধেক মোটর এবং পাম্পের সরবরাহ করে। শহরটি গহনা, ভেজা গ্রাইন্ডার, পল্ট্রি এবং স্বয়ংক্রিয় উপাদানের বৃহত্তম রপ্তানিকারকদের মধ্যে একটি। শহরটি "কোয়েমাটোর ভেট পিকরার" এবং "কোভাই কোরা কটন" ভারত সরকারের ভৌগোলিক নির্দেশক হিসাবে স্বীকৃত। ( গুগল থেকে নেওয়া )

আমি কোয়েম্বাটুরের অভিনাসী শহরে ছিলাম। এতো সাজানো গুছানো কোন শহর হতে পারে আমার চিন্তা ভাবনায় ছিলো না। পরিষ্কার পরিছন্ন, কোন ট্রাফিক জ্যাম নেই, আগে যাওয়ার তাড়াহুড়া নেই। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা নেই। একটি শহরকে পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার। এই কথাটি ওরা যেন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে!


রাতের অভিনাসী শহর
 

সবাই দুই এক কদম হেঁটে যেয়ে ময়লার ঝুঁড়িতে ময়লা ফেলে। রাস্তায় সংখ্যায় ছেলেদের সমান সমান হয়ে মেয়েরা চলাফেরা করছে, স্কুটি চালাচ্ছে। কেউ কারো দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। কোন হ্যারাজমেন্টের ভয় নেই, কে কিভাবে বাহিরে বের হলো সে নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। মেয়ে দেখলে শিস বাজাবে, বাঁকা ঠোঁটে হাসি ফুটবে এমনটা আমার ১১দিনের অভিজ্ঞতায় চোখে পড়ে নি। উল্টা আমাকে বলতে হবে এই রাজ্যের ছেলে মেয়ে উভয়েই খুব হেল্পফুল। 


তামিল বিয়ের গেট 
 

এই রাজ্যে পানি, যানবাহন, আর ভাষার সমস্যার কথা আমাকে বলতেই হবে। আমাদের দেশের মতো ওই দেশে মাটির নিচ্ থেকে এতো এতো পানি উঠে না। হাতেগোনা খুবই কম বাড়ির মানুষ এই সুবিধা পায়। বাকি সব বাসায় ১দিন পর পর ৩০মিনিটের জন্য পানি আসে। আর ৭ অথবা ১০দিন পর পর দুই ঘন্টার জন্য প্রতি বাসায় পানি আসে। এই পানিতে যাদের হয় না তাদের পানি কিনতে হয়। 


হাসপাতালের ওয়েটিং রুম 
 

এই রাজ্যে গাড়ি খুব সস্তা। প্রায় প্রতিটি বাসায় স্কুটি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার রয়েছে। শহরে কোন রিক্সা নেই। আছে শুধুমাত্র অটো। সেই অটোতে আপনি যদি চড়েন তাহলে আপনাকে পুরো ভাড়া নিতে হবে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাত্রী নিয়ে অটো চলে না। অটোর ভাড়াও নেহাৎ কম নয়। বাসের সংখ্যাও হাতে গোনা। অটো বা বাসে অভিজ্ঞতার জন্য চড়া যেতে পারে। আর ঘুরাঘুরির  জন্য প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে ঘুরাঘুরি করা বেস্ট। 

এই রাজ্যের মানুষ ইংরেজি বলতে পারে না। হিন্দিও অনেকে জানে না। রাজনৈতিক কারণে হিন্দি ভাষা তারা এভোয়েড করে। জানে তামিল। তামিল এমনই শক্ত ভাষা আর কোন শব্দকে কি বলে বুঝাও মুশকিল। যেমন আমরা বাপের ভাইকে কাকা ডাকি আর তারা কাককে কাকা বলে। একটু এদিক ওদিক হলেই মহা মুশকিল। অন্য ভাষায় তাদের সামনে দুই এক মিনিট কথা বললে তারা রেগে যায়। তারা ভাবে তাদের গালাগাল করা হচ্ছে। এই রাজ্যের মানুষ খুব ভালো কিন্তু রেগে গেলে মহা মুশকিল। 

চলবে... 

Leave a Comment