বুর্জ খলিফার যতো অবাক করা তথ্য

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • মার্চ ২০, ২০১৮

মিশরের পিরামিড থেকে চিচেন ইৎজা, টুইন টাওয়ার থেকে বুর্জ খলিফা পর্যন্ত মানুষ সবসময় চেয়েছে আকাশকে ছুতে। সেই আকাশ ছোয়ার লড়াই এ বিজয়ী এখন পর্যন্ত বুর্জ খলিফা। আজকের লেখা বুর্জ খলিফা নিয়ে। বুর্জ খলিফা বর্তমানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন ২০০৮ সাল থেকে। যদিও ভবনটি ২০১০ সালের ৪ঠা জানুয়ারী উদ্বোধন করা হয়। গগনচুম্বী এই ভবনটি আরব আমিরাতের দুবাই শহরে অবস্থিত এবং উদ্বোধন করেন তৎকালীন দুবাই এর শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাক্তুম।

ধরুন আপনি কোনো একটি স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখান থেকে ৬০ মাইল দূরে অবস্থিত কোনো জিনিস কি আপনার দেখতে পাওয়ার কথা? অবশ্যই না। কিন্তু শুনে আশ্চর্য হতে হয় যে, এই ‘বুর্জ খলিফা’ ভবনটি ৬০ মাইল বা ৯৫ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায়। তাও যেনতেন ভাবে নয়, খালি চোখে একেবারে স্পষ্ট দেখা যায়। বিশ্বের সর্বোচ্চ এই ভবনটি তৈরি করতে যে পরিমাণ গ্লাস ও স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো একসাথে রাখতে ১৭টি স্টেডিয়ামের সমান জায়গা প্রয়োজন হবে। ভবনটি তৈরি করতে যে পরিমাণ ইট-বালি-সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে তা দিয়ে ১২৮৩ মাইল লম্বা দেওয়াল তৈরি করা যাবে। আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়। এবার আসুন ভবনটি সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য জেনে নিই।

বুর্জ খলিফার” নির্মাণকাজ ২০০৪ সালে শুরু হয় এবং ২০০৯ সালে ভবনের কাজ শেষ হয়। সুবিশাল এই ভবনটি তৈরীতে ইট,বালি,রড,সিমেন্ট ছাড়াও গ্লাস ও স্টিল ব্যবহার করা হয়। ভবনটিতে যত পরিমাণ গ্লাস এবং স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে  সেগুলো একসাথে রাখতে প্রায় ১৭টি স্টেডিয়ামের সমান জায়গা দরকার হবে। আর যে পরিমাণ ইট-বালি-সিমেন্ট খরচ হয়েছে তা দিয়ে প্রায় ১২৮৩ মাইল লম্বা দেওয়াল বানানো যেত। বুর্জ খলিফা ভবনটিতে ৫৪টি লিফট বা এলিভেটর রয়েছে যার গতি ঘন্টায় ৪০ মাইল। বুর্জ খলিফা ভবন নির্মাণে লোহা ব্যবহার করা হয় মাত্র ৪ হাজার টন যা পরিমাণে ছিল এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের অর্ধেক। যদিও উচ্চতায় বুর্জ খলিফা এম্পায়ার স্টেট এর দ্বিগুন।

সম্পূর্ণ ভবনটি তৈরি করতে মোট ব্যয় হয় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী টাকায় এর পরিমাণ এগার হাজার ছয়শত সত্তর কোটি টাকা। ‘বুর্জ খলিফা’র বাইরের প্রাঙ্গনে দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা রয়েছে। এই ফোয়ারটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে বাংলাদেশী টাকায় এক হাজার ছয়শত একানব্বই কোটি আটত্রিশ লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার। ‘বুর্জ খলিফা’ ভবনটি তৈরি করতে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। বিলাস বহুল এই ভবনের একেকটি কামরা কেনার জন্য বর্গ মিটার প্রতি ক্রেতাদের গুনতে হয়েছে গড়ে ৩৭,৫০০ মার্কিন ডলার। এত উচ্চ মূল্য থাকা স্বত্বেও দুই বছরের মধ্যেই ৯০০ কামরার প্রায় সবকটিই বিক্রি হয়ে গেছে। বুর্জ খলিফায় প্রতি বর্গফুট জায়গার মাসিক ভাড়া অফিস-আদালতের জন্য চার হাজার ডলার বা দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা।

বুর্জ খলিফায় আমেরিকানদের বসবাসের অগ্রাধিকার বিশেষভাবে লক্ষনীয়। তাদের জন্য এই ভবনের ৯ থেকে ১৬ তলা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া ভবনের ১৯ থেকে ৩৭ তলা এবং ৭৭ থেকে ১০৮ তলায় থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রায় ৯০০ অ্যাপার্টমেন্ট আছে ভবনে। ১৫৮তলায় আছে একটি মসজিদ; ৪৩তম এবং ৭৬তম তলায় আছে দুটি সুইমিং পুল। আরো আছে ১৬০ কক্ষবিশিষ্ট একটি হোটেল। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট অফিস রয়েছে বুর্জ খলিফার বিভিন্ন ফ্লোরে। বুর্জ খলিফার ১৫৯ তলা পর্যন্ত অনায়াসে যাওয়া সম্ভব হলেও, এর উপরে যেতে হলে আপনাকে অক্সিজেন সাথে নিয়ে যেতে হবে। অনেক উঁচুতে অবস্থান হওয়ার কারনে সেখানে অক্সিজেন পৌছাতে পারে না। ভবনের ১৬০ থেকে ২০৬ তালা পর্যন্ত কেউ বাস করে না। এই ফ্লোরগুলো কারিগরি কাজের জন্য ব্যবহার হয়। 

মজার ব্যাপার হচ্ছে- বুর্জ খলিফা থেকে সূর্য সবার আগে দেখা যায়! বুর্জ খলিফায় বসবাসরত অধিবাসীরা দিনের শুরুতে সমতলের অধিবাসীদের চেয়ে আগে সূর্য দেখেন এবং দিনের শেষেও সমতলের অধিবাসীদের চেয়ে তারা বেশি সময় সূর্য দেখতে পান। এ জন্য তাদের কাছে দিনের পরিধি অনেক বেশি। আর একটি চমকপ্রদ তথ্য হোল – বুর্জ খলিফা টাওয়ারটি আত্মহত্যার জন্য রেকর্ড গড়েছে। ভবনটি চালু হওয়ার ১৮ মাস পর জনৈক ব্যক্তি এই অট্টালিকার ১৪৬ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন। লাফিয়ে পড়ার পর লোকটি ৩৮ তলায় এসে পড়ে নিহত হন। এটিই হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করার রেকর্ড। এর পরও অনেকেই এই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। ফলে অনেকেই ভবনটিতে অভিশাপ আছে বলে মনে করেন।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment