কোয়েম্বাটুর : কেরালার হাউজবোট ভ্রমণ ( চতুর্থ পর্ব )
- ফারজানা আক্তার
- মে ১৭, ২০১৯
যদিও কোয়েম্বাটুর যাওয়ার উদেশ্য চিকিৎসা, তবে টুকটাক ঘুরাঘুরি মিস করি নি। তার মধ্যে কেরালা ছিলো অন্যতম। রাতের ১১টায় কোয়েম্বাটুরের অবিনাশী শহর থেকে কেরালার উদেশ্য আমাদের যাত্রা শুরু হয়, আর ভোর সাড়ে ৪টায় আমরা কেরালা পৌঁছাই। কেরালার পথে যে পরিমান টোল দিতে হয়, সে টাকা দিয়ে মনে হয় ছোটখাটো কোন শহরে একটা ছোটখাটো ট্যুর দেওয়া যাবে।
সেই ভোরে নেমে আগে কেরালার সাগরের গর্জন শুনতে গেলাম। কেরালার বিচের গর্জন খুব ভয়ংকর আর ঢেউও মারাত্মক। আমাদের কক্সবাজারের মতো উপভোগ্য নয়। সেখানের পানিতে নামার পর একটা অজানা ভয় কাজ করে। কিছুক্ষণ সাগরের পাড়ের হাওয়া খেয়ে আর পানিতে কিছুটা ঝাঁপাঝাঁপি করে ৩ঘন্টার জন্য একটা হোটেলের রুম বুক নিলাম শুধুমাত্র ফ্রেস হওয়ার জন্য। আমরা তিন দম্পতি ছিলাম আর সাথে একটা বাচ্চা। আমরা গিয়েছিলাম একদিনের জন্য। ঠিক কেরালাকে দেখতে না। কেরালার হাউজবোটে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে।
ফ্রেস হয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে হালকা খাওয়া দাওয়া করে আমরা হাউজবোটে গেলাম। আমাদের সাথে মামা মামানি ছিলেন তারা বহু বছর ধরে কোয়েম্বাটুর আছেন। তামিল ভাষা জানেন। তবে কেরালার ভাষারও কিছুটা ভিন্নতা আছেন। মামা মামানি স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বার্তা বলছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক করতে ভাষার সমস্যায় আমাদের পড়তে হয় নি তেমন।
সাধারণত দুই ধরনের হাউজ বোট থাকে দোতলা ক্রুজ বোট আবার প্রিমিয়াম হাউজ বোট। আমরা মাঝারি মানের একটা দোতলা ক্রুজ বোট সারাদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম। ভারতের দুইটি জায়গাকে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ বলা হয় প্রচলিত এমন একটি কথা আছে। এক : রাজস্থানের উদয়পুর, এবং দুই : কেরালার আলেপ্পি। আমরা গিয়েছিলাম কেরালার আলেপ্পিতে। কেরালার অন্যতম সৌন্দর্য হলো ব্যাকওয়াটার্স জলধারায় চালিত ঐতিহ্যবাহী হাউজবোট।
কেরালা নামটি এসেছে 'কেরা' এবং 'আলআম' নামক দুইটি শব্দ থেকে। কেরা অর্থ নারকেল আর আলআম অর্থ স্থান। কেরালা শব্দের অর্থ দাঁড়ায় নারকেলের স্থান। নামের অর্থের সাথে জায়গার যে মিল আছে সেটা কেরালা ভ্রমণে ঠিকঠাক বুঝা যাবে। ঝক্ঝকে তকতকে পরিছন্ন শহর, নীল সাগরের স্বচ্ছ জলরাশি, নারকেল গাছের সারি, সুন্দর ডিজাইনের ছোট ছোট ঘর বাড়ি, সাগর থেকে আসা পানির জলধারা বা ব্যাকওয়াটার, মজাদার খাবার! স্বপ্নের মতো সুন্দর একটি জায়গা। প্রকৃতি কোন কৃপণতা করে নি তার সবটুকু এখানে ঢেলে দিতে। তাই কেরালাকে বলা হয় ‘গডস ওন কান্ট্রি’।
মাঝারি খালের মাঝ দিয়ে যখন আমাদের বোট এগিয়ে চলছিলো আমার মনে হচ্ছিলো আমি স্বপ্ন দেখেছি। চারপাশে গাছ, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের বাড়ি ঘর, কখনো মনে হবে শহর, কখনো মনে হবে গ্রাম। চারপাশে পানি মাঝখানে কখনো শহর কখনো গ্রাম। প্রকৃতির সৌন্দর্যের কি যে এক লীলাখেলা চলছে সেখানে। নিজ চোখে না দেখলে বুঝানো যাবে না। এক সেকেন্ডের জন্যও আমরা কেউ চোখ ফেরাতে পারি নি। মনে হচ্ছিলো একপাশ দেখতে গিয়ে অন্যপাশ মিস করছি। কতক্ষণ মাথা ডানপাশে, কতক্ষণ বামপাশে ঘুরিয়েছি। আশেপাশের বোটে বাহিরের দেশের লোকজন বেশি চোখে পড়েছে।
মাত্র একদিনের জন্য গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর মনে হলো ভুল হয়েছে। মিনিমাম দুইদিন এই জলের উপর ভেসে থাকা দরকার ছিলো। ঝড় বন্যায় সেখানকার লোকজনের কষ্ট হয় মানছি, কিন্তু তারা হয়ত জানে না উপরওয়ালা প্রকৃতির সর্বোচ্চ সৌন্দর্যের সাথে তাদের বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন।