এক নজরে কুমিল্লার খুঁটিনাটি জেনে নিন 

  • ইয়াসিন প্রধান সাজিদ 
  • মে ২৯, ২০২০

চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যতম একটি জেলা কুমিল্লা। যেটি বর্তমানে প্রস্তাবিত বিভাগের মধ্যে রয়েছে। কুমিল্লা সারাদেশে রসমালাই এর জন্য বিখ্যাত।
সারা দেশের মানুষ কুমিল্লার রসমালাই খাওয়ার জন্য একবার হলেও ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকে। চট্টগ্রাম ভ্রমণের পথে যাত্রীরা রসমালাইয়ের জন্যে হলেও একবার ছোট বিরতি নেয় কুমিল্লার মাটিতে।

ভালোবাসার এই কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাকাল মূলত ১৯৬০ সালে। কুমিল্লা একসময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শুধুমাত্র একটি অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরর্বতী সময়ে ত্রিপুরা জেলাকেই নামকরণ করা হয় কুমিল্লা। আর এটি করা হয় ১৯৬০ সালে। ব্রাহ্মনবাড়িয়া ও চাদপুর কে কুমিল্লা থেকে পৃথক ভাবে জেলা ঘোষণা করা হয় ১৯৮৪ সালে।

কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-র্পূবাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। কুমিল্লা জেলাটি খুব বড় না হলেও এর মোট আয়তন ৩০৮৫.১৭ র্বগ কিলোমটিার। তবে এই ছোট্ট জেলার মধ্যেই রয়েছে ভালোবাসার মতো হরেক রকমের বিষয়বস্তু।

কুমিল্লায় অনেক দর্শনীয় স্থান এবং আকর্ষনীয় ইতিহাস রয়েছে। যেগুলো দেখা ও জানার জন্যে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এই কুমিল্লায় ছুটে আসে।
কুমিল্লার অবস্থান নিয়ে যদি কথা বলি তাহলে এর বিশ্লেষণ দাড়ায় এরকম :-

আমাদের রাজধানী ঢাকা থকেে কুমিল্লার দূরত্ব প্রায় ১০৫ কিলোমিটার আর চট্টগ্রাম সদর থকেে প্রায় ১৪৯ কিলোমিটার । কুমিল্লার দক্ষিণ দিকে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা, পশ্চিমে চাদপুর, মেঘনা নদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলা, উত্তর-পশ্চিমে মেঘনা নদী ও নারায়নগঞ্জ জেলা, উত্তরে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা এবং র্পূবে ভারত ও ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।

এবার আসি কুমিল্লার জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনায়ঃ কুমিল্লা জেলার সর্বমোট জনসংখ্যা ৫৬,০২,৬২৫ জন।(পরিসংখ্যান ২০১১) এর মধ্যে পুরুষ সংখ্যা ২৬,৭৮,২৩৫ এবং মহিলা ২৯,২৪,৩৯০ জন। এ হিসাব অনুযায়ী প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব দাড়িয়েছে ১৮১৬ জন।

কুমিল্লার মুক্তিযুদ্ধঃ- মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা ২ নং সেক্টর এর অর্ন্তগত ছিল। ঢাকা, ফরিদপুর, নোয়াখালী ও কুমিল্লা নিয়ে গঠিত হয়েছিল ২নং সেক্টর।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রয়েছে : বধ্যভূমি - ৪টি, গণকবর - ১২টি, স্মৃতিস্তম্ভ - ৪ টি, মঠ- ২টি

ঐতিহ্যর দিকে তাকালে, শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির দিক থেকে কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে এ উপমহাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। মুখরোচক রসমালাই নামক বিখ্যাত মিষ্টি কুমিল্লায় তৈরী করা হয়। এই বিখ্যাত কুমিল্লার রসমালাই সারাদেশে এক নামে পরচিত। দুধ, ছানা ও চিনির সমন্বয়ে তৈরী সুস্বাদু মিষ্টান্ন এর শুরু হয় কুমিল্লা থেকেই। দুগ্ধজাতীয় দ্রব্যাদি প্রস্তুতের জন্যেও কুমিল্লা বিখ্যাত হয়ে আছে। বাঁশের বাঁশির জন্য কুমিল্লা বিখ্যাত। কুমিল্লা জেলার হোমনার শ্রীমদ্দি গ্রাম বাঁশের বাঁশির জন্য বিখ্যাত। শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশি র্বতমানে দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।

প্রশাসনিক এলাকার দিকে তাকালে কুমিল্লায় ২৭ টি ওয়ার্ড, ১টি সিটি র্কপোরেশন, ১৭টি উপজেলা, ১৮টি থানা, ৮টি পৌরসভা, ১৯২টি ইউনিয়ন, ৩,৬৮৭টি গ্রাম ও ১১টি সংসদীয় আসন রয়েছে।

শিক্ষার দিকে তাকালেও ভালোবাসার কুমিল্লা অনেকটাই এগিয়ে। কুমিল্লা জেলার সাক্ষরতার হার ৬০.০২%। কুমিল্লা জেলায় রয়েছে: বিশ্ববিদ্যালয় (সরকারি) - ১টি,(বেসরকারি)- ২টি,বিশ্ববিদ্যালয় (র্আমি নিয়ন্ত্রিত) - ১টি,মেডিকেল কলেজ (সরকারি) - ১টি, মেডিকেল কলেজ (বেসরকারি) - ৩টি, মেডিকেল কলেজ (র্আমি নিয়ন্ত্রিত) - ১টি , কামিল মাদ্রাসা - ১০টি , ক্যাডেট কলেজ - ১টি,সরকারি পলিটেকনিক - ১টি,কলেজ (সরকারি)- ১০টি,বাণিজ্যিক কলেজ (সরকারি)-২টি কলেজ (বেসরকারি) - ৩১টি, ফাজিল মাদ্রাসা - ৬৩টি,শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ - ১টি, পিটিআই - ১টি, এইচএসটিটিআই - ১টি , মেডিকেল এসিসটেন্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (সরকারি) - ১টি,মেডিকেল এসিসটেন্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বেসরকারি) - ১টি, স্কুল এন্ড কলেজ - ৯০টি, আলিম মাদ্রাসা - ৭৫টি,মাধ্যমিক বিদ্যালয় (সরকারি) - ৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় (অন্যান্য) - ৫৮০টি , দাখিল মাদ্রাসা - ২৩৩টি,নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৫৫টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১৩৩০টি ইবতেদীয়া মাদ্রাসা - ৭১টি

যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকেও কুমিল্লা অনেক এগিয়ে আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এর মতো মহাসড়ক কুমিল্লার বুকপথ ধরেই গিয়েছে। আকাশপথ হিসেবে কুমিল্লা বিমানবন্দর কুমিল্লা জেলার যোগাযোগের মাধ্যম। এই বিমানবন্দর এক্সর্পোট ইমর্পোট জোন (ইপিজেড) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সড়কপথ ধরে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে বিভিন্ন এসি, নন-এসি বাস আরও অনেক ধরনের যানবাহন যাতায়াত করে থাকে। দেশের প্রধান জাতীয় সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লা শহরের উপর দিয়ে গেছে। এছাড়া এ জেলার সাথে সংযুক্ত অন্যান্য গুরুত্বর্পূণ সড়কগুলোর মধ্যে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক, কুমিল্লা-বাবুরবাজার স্থল বন্দর সংযোগ সড়ক, কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ সড়ক, লালমাই-লাকসাম-সোনাইমুড়ি সড়ক। তাছাড়াও রয়েছে আরও গুরুত্বপূর্ন অনেক সড়ক।

রেলযোগাযোগে কুমিল্লা জেলায় যাতায়াত করা যায়। রেলপথ হিসেবে কুমিল্লায় রয়েছে কুমিল্লা রেলস্টেশন ও লাকসাম রেলস্টেশন। এ দুটি হচ্ছে জেলার প্রধান দুইটি রেলস্টেশন। তাছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে রেললাইনে যোগাযোগ করা যায়। অন্যান্য রেলস্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন, গুণবতী রেলস্টেশন, হাসানপুর রেলস্টেশন, নাওটি রেলস্টেশন, রাজাপুর রেলস্টেশন, শশীদল রেলস্টেশন, সালদানদী রেলস্টেশন।

নদীপথেরও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে এই কুমিল্লা জেলায়। কুমিল্লা জেলার সাথে নদীপথেও অনেক সহজে যোগাযোগ করা যায়। তবে সড়ক ও রেল যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় নদীপথে শুধুমাত্র আঞ্চলিক যোগাযোগ হয়ে থাকে। এ জেলার একমাত্র নদীবন্দর দাউদকান্দি বাউশিয়া নদীবন্দর এবং এ জেলায় মোট ৩৪টি ফেরীঘাট রয়েছে।

কুমিল্লা জেলার যত নদনদীঃ- প্রধান নদ-নদীগুলো হল: মেঘনা নদী, গোমতী নদী, তিতাস নদী, ডাকাতিয়া নদী, কাঁকড়ি নদী, ছোট ফেনী নদী, আড়চি নদী, ঘুংঘুর নদী এবং সালদা নদী।

অর্থনীতিতে কুমিল্লাঃ- কুমিল্লা জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এ অঞ্চলের দারিদ্রতার হার ৫৬.৬%। এই জেলার অর্থনীতি ধীরে ধীরে গড়ে উঠছেে কৃষির মাধ্যমে। এ জেলার প্রায় ১১.৬% মানুষ ব্যবসার সাথে জড়িত। এখানে ২টি শিল্প নগরী রয়েছে। কুমিল্লায় রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড এর মূল স্থাপনা এবং গ্যাস ফিল্ড।

কুমিল্লার রয়েছে অনেক অনেক আকর্ষনীয় মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় স্থান। উল্লেখিত যত দর্শনীয় স্থানঃ-র্অজুনতলা মসজিদ,আনন্দবিহার,ইটাখোলা মুড়া,উজিরপুর টিলা,কুটিলা মুড়া,কুমিল্লা চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন,কুমিল্লা জগন্নাথ মন্দির,কুমিল্লা বিমানবন্দর,কুমিল্লা ভিক্টােটিয়া সরকারি কলেজ,কুমিল্লা রেলস্টেশন,কুমিল্লা সেনানিবাস,কোটবাড়ি, চন্ডী মুড়া,জগন্নাথ দীঘী, লাল মাঠ,জাহাপুর জমিদার বাড়ি,র্ধমসাগর,নজরুল ইন্সটিটিউট,পাক্কা মুড়া, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী,মজিদপুর জমিদার বাড়ী ,ময়নামতি,রাজেশপুর ইকো র্পাক,ময়নামতি প্রাসাদ ও মন্দির,রূপবান কন্যা (রূপবানী) মুড়া,লতিকোট মুড়া,লাকসাম রেলওয়ে জংশন,শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম,শালবন বৌদ্ধ বিহার।

তথ্যঃ গুগল
লেখা : সাজিদ

Leave a Comment