পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী জায়গা এই ভুটান। কিন্তু কেন?

  • ইয়াসিন প্রধান সাজিদ 
  • এপ্রিল ৯, ২০১৮

ভুটান পৃথীবির সবচেয়ে সুখী জায়গা এই ভুটান। যে দেশে পর্যটকেরা কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় ঘুরতে যায়না। ভুটানের প্রত্যেক জায়াগায়-ই অপরুপ সৌন্দর্য বিদ্যমান। ছোট্ট এই দেশটিতে নম্রতা, ভদ্রতা, বিনয় ও শান্তিতে ভরপুর। এদেশে অপরাধ বলতে ছোটখাটো ঝগড়া-বিবাদকেই বুঝায়। বাংলাদেশ এবং ভুটান আঞ্চলিক প্রতিবেশী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকৃত স্বরুপ ভুটান রাজ্যই প্রথম দেশ ছিল। দুইদেশের মধ্যকার সম্পর্ক দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী। বর্তমানে উভয় দেশ একটি কৌশলগত উন্নয়ন অংশীদারিত্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, জলশক্তি, শুল্কহীন বাণিজ্য, পরিবহন।

ভুটানে শুধুমাত্র বাংলাদেশ এবং ভারতের-ই স্থায়ী দূতাবাস রয়েছে। ১৯৭১ সালের ৬-ই ডিসেম্বর সকালে ভুটানের রাজা বাংলাদেশের সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির কাছে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। সেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি বাহীনির পরাজয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর। নতুন দেশকে বিশ্বে পরিচিতি করার জন্য ভুটান-ই প্রথম পদক্ষপ নিয়েছিল। ভুটানে ৫০,০০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যা, বাংলাদেশের শক্তির অভাবমুক্ত বাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে সরবরাহ করতে পারবে।

সাড়ে সাত লাখ মানুষের ছোট্ট এই দেশ ভুটান। এই দেশের প্রধাণ আয়ের উৎস পর্যটন শিল্প আর বিদ্যুৎ। এই দেশের মানুষ প্রায় সবাই-ই বিত্তশালী আর শিক্ষিত। আকাশপথ বা স্থলপথ যেকোনো ভাবেই ভুটানে আসা-যাওয়া করা যেতে পারে বাংলাদেশ থেকে। পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খুব সহজেই On Arrival ভিসা পাওয়া যায়। অতুলনীয় কারুকার্যময় এই পারো বিমানবন্দর। নীলচে পাহাড়ের সারিগুলো সেই বিমানবন্দরের পরিবেশকে আরে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। এর আশেপাশের পাইন গাছেরাও রাজকীয় সবুজ পোশাকে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দাড়িয়ে থাকে নিজ নিজ জায়গায়।

Druk Airlines বাংলাদেশ এবং ভুটানের মাঝে চলাচলের জন্য এইপর্যন্ত শুধু আকাশযান-ই ব্যবহৃত হয়। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালেই দেখা যায় সাদা মেঘের ঝোপ। আকাশপথে ভুটানে যাওয়ার সময় উপভোগ করা যায় দুই পাহাড়ের মাঝখানদিয়ে চলতি বিমানের ভয়ঙ্কর রকমের ল্যান্ডিং। ভুটানে ভারতীয় মুদ্রা আর ভুটানিজ মুদ্রার মান একই। ভুটানে সুন্দর দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যদিও ভ্রমণ করতে হয়না, তবুও ভুটানের উল্লেখযোগ্য কিছু স্থান হলো:

থিম্পু(রাজধানী), Monastery, clock tower area, Budda point, Zoo, Wooden bridge, Handicraft Market । পুনাখা যাওয়ার পথে দেখা যায় Dochala pass, এই স্থান থেকে দেখা যায় Himalayan Mountain "Tiger's nest" সেখানকার একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এখানে যেতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা। ভুটানের জন্য এই জায়গাটি খুবই পবিত্র। এখানে হাফ প্যান্ট, মোবাইল, ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ নিষেধ।

ভুটানে পৌছাতে যখন বিমানের আরমাত্র কিছুক্ষনও বাকি থাকে তখন সেখানের তাপমাত্রা থাকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু নাতিশীতোষ্ণ দেশ ভুটানে পৌছাতেই তাপমাত্রা এসে যায় ২০-২৫ এর মাঝামাঝি। তখনই ভ্রমণকারীরা বুঝতে পারে যে, কেন ভুটানকে সুখের মানুষদের দেশ বলা হয়। সকল পর্যটক ভুটানে পৌছানোর পর দেখা পায় এক রুপকথার মতই সুন্দর "পারো চু"। পর্যটকেরা তখন "পারো চু"র পরিস্কার জলে পা এর কিছু অংশ ডুবিয়ে পাথর এর উপর বসে উপভোগ করতে চায় এক অসামান্য অনুভব। ভুটানের পাহাড়ি আকাবাকা রাস্তা গুলো মানুষকে নিয়ে যায় এক অদ্ভূত দ্বিধায়। রাস্তার এক পাশে উচু পাথরের পাহাড়, অন্য পাশে অসংখ্য বিন্দু বিন্দু জলকণা নিয়ে ছন্দে বয়ে চলে "পারো চু"।

পারো চু'র ওপারে তামচোগ মোনাস্ট্রী, ঐখানে যেতে অতিক্রম করতে হয় এক লোহার ঝুলন্ত সাকো। কোনটা দেখে কোনটা দেখবে এই সিদ্ধান্তেই পৌছাতে পারেনা পর্যটকেরা। শুুধু এই দৃশ্য দেখে তাদের মনে হয়ত একই গান বাজে, "লাল পাহাড়ের দেশে যা, রাঙ্গামাটির দেশে যা।" সেই রাস্তাই আবার দেখা মিলিয়ে দেয়, রুক্ষ পাহাড়, রোদ্দুর মেখে ছুটে চলা ঝিকিমিকি নদী, অচিন দেশের অদ্ভুত সুন্দর সেই ধর্মশালা।

ভুটানের খাদ্যের সময় অনেকটা নির্ধারন করা থাকে। মানে ঐ সময়ের পরে খাদ্য পাওয়াটা মুশকিল। বিভিন্ন দেশের খাবারই পাওয়া যায় ভুটানে। ভুটানের জন্য সুগন্ধি লাল চালের ভাতের সাথে এমা দাতসি, কেওয়া দাতসি, জাশামারো, ফাকশাপা, এই খাবার গুলো অত্যন্ত নামিদামী। ভুটানের রেস্তোরাগুলো সবই পারিবারিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত। পরিবারের সদস্যরাই হোটেল, রেস্তোরা নিজেরা চালায়, আলাদা কোনো কর্মী তারা রাখেনা।

ভুটানের কিংস মেমোরিয়ালে লোকজন মন্দিরের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে তাদের মন্ত্র পড়ে, আর চত্ত্বরের সময়ে অনেক পায়রা থাকে। অনেকেই চত্ত্বর দেওয়ার পর পায়রা উড়ায়। তারপর-ই মানুষ ছুটে চলে নিকটবর্তী বুদ্ধ পয়েন্টে। ধ্যানী বুদ্ধ স্থাপিত রয়েছে শহরের সবচেয়ে উচু পাহাড়ের উপর। মেঘের চাদর গায়ে জড়িয়ে পুরে শহরকে পাহারা দিচ্ছে এই বুদ্ধ। এই স্থাপনার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী, অধীর ঢেউ, পানিতে সবুজ বনানীর ছায়া, কিনারে ভিজা পাথর-এর সৌন্দর্য মানুষের চোখে একে দেয় আনমনা স্বপ্ন। এর কিছু দূরেই আছে তাশিচো জং। জংয়ের চত্ত্বরে রাজা রাণীর সম্মানে মাথায় হ্যাট, হুডি বা ছাতা দিয়ে হাটা নিষেধ।

মেঘের ঢেউ জলে, আর মেঘ পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে গলে গলে পরে ঘটছে পাহাড় ধস। পাহাড়ি উচু নিচু, আকা বাকা রাস্তার উপরে ঝুলে থাকে গাছ। পাশ দিয়ে নিচে পরে ঝিরঝিরে ঝর্না। সব মিলিয়ে এই চিত্রকেই বলা হয় ভয়ঙ্কর সুন্দর। এর কিছু কাছেই হলো পুনাখা জং। সেখানে অবস্থিত নদ নদীর সঙ্গমে ফুলে ফুলে ঢাকা আছে অসম্ভব সুন্দর মন্দির দুর্গ। মন্দিরের সামনে রয়েছে ফণিমনসার ফুল। পুনাখা জং এই রাজাদের পূজা কাজ সংঘটিত হয়।

তারপর আছে টাইগার'স নেস্ট। এখানে খারা সিড়ি বেয়ে উচুতে উঠতে হয়, আবার নিচেও নামতে হয়। অনেকেই এতো উচুতে উঠে শুধুমাত্র ঐ রোমাঞ্চকর মুহূর্ত উপভোগ করার জন্যই। সবশেষে এতটুকুই বলা যাবে ভুটান সুখের দেশ এই সম্পর্কে যে, ভুটানের কোনো জায়গাতেই জ্যাম নেই, ট্রাফিক পুলিশ নিজ হাতেই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে। কোনোরকম কোলাহল নেই। এতসব গুনাগুন দেখে অনায়াসেই বলা যায় ভুটান আসলেই সুখী মানুষের দেশ। নিজের মন, মেজাজ সবকিছুই পরিষ্কার রাখতে ভুটানের ক্ষমতার কোনো তুলনা নেই। মানুষকে মুহুর্তেই সুখ দিতে পারে এই ভুটান। অপরুপ সৌন্দর্যের অধীকারি ভুটান আজ বিশ্বে অন্যতম উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত।


 

Leave a Comment