কোয়েম্বাটুর : ওটি ভ্রমণ ( শেষ পর্ব )

  • ফারজানা আক্তার 
  • মে ১৭, ২০১৯

যদিও কোয়েম্বাটুর যাওয়ার উদেশ্য চিকিৎসা, তবে টুকটাক ঘুরাঘুরি মিস করি নি। কেরালার পর ছিলো ওটি ভ্রমণ। খুব ভোরে ওটির উদেশ্য আমরা বের হয়েছিলাম। সেদিন পহেলা মে ছিলো। ছুটি ছিলো, তাই সবাই ছুটছিল পাহাড়ের দিকে। সকাল ১১টার মধ্যে আমরা পাহাড়ে উঠতে শুরু করছিলাম। পাহাড়ে উঠার সময় দুই একটা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ফ্রেস বাতাস টেনে নিচ্ছিলাম, ছবি তুলছিলাম। আসলে এমন জায়গাতে ছবি তোলার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপভোগ করা। ওটির চায়ের কথা ভুলবো না। দারুণ ছিলো সেই চা। ওটিতে পৌঁছে চা, ডাল আর মরিচের বড়া দিয়ে নাস্তা করেছিলাম। চা আর ডালের বড়া ভালো ছিলো। মরিচের বড়া ভালো লাগে নি। 

পাহাড়ে উঠতে উঠতে দেখছিলাম সবার গায়ে শীতের পোশাক। দেখে হাসি পেয়েছিল। ভাবছিলাম আমরা গরমে মরি আর এরা শীতের পোশাক পরে ঘুরে। কিছুক্ষণ পর আমার সেই হাসি আর হাসি থাকে নি। টের পেয়েছিলাম শীতের তেজ। 


পাহাড় থেকে তুলে আনা গাজর
 

ওটি তামিলনাড়ুর একটি জায়গার নাম যা ট্যুরিস্ট স্পট নামে বেশি পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭,৩৪৭ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরটি। এই শহরে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। এই শহরের প্রধান বৈশিষ্ট্য ঘন গাছগাছালিতে ছাওয়া ঢালু পাহাড়। একদিনের ট্যুর ছিলো, তাই পুরো শহর দেখা সম্ভব হয় নি। উটি লেক আর উটি বোটানিক্যাল গার্ডেন এই দুইটি জায়গা পুরো ঘুরে দেখা হয়েছে। বাকি দুই একটা জায়গা ভাসা ভাসা দেখেছি আর কিছু জায়গাতে যাওয়া সম্ভব হয় নি। তাও নিজেদের গাড়ি ছিলো বলে ভাসা ভাসা জায়গাগুলো দেখা সম্ভব হয়েছে। 


পাহাড়ের বিভিন্ন ফল
 

ওটি লেকের চারপাশ ইউক্যালিপটাস বৃক্ষ দ্বারা বেষ্টিত। লেকে ঘুরতে হলে আপনাকে বোট ভাড়া নিতে হবে। লেক খুব বেশি বড় নয়, তবে এর মনোরম বাতাস আর চারপাশের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। বোটে উঠার আগে আমরা পাহাড়ের বিভিন্ন ফল আর সবেমাত্র পাহাড় থেকে তুলে আনা গাজর কিনে নিয়েছিলাম। বোটে বসে প্রকৃতি দেখছিলাম আর ফল গাজর খাচ্ছিলাম। একটা কথা বলে রাখি, ওটিতে সবকিছুর দাম খুব চড়া। 


ওটি লেক
 

বোটের পর আমরা দুপুরের খাবারের জন্য একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। চিকেন বিরিয়ানি নিলাম। আমার একটুও ভালো লাগে নি। চিকেন কিংবা বিরিয়ানি কোথাও কোন মসলা নেই। আমার মনে হচ্ছিলো চিকেন শুধুমাত্র সিদ্ধ করে দিয়েছে। খাওয়ার পর্ব শেষ করে গেলাম বোটানিক্যাল গার্ডেনে। আমাদেরও বোটানিক্যাল গার্ডেন আর ওদেরও বোটানিক্যাল গার্ডেন!

আমাদের বোটানিক্যাল গার্ডেনের নাম শুনে সবাই মুখ টিপে আগে হাসে। পরিবার পরিজন নিয়ে যাওয়ার কথা কেউ ভাবতে পারে না। আর ওদের বোটানিক্যাল গার্ডেনে পরিবার ছাড়া আমি আর কিছুই দেখলাম না।


বোটানিক্যাল গার্ডেনে
 

খুব যে বড় কোন জায়গা নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন তারা তৈরী করেছে বিষয়টা এমন নয়। খুব ছোট একটা জায়গা। ভিতরে একটা মাত্র ক্যাফেটেরিয়া। সবুজ ঘাসে ভর্তি পুরো জায়গাটা। সবাই পরিবার নিয়ে বসে গল্প করছে। বাচ্চারা খেলছে। আমি পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে দেখেছি আর ভেবেছি এদের বাচ্চারা কিভাবে বেড়ে উঠছে আর আমাদের বাচ্চারা কিভাবে বেড়ে উঠছে!


বোটানিক্যাল গার্ডেন
 

নেক্সট জেনারেশনকে সুন্দর, সুস্থ পরিবেশ এরা ঠিকঠাক দিচ্ছে। সাথে নিজেরাও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকছে। ওটিতে মুসলিমের সংখ্যা বেশি। আগে আমি ভাবতাম তামিল বুঝি শুধু হিন্দু আর খ্রিষ্টান হয়। ওটিতে যেয়ে আমার ধারণা বদলালো। বোরখা, হিজাব, পাঞ্জাবি পরে সবাই পরিবার নিয়ে এসে কি সুন্দর গল্প করছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা সব বয়সী মানুষের আনাগোনা বোটানিক্যাল গার্ডেনে। 


ভাসা ভাসা যে কয়টা জায়গায় গিয়েছি তার একটি। শুটিং স্পট 
 

 

Leave a Comment