সোনারগাঁও ভ্রমণ 

  • ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
  • জুন ২২, ২০১৯

২০০৮ সাল। জুম্মার নামাজের পর আমরা সবাই ক্যাম্পাসের ভেতর একটা কালভার্টে বসে আড্ডা দিতাম। আড্ডার নিয়মিত সদস্যরা সবাই মিলে ঠিক করলাম সোনারগাঁও ঘুরতে যাব। প্রথমে ১৬ জনের মতো ছিল। পরে সংখ্যা আরো বাড়বে বলে মনে হলো! রওনা দিলাম ৪ জন!! বাকীদের কাউকে যাত্রার সময় খুঁজে পাওয়া গেলনা। আমি কিছুটা বুঝেছিলাম এমন হতে পারে। আজ পর্যন্ত প্ল্যান করে কখনো ঘুরতে পারিনি। যেটুকু ঘুরেছি হুট করেই হয়েছে। যাই হোক ট্রেনে ৪ জন রওনা দিলাম। এসির টিকিটের মূল্য বেশী বলে নরমালে গিয়েছিলাম। কিন্তু মনের ভেতর এত আনন্দ ছিল যে কোনরকম কষ্টই মনে হয়নি। যদিও সেসময়ে ছিল খুব গরম। ট্রেনে চা নাস্তা করলাম। গল্পে গল্পে কখন যে বিমান বন্দর স্টেশনে পৌঁছে গেলাম খেয়ালই করিনি। কুতুব, অর্ঘ্য আর সোনা ভাই সবাই মিলে স্টেশনে নেমে সিএনজি নিয়ে নিলাম। জ্যাম ছিল মোটামুটি। আমরা পুরাতন ঢাকার একটা সন্দেহজনক টাইপের হোটেলে উঠলাম। উঠার আগে কাচ্চি বিরিয়ানি আর বোরহানি খেলাম। দুর্ধর্ষ স্বাদ। অন্য কোথাও এমন রান্না করতে পারে না। দুপুরে ফ্রেস হয়েই বেরিয়ে পড়লাম বসুন্ধরা সিটির উদ্দেশ্যে। 

অর্ঘ্য চাচার জন্য কিছু একটা কিনবে। কিন্তু কোথাও সেটি পাওয়া গেলনা। বসুন্ধরা সিটিতে ঘুরলাম। চমৎকার সময় কেটে গেল। তারপর জ্যামে পড়লাম ফেরার সময়। ফিরে হোটেলে খেতে বসলাম। সবাই নান গ্রিল ভালই টানল। তারপর হোটেলে ফিরে আড্ডা শুরু হলো। এরপর ঘুমাতে গেলাম। ক্লান্তির কারণে ভালই ঘুম হলো। সকালে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলাম। নারায়নগঞ্জ যাব। বেশ হয়রানি হতে হল। একসময় মনে হলো যাবই না! ও ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা আগের দিন আহসান মঞ্জিলে গিয়েছিলাম। আহসান মঞ্জিলে গেলে আমার খুব ভাল লাগে। কেন যে ভাল লাগে বুঝিনা আমি। 

পরে আমরা সিএনজি নিয়ে রওনা দিলাম। সময় লাগল। আগেই কয়েকজনের থেকে শুনে নিয়েছিলাম। তাই সমস্যা হয়নি। যতদূর মনে পড়ে মুগরাপাড়া বলে একটা জায়গায় নেমেছিলাম। সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। সবারই খুব ক্ষুধা লেগেছিল। নাস্তা করলাম। মান মোটামুটি। তারপর ভ্যানজাতীয় কোন বাহনে চড়ে ইশা খাঁর রাজধানীতে চলে গেলাম। ঢুকেই বড় সরদার বাড়ি দেখলাম। ইশা খাঁর বাড়ি বলেও পরিচিত এটি। অসামান্য স্থাপত্য। ভাবতে অবাক লাগে অনেক আগেও মানুষের সৌন্দর্যবোধ এত সুন্দর ছিল। 

তখন এমন অবস্থা হল যা দেখি তাই ভাল লাগে। অনেক সন্দেহনজক কাপল কেউ দেখা গেল। চারিদিক ঘুরে দেখলাম। পুকুর পাড়ে বসলাম। এখানে বসলে সবার মনই ভাল হয়ে যাবে। এরপর চলে গেলাম পানাম নগরে। পুরাতন স্থাপনা। কালের সাক্ষী। সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। এসব জায়গায় গেলে আমার খুবই ভাল লাগে। কুতুব, অর্ঘ্য, সোনা ভাই সবাই আনন্দ পেল। পুরোটা প্রায় ঘুরে দেখলাম। কোন কিছুই বাদ দেইনি। বিধ্বস্ত হয়ে গেলাম। তবে মনের ভেতরটা কেমন জানি হয়ে গেল। মনে হলো থেকে যাই আজীবন। তারপর কারুশিল্প জাদুঘর দেখলাম। 

চারজনই ক্লান্ত হয়ে আবার মুগরাপাড়ার দিকে রওনা দিলাম। পেছনে ফেলে এলাম অসম্ভব সুন্দর স্মৃতি। খুব ক্ষুধা লেগেছিল। নি¤œমানের হোটেলে খেতে বসলাম। পকেটে তেমন টাকা ছিলনা। সবারই পকেট খালি। না পকেটমার হয়নি! আমরা নিয়ে গিয়েছিলাম খুব কম! একটু মন খারাপ হলো। ভাত, ডিম আর ডাল খেলাম। এতো ক্ষুধার্ত ছিলাম সেটাই অমৃত মনে হলো। এত স্বাদের খাবার জীবনেও খাইনি! তারপর বাসে চড়ে চলে আসলাম ঢাকায়। গেলাম বাহদুর শাহ পার্কে। ঘুরলাম সেখানে। আইসক্রিম খেলাম। তারপর চলে গেলাম অর্ঘ্যরে মামার বাসায় উত্তরাতে। খুব ভাল মানুষ ।অনকে আন্তরকি। বার্গার খেলাম ব্র্যান্ডের। চরম স্বাদ। 

রাতে অনেক খাবারের আয়োজন করলেন। সব তৃপ্তি করে খেলাম। কেউ কেউ খুব ভালো টানল। গল্প আড্ডা  যেন শেষই হতে চায়না। তারপর গাড়ীতে আবার স্টেশনে পৌঁছে দিলেন। বললাম, “না না, কি দরকার ছিল” ট্রেন আসল। চড়লাম। কুতুব, অর্ঘ্য, সোনা ভাই সবাই মিলে গল্প করতে করতে ফিরলাম। এতো কম টাকায়, এতো স্বল্প সময়ে এতো সুন্দরভাবে ঘোরার কথা চিন্তাই করা যায় না। অন্যতম দুঃসাহসিক অভিযান ছিল একটি। খুব ভোরে চিরশান্তির শহর রাজশাহীতে এসে নামলাম। 

Leave a Comment