এক তরুণীর নামে ঝর্ণা রয়েছে নেপালে। জানুন বিস্তারিত 

  • ইয়াসিন প্রধান সাজিদ 
  • এপ্রিল ২১, ২০১৮

হিমালয়ের দেশ, সবুজের দেশ, ছুটি উপভোগের জন্য সবকিছু প্রাপ্তির দেশ "নেপাল"। অসাধারণ, সুন্দর, যেন কল্পনা করা আকা ছবির মতো এই নেপাল। সেখানে হ্রদের ধারে ধারে রয়েছে মন মুগ্ধ করার মতো, বিলাসি প্রাণ জুড়ানোর জন্য সবুজের হাতছানি, জলপ্রপাতের কলকল ধ্বনি।
নেপালে রয়েছে ঐতিহাসিক অনেক নামী মন্দির। পুরো নেপাল জুড়েই রয়েছে যতো মুগ্ধতাময় স্থান ও বিষয়বস্তু। উল্লেখযোগ্য কিছু হলো: মন্দির, স্বচ্ছ হ্রদ, সারি সারি সবুজ ভ্যালি, পাহাড়, বণ্য সংরক্ষন কেন্দ্র, রাজপ্রাসাদ।

নেপালে ঘুরার উপযুক্ত সময় হলো সেপ্টেম্বর - মার্চ। আমাদের দেশ থেকে নেপাল যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। নেপালে টুরিস্টদের জন্য রাজধানী কাঠমুন্ডুতে ছোট একটি এলাকা রয়েছে-"থামেল"। থামেলেই টুরিস্টরা "ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট" এ নেমে সাথে সাথে যায়। এই জায়গাটি টুরিস্টদের জন্যই করা। থামেলের রাস্তার ধারে ধারে একের পর এক দোকানগুলো রঙে রঙে রঙীন হয়ে থাকে। টুরিস্টদের জন্য বাহারি রঙের কাপড় দিয়ে সেজে থাকে দোকানগুলো।

থামেলের চারপাশে অনেক অনেক টুরিস্ট ঘুরে। সকল টুরিস্টরা কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘুরতে থাকে বাহারি পসরার সামনে দিয়ে। এই রাস্তার ধার দিয়েই হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝেই দেখা মিলে রেস্টুরেন্ট, বার, ক্যাফে। তার ফাঁকে ফাঁকেই দেখা মিলে যাবে লাইভ মিউজিক এবং ডান্স বারের মিউজিকের। আবার নেপালবাসীরা তাদের দেশের অনেক সুর তুলে ধরে টুরিস্টদের সামনে। সব মিলিয়ে থামেলেই উপভোগ করতে পারবেন এক অসাধারন মূহুর্ত। 

নেপালের এক অদ্বীতিয় জায়গা "পোখারা"। যাকে বলা হয় নেপালের রাণী। এটি অন্নপূর্ণা পর্বত রেঞ্জের উপাত্যকা, রাজধানী কাঠমুন্ডু থেকে এর দূরুত্ব ২০০ কিঃমিঃ। যাবার সময়ে অপরুপ সেই আঁকা বাঁকা পথ দেখে তখন মুগ্ধ হওয়া শুরু হয়, তখন একসাথেই বাংলাদেশের বান্দরবান যাওয়ার সময় নীলগিরি পথটাও অনুভবে এসে যেতে পারে। আঁকা বাঁকা পথে ঘুরতে ঘুরতে চারপাশে শুধু উঁচু উঁচু পাহাড় ই দেখা যায়। পাহাড়ের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে লেক। সেই এলাকার লেক, পাহাড় আর পথের এক অসাধারণ মিলন। যা একসাথে হয়ে পর্যটকদের সৌন্দর্য উপভোগে পাগল করে তোলে। নেপালের প্রত্যেক কোণায় কোণায় ভরপুর রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নেপালের কিছু কিছু দৃশ্য এমনই হয়ে উঠে যে, নিজ চোখে দেখার পরও কিছুক্ষণ পর সেই ছবি মোবাইলে দেখলে স্বপ্নও মনে হতে পারে। সারি সারি মটর বাইক আর নৌকাও ভাড়া দেওয়া হয় আপন মনে ঘুরে নেপাল উপভোগের জন্য। সবকিছুই ড্রাইভার বা মাঝি ছাড়া ভাড়া নেওয়া যায়, তবে সেটি নিজ নিজ পাসপোর্টের বিনিময়ে। নেপালের অতি ছোট জায়গাগুলোও হেটে দেখার মতো। একটা জায়গাও যে ছাড়বে, সেই মনোভাব টা কারো মনে আসেইনা।

পোখারার পরেই আছে ফিউয়া লেক। বোট দিয়ে ঘুরলেও লেকের ধারের সবুজ পাহাড় না ঘুরতে পারলে পর্যটকদের মনে অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। লেকের মাঝেই রয়েছে অতুলনীয় উপভোগ করার জন্য "ইনডোর রেস্টুরেন্ট ","খোলা রেস্তুোরা"। সেই জায়গার আশেপাশেই ফরেনাররা কেউ গিটার বাজিয়ে গান, ফ্রিজবি খেলা, কেনাকাটা আবার অনেকেই পিক তুলতে ব্যস্ত থাকবেই। সাধারণত পর্যটকরা এর বাহিরে কোনো কাজ করেনা নেপালের মতো দেশে অবস্থিত সময়ে। স্থায়ী অনেক রেস্টুরেন্টে নেপালের ঐতিহ্যবাহী বাহি নাচ দেখতে পাওয়া যায়।

নেপালের সূর্যোদয় আর হিমালয় দেখার জায়গা হলো সারাং কোট। ভোর অবস্থায় পরিস্কার আকাশে, স্নিগ্ধ আলোতে দেখা মিলে হিমালয়ের। মনকে অবশ করে ফেলে এই সাদা বরফাচ্ছন্ন দৃশ্য। এই স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো দৃশ্যর বর্ণনা দেওয়া যায়না। "ডেভিস ফলস" এই ঝর্ণার নামকরণ করা হয় এক তরুনীর নামে। ৫০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০০ মিটাট গভীর এই ঝর্নাপ্রবাহ। সারা বছরই এটি চলমান থাকলেও জুন-সেপ্টেম্বর এর গতি অনেকটা বেড়ে উঠে। পর্যটকরা এই ঝর্ণাটি অনেক অনেক উপভোগ করে, তবে এটি অনেক ভয়াবহ-ও। পানির স্রোত, গর্জনে পর্যটকরা আরো মেতে উঠে। আর শত শত মোবাইলে সংগ্রহ হতে থাকে ডেভিস ফলসের রুপ।

আরো আছে "ব্যাট কেভ"। তার টিকেট মূল্য ৫০ টাকা। অন্ধকার এই জায়গাতে পর্যটকেরা টর্চ বা অন্যান্য বাতি ব্যবহার করে থাকে। ব্যট কেভ এর পথেই আছে মহেন্দ্র নাথের গুহা। এর দৈর্ঘ্য দেখে অনেকটা রাক্ষসগুহাও মনে করা হয়। ঠান্ডা শীতল পানি নিয়ে বয়ে যাওয়া "সেটি রিভার", অসাধারন এই নদীটির উপভোগ অন্য কোনো নদী দিতে পারবেনা। তার পাশেই "গোরখা মিজিয়াম"। নেপালের এই জায়গাগুলো হলো অন্যতম। এর সৌন্দর্যের সাথে অন্যকিছুর তুলনাও হয়না। পর্যটকদের ভিন্ন ভাবে কিভাবে মুগ্ধ করা যায় অনেক সুন্দর ভাবেই জানে এই নেপালের স্থানগুলো। প্রথমেই বলেছিলাম নেপাল সবকিছু পাওয়ার জায়গা। আর সবকিছুর বর্ণনা দেওয়া অনেক কঠিন। তবে উল্লেখ্য আরও কিছু স্থান হলো : বেগ নাজ লেইক, পুঙ্গি গড়, ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা, ভগতপুর, নাগরকোট ইত্যাদি।

পোখারা নামের ছোট এলাকাটি নেপালকে রাণী হিসেবে আখ্যায়িত করতে অনেক ভূমিকা পালন করে। এই জায়গাটি দিচ্ছে স্রোতস্বিনী নদীর ফেনিল শুভ্র জলে রাফটিংয়ের আ্যডভেঞ্চারের সুযোগ, প্যারাগ্লাইডিং, আবার হেলিকাপ্টার দিয়ে এভারেস্ট, পাহাড় পর্বত, লেক, ঝর্ণা দেখার সুযোগ। দেখার মতো আরো অনেক অনেক জায়গা রয়েছে নেপালে। পৃথীবিতে যদি আরেকটু স্বর্গ খুজে পাওয়া যায়, তাহলে সেটা হলো নেপাল। অনন্য একটি দেশ এই নেপাল।

Leave a Comment