যে অদ্ভুত ফোবিয়াগুলো সম্পর্কে আপনার জানা উচিত

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • মে ১৫, ২০১৮

ফোবিয়া (Phobia) শব্দের অর্থ হলো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে বা কাজে আতঙ্ক কিংবা ভয় অনুভব করা। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল টার্ম। ফোবিয়া অনেক ধরণের হতে পারে। হতে পারে সোশ্যাল ফোবিয়া, হতে পারে কোনো পোকামাকড়ে ফোবিয়া, হতে পারে উচ্চতা নিয়ে ফোবিয়া, হতে পারে কোনো শব্দে ফোবিয়া ইত্যাদি। আজকে আলোচনা করবো এমন অদ্ভুত কিছু ফোবিয়া নিয়ে যা নিয়ে আমাদের চারপাশের মানুষজন প্রতিনিয়ত জীবনধারণ করে চলেছেন।

এব্লুশোফোবিয়া (ABLUTOPHOBIA) : এই ফোবিয়াতে আক্রান্ত মানুষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বা এক কথায় তারা গোসলে অনাগ্রহী। এব্লুশোফোবিয়া শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ এব্লুটারি (ablutere) থেকে। যার অর্থ ধুয়ে ফেলা বা wash off । এই ফোবিয়াটি বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে এর প্রতিকার সম্ভব। যখনই বুঝতে শুরু করা যায় এতে ভয়ের কিছু নেই, এই ফোবিয়া বিলুপ্ত হতে থাকে।


 

ব্যাক্টেরিয়াফোবিয়া (BACTERIOPHOBIA) : নামেই এই রোগের পরিচয় । ব্যাক্টিরিয়া বা জার্ম নিয়ে ফোবিয়া। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মধ্যে জার্ম বা ব্যাক্টেরিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে সর্বক্ষণ। তাই তারা অনেক বেশী পরিষ্কার পরিচ্ছনতা প্রিয় হয়। যেকোনো নোংরা বা আবর্জনাযুক্ত স্থান তারা ত্যাগ করতে চায়। বারবার হাত ধোয়া, খাবার বা পানীয় শেয়ার করে না খাওয়া, পাবলিক টয়লেট ব্যবহার না করা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। এদেরকে বাংলায় শুচিবায়ুগ্রস্ত বলা হয়ে থাকে তাদের অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণে।


 

গ্লসোফোবিয়া ( GLOSSOPHOBIA) : এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৭৫%। অর্থাৎ প্রায় ২৩৮ মিলিয়ন মানুষ এই ফোবিয়াতে আক্রান্ত। গ্লসোফোবিয়া হলো জনসম্মুখে কথা বলায় জড়তা বা ভয় অনুভব করা।  এই ফোবিয়া আমাদের অনেকের মধ্যেই বেশ লক্ষণীয়। জনসম্মুখে কথা বলতে গেলেই হাত পা কাঁপুনি, ঘামানো, হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া, শরীরে অসুস্থতা বোধ করা, কথা জড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি এই ফোবিয়ার কারণে ঘটে থাকে।


 

আয়াট্রোফোবিয়া (IATROPHOBIA) : আয়াট্রোফোবিয়া হলো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ভয় বা আতঙ্ক অনুভব করা। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সহজে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে চাই না। এক প্রকার ভয় কাজ করে। এই ভয়ের নামই হলো আয়াট্রোফোবিয়া। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সার্জারি বা কোনো মারাত্মক অসুখে ভুগলেও ডাক্তারের কাছে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। যা পরবর্তীতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত ইনজেকশনে ভয় পায়।


 

অফিডিওফোবিয়া (OPHIDIOPHOBIA) : এই ফোবিয়ার অর্থটি একটি গল্প দিয়ে বলি। এক আপুর সাথে বসে টিভি দেখছিলাম। চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে আসলো ন্যাশনাল জিওগ্রাফি। “এনাকোন্ডা” বা অজগর সাপ নিয়ে কিছু একটা দেখাচ্ছিল। হঠাৎ করেই ,আপু চিৎকার দিয়ে উঠলেন,”মা গো মা, জলদি এটা বন্ধ কর”। বলে লাফিয়ে অন্য রুমে চলে গেলেন। আমি চ্যানেলটা পাল্টেই ওনার এই ব্যবহারের কারণ জানতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম উনি “সাপ” শব্দটা উচ্চারণ করতেই অনেকটা ভয় পাচ্ছিলেন। অফিডিওফোবিয়ার অর্থ সাপে ভয় পাওয়া। টিভিতে বা সাপের কোনো ছবি দেখলেই আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে পরিবর্তন দেখা যাবে।


 

মেলোফোবিয়া (MELOPHOBIA) : দৈনন্দিন কাজের বাইরে শখ কি জানতে গেলে অন্তত ১০ জনে ৭ জন বলব গান শোনা। কিন্তু এই গান বা সংগীত নিয়েও রয়েছে অনেকের ভয়। এই ভয়ের নামই হলো মেলোফোবিয়া। কোনো মেলডি বা সংগীত তাদের প্রশান্তি নয় বরং অশান্তির কারণ হয়ে ওঠে।

তোনিত্রফোবিয়া ( TONITROPHOBIA – LATIN ) : একটি দৃশ্য কল্পনা করি, নায়ক নায়িকা দাঁড়িয়ে আছে, বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি। টানটান উত্তেজনা। সাথে সাথে বেশ জোরে শব্দ করে একটি বজ্রপাত! আর নায়িকা ভয়ে পেয়ে ধরে ফেলল নায়ককে। চলচ্চিত্র জগতের বেশ পরিচিত একটি দৃশ্য। নায়িকা বজ্রপাতে ভয় পেয়ে নায়কের কাছে যাবেনই। এই বজ্রপাতে ভয়কেই বলে তোনিত্রফোবিয়া। তোনিত্র ( Tonitro) শব্দটি গ্রীক শব্দ। যার অর্থ বজ্রপাত (Thunder) ।


 

ক্যাতসারিদোফোবিয়া (KATSARIDAPHOBIA) : এই ফোবিয়াটি অত্যন্ত সাধারণ একটি ফোবিয়া। সাধারণ বলছি কারণ নারীসমাজে এই ফোবিয়ার বিস্তার বেশী। ক্যাতসারিদোফোবিয়া হলো আরশোলা বা তেলাপোকাতে ভয়। ঠিক অফিডিওফোবিয়া আক্রান্ত মানুষের মতই ক্যাতসারিদোফোবিয়া তে আক্রান্ত মানুষের মধ্যেও তেলাপোকা নিয়ে মারাত্মক ভয় কাজ করে। জীবন্ত পোকাটি সামনে না থাকলেও কেবল এটির ছবি দেখলেই এই ফোবিয়ায় আক্রান্তরা অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করেন।


 

ক্যালিজিনোফোবিয়া ( CALIGYNEPHOBIA) : এই ফোবিয়াতে আক্রান্ত হয় পুরুষেরা। কারণ ক্যালিজিনোফোবিয়া ফোবিয়া অর্থ হলো সুন্দরী নারীর প্রতি ভয় অনুভব করা। অনেক সময় দেখা যায় কোনো সুন্দরী নারীকে পছন্দ করা সত্ত্বেও সাহস করে তাকে বলা যাচ্ছে না। কোনো এক অজানা ভয় কাজ করা শুরু করে তৎক্ষণাৎ। শুধু তাই নয়, কোনো সুন্দরী নারীকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া দূরে থাক, তার সাথে সাধারণ কথোপকথন চালাতে গিয়েও বেগ পেতে হয় অনেককে। হাত-পা কাঁপুনি, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঠান্ডা আবহাওয়াতেও শরীরে ঘাম দেওয়া ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এই ফোবিয়া আক্রান্তদের।


 

ফবোফোবিয়া (PHOBOPHOBIA) : ফোবিয়া অর্থ ভয় বা আতঙ্ক। এই ফোবিয়া নিয়েও অনেকের ফোবিয়া আছে। অদ্ভুত লাগছে? এই ফবোফোবিয়া আক্রান্তদের ধারণা তাদের মধ্যে বাসা বেঁধে আছে হাজারো ফোবিয়া। যেকোনো কাজেই তারা নতুন করে নিজেদের ফোবিয়া খুঁজে পায়। ফবোফোবিয়া তাদের স্বাভাবিক জীবযাপনকে ব্যাহত করে মারাত্মকভাবে। আক্রান্তরা সবসময় মানসিক অশান্তিতে থাকে যার ফলে তাদের মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা ও কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই ফোবিয়া থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।


 

সূত্র : youthcarnival
 

Leave a Comment