মালদ্বীপকে টুনা কন্যাও বলা হয়, কেন জানেন?

  • ইয়াসিন প্রধান সাজিদ 
  • এপ্রিল ৯, ২০১৮

মালদ্বীপ। নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, প্রকৃতির কন্যা, সৌন্দর্যের রানী, পৃথীবির অন্যতম নয়নাভিরাম ও অপরুপ রুপের দেশ মালদ্বীপ। মাছ এর মধ্যে পৃথীবির সবচেয়ে উন্নতমানের টুনা মাছ এই মালদ্বীপে পাওয়া যায় বলে অনেকেই মালদ্বীপকে টুনা কন্যাও বলে। মাছও মালদ্বীপের অর্থনীতিতে অনেক প্রভাব রাখে।

আল্লাহ তা'আলা দুহাত ভরে প্রকৃতির রুপে কল্পনাতীতভাবে সাজিয়েছেন মালদ্বীপকে। এই রুপ দুনিয়াজোড়া মানুষকে মুগ্ধ করে রাখে ও টেনে আনে। মালদ্বীপের মূল আকর্ষন হলো এর সরল, শান্ত ও মনোরম পরিবেশ, আদিম সমুদ্র সৈকত ক্রান্তীয় প্রবাল প্রাচীর। পানির রং নীল, বালির রং সাদা আর সমুদ্রের রং অতি পরিস্কার। ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ। দেশটির রাজধানী মালে। এক হাজার দুশো'র বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই অপরুপ মালদ্বীপ। তবে এর মধ্যে ২০০টি দ্বীপ বাসযোগ্য।

ছোট ছোট দ্বীপগুলো যেন একেকটি নানান রঙ্গের মাছের আ্যকুরিয়াম। পৃথীবির সবচেয়ে নিচু দেশ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মালদ্বীপের সর্বোচ্চ উচ্চতা ২.৩ মিটার, গড় উচ্চতা ১.৫ মিটার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে মালদ্বীপের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সর্বদা এই দ্বীপের পুরোপুরি তলিয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। এশিয়ায় এই মালদ্বীপ জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক দিয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মাথাপিছু আয় এর দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে এই মালদ্বীপ।

মধ্যযুগের দিকে ইবনে বতুতা ও অন্যান্য আরব পর্যটকেরা এই অঞ্চলকে" মহাল দিবিয়াত" নামে উল্লেখ করেন। বর্তমানে এই নামটিকেই মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে লেখা হয়। মালদ্বীপের কিছু সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:

রাজধানী:-মালে, ভাষা:-মালদ্বিভিয়ান, ধর্ম:- ইসলাম, প্রেসিডেন্ট:- আবদুল্লাহ ইয়ামিন।

স্বাধীনতা লাভ:- ২৬ জুলাই ১৯৬৫

উক্ত তারিখে ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ন স্বাধীনতা লাভ করে মালদ্বীপ। ১৯৬৮ সালে সালতানাতে মালদ্বীপ থেকে রিপাবলিক মালদ্বীপে পরিণত হয়।

আয়তন:- ২৯৮ কিঃমিঃ

জনসংখ্যা:- ৩লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ জন

সমুদ্রের গর্জন আর বায়ুপ্রবাহ তাদের কন্ঠস্বর ক্ষনে ক্ষনে পরিবর্তন করে পর্যটকদের অশান্ত মনকে শান্ত করে। হতাশা দুর করে সবাইকে আবার উচ্ছলতা আর মুগ্ধতায় ফিরিয়ে দেয় মনপ্রাণ। যারা সমুদ্র পছন্দ করে, প্রকৃতির সুশোভিত ও অপরুপ সৌন্দর্যের সুরা পান করতে চায়, সমুদ্রের অবগাহনে নিজেকে স্নান করাতে চায়, নির্জনতায় হারিয়ে যেতে চায় তাদের জন্য মালদ্বীপ এক আদর্শ স্থান। আকর্ষনীয় এই স্থানের অনেক দ্বীপেই বাংলাদেশী শ্রমিকেরা রয়েছে। তারা মাছ ধরা, কৃষি কাজ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট মেরামতসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, দোকান, অফিস-আদালত, বাসা-বাড়িতে কাজ, গাড়ি ও নৌকা চালনা ছাড়াও হোটেল, রেস্তোরা ও রিসোর্টেও কাজ করে।

বাংলাদেশের মানুষেরাই মালদ্বীপে প্রথম কৃষি কাজ শুরু করে। মালদ্বীপের রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের শ্রমিকের অবদান ৬০ ভাগ। সেখানের অনেক মালিকেরা বাংলাদেশী শ্রমিকের সততা ও কর্মকান্ডে এতটাই মুগ্ধ হয়েছে যে তারা তাদের সমস্ত কাজের দায়দায়িত্ব বাংলাদেশিদের হাতে দিয়ে দিয়েছে। রাজধানী মালে, হুলহলে বিমানবন্দর, শহর হলুমালে, বিলিংগালে, ধোনিদো, আড্ডুসহ বড় বড় শহর, হাসপাতাল অবকাশ যাপনকেন্দ্রগুলোতে বাংলাদেশী শ্রমিকের আধিক্য। এগুলোর উন্নয়নের বেশিভাগই সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশী শ্রমিকের মাধ্যমে। এখানে অবস্থিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রায় তিন শ এরও অধিক।

বিদেশি পর্যটকদের কাছে কাজ করে বাংলাদেশীরা সুনাম অর্জনসহ মাসিক প্রায় ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। এ ক্ষেত্রে অবকাশ যাপনকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সাথে বাংলাদেশ দূতাবাস সুসম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশে বিভিন্ন সামাজিক ও জাতীয় উৎসবে দূতাবাসের আমন্ত্রণের পাশাপাশি চাকরিমেলা, সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ থেকে পর্যটন শিল্পের প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে তাদের অনুরোধ করতে পারে।

এছাড়া বাংলাদেশের কক্সবাজার, সিলেট, বান্দরবান, অন্যান্য দর্শনীয় ও মনোরম স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষনীয়। এই বিষয়ে তাদের ধারনা দেওয়া ও পরিচিতি করানো যায়। প্রতি শুক্রবার বিকেলবেলায় মালদ্বীপের বিভিন্ন জায়গাগুলো মানুষের ভিড়ে হৈ হৈ অবস্তায় পরিনত হয়। রিপাবলিক স্কয়ার(কবুতর পার্ক) এখানে ঘটে সবার মিলনমেলা। এয়ারপোর্ট জেটি(ফেরি টার্মিনাল), গোসল পার্ক, কৃত্রিম বিচ, সুনামি টাওয়ার(দরবারুগে) হয়ে ইন্ধিরা গান্ধী হাসপাতালের পিছন পর্যন্ত এবং মাজেদিয়া রাস্তা সব জায়গায় প্রবাসী বাঙ্গালীরা গিজগিজ করে শুক্রবারের বিকেলে।

মাঝে মাঝেই মনে হয় এ যেন বাংলাদেশের কোনো সমুদ্র সৈকত। রাজধানী মালেতে কখনো কখনো বাংলাদেশের দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবার কখনো প্রবাসীদের উদ্যেগে হয় নানা রকম নাচ-গান, নাটক, যাত্রাপালা, বাউল সংগীত ও ওয়াজ মাহফিল। সেখানে বাংলাদেশ সবুজ দল, কুমিল্লা, লাল দল, বিবাড়িয়া নালেও ক্রিকেট ও ফুটবল টিম রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে বাংলা ভাষাও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কৃত্রিম বিচে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তাল ঢেউয়ের উপর চলে ছেলেমেয়েদের জলক্রীড়া।

যখন সুনামি টাওয়ার ঘেষে বিশাল এলাকা জুড়ে মায়াবী গুধোল শুরু হয়, তখন শুরু হয় সুর্যাস্ততা, রাতের নিস্তব্ধতা, পর্যটকরা তখন আসেন গোসল পার্কে স্নান করতে, নিজেকে বিলীন করে দিতে নীলাভ প্রকৃতিতে তখনই প্রবাসী বাঙ্গালীরা মালদ্বীপের লোকাল খাবার কুরুম্বা(ডাব), খিল্লি(পানের খিলি), মনু ভিলা(কাচা আম), আমড়া, শুকনা মাছের পরসা নিয়ে টোং পেতে বসে যায় সমুদ্রের পাশে। তখন ঐ দৃশ্যটি দেখতে অনেকটা কক্সবাজারের বা শাহবাগের আড্ডার মতো হয়। সন্ধ্যা হতে মধ্য রাত পর্যন্ত চলতে থাকে মাগু-এর বাবরি দুলানো বাহারি রঙ্গের চুলের স্থানীয় তরুণীদের সাথে বাংলাদেশী তরুণদের বাইক রেস।

সমুদ্রের শো শো আওয়াজের সাথে মোটর বাইকের ভো ভো শব্দ মিশে যায় একসাথে । সমস্ত এলাকা, পরিবেশ ও চলাফেরা দেখেই মনে হয় এ যেন বাংলাদেশের-ই সমুদ্রসৈকত, বাংলাদেশেরই কোনো এক অংশ। সব মিলয়ে বলা যায় মালদ্বীপ - সোনার বাংলা ভারত মহাসাগরের বুকে এ যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অনুভব এখন মালদ্বীপেও খুব ভালোভাবে নেওয়া যায় শুধু তার পরিবেশের কারনে তার প্রাকৃতিক রুপের কারনে। মালদ্বীপ হলো দ্বীপরাজ্য। মালদ্বীপ আজ পৃথীবির এক আকর্ষনীয় রানী, যে তার ক্ষমতা দিয়ে মিটিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের হাজারো রকম চাহিদা, দিয়ে যাচ্ছে অফুরন্ত ভালোবাসা।

Leave a Comment