কর্মজীবী নারীর জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে দুধ পাস্তুরিত করার সহজ উপায়!

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • মে ২৬, ২০১৮

ছোট্ট শিশুকে কোন দুধ খাওয়াতে হবে—এমন জিজ্ঞাসায় যে-কেউই মত দেবেন, ‘মায়ের বুকের দুধই সেরা।’ তবে একজন মায়ের জন্য সব সময় বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের পক্ষে। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের কথা বলা যেতে পারে, যাঁদের বেশির ভাগই নারী। এসব নারী শ্রমিক মাত্র চার মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। এই ছুটি শেষে তাঁরা যখন কাজে ফেরেন, তখন বাচ্চাকে কোনো স্বজনের কাছে রেখে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

এমন অবস্থায় শিশু (শূন্য থেকে আড়াই বছর) কী খাবে? এ ক্ষেত্রে যদি মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চান, তাহলে তাঁকে ব্রেস্ট পাম্প করে তা ফ্রিজে রেখে যেতে হয়। কিন্তু ফ্রিজ ব্যবহারের ক্ষমতা অনেক নারী শ্রমিকের নাগালের বাইরে। আবার এই দুধ ফ্রিজে না রাখলে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ব্যবহার-উপযোগিতা হারিয়ে ফেলে। এমন মায়েদের জন্য সুখবর আছে। তাঁদের জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে ‘বুকের দুধ পাস্তুরিত করার মেশিন’। এ যন্ত্র ব্যবহার করা যেমন খুবই সহজ, তেমনি দামেও সস্তা। একজন মা নির্দিষ্ট ফর্মুলা অনুসরণ করে ফ্রিজ ছাড়াই বুকের দুধ বাচ্চার জন্য সংরক্ষণ করতে পারবেন।

যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা মাইক্রোওভেনের মতো। মেশিনের ভেতরের পাত্রটি সাদা মোমে (আমরা বাতি হিসেবে ঘরে যে মোম ব্যবহার করে থাকি) ভরা থাকে। তাপ দিয়ে এই মোম গলিয়ে তাতে ডোবানো হয় সিলিকন ও নাইলনে তৈরি একধরনের থলে। সেই থলেতে রাখা দুধভরা বোতল একটা প্লেট থেকে ঝুলিয়ে ডোবানো হয় গলানো মোমে। এ পর্যায়ে মোম আরও তাতানো হয়। মেশিনের ভেতরে থাকে একটি থার্মোমিটার। গলিত মোমের উষ্ণতা পাস্তুরীকরণের জন্য আবশ্যক ৭২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছার ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে বেজে ওঠে অ্যালার্ম। এই অ্যালার্ম বাজার মানেই হলো বোতলে রাখা দুধ পাস্তুরিত (জীবাণুমুক্ত) হয়ে গেছে। এরপর দুধের বোতল ওভেন থেকে বের করে ঠান্ডা হওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়। 

ঢাকার এক কফি শপে ঘটনাক্রমে চারজন মানুষের দেখা হওয়া থেকে এ আবিষ্কারের জন্ম। এঁরা হলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) শিশু পুষ্টি বিশেষজ্ঞ সাবরিনা রশিদ এবং আরও তিনজন কানাডিয়ান শিক্ষার্থী। এঁদের দুজন প্রকৌশলী—স্কট জেনিন ও জয়েশ শ্রীবাস্তব। অপরজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মাকেলা ল্যাংগলি-কলিন্স। সাবরিনা রশিদ শিক্ষার্থীদের কম খরচ ও সাধারণ প্রযুক্তির এই পাস্তুরায়ণ মেশিন তৈরির দায়িত্ব দেন, যাতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ফ্রিজ ছাড়াই বাংলাদেশের মতো উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলোয় মায়েদের বুকের দুধ শিশুদের জন্য জীবাণুমুক্ত করা যায়। খবর ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের।

সাময়িকীটি বলছে, পরীক্ষাগারে পরখ করে দেখা গেছে, সাবরিনা রশিদ ও তাঁর দলের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে মায়েদের বুকের দুধ জীবাণুমুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি এই পদ্ধতিতে মায়েদের দুধ সংরক্ষণ করলে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত জীবাণুমুক্ত থাকে, যা শিশুরা অনায়াসে পান করতে পারে। এ ছাড়া, পাস্তুরিত এই দুধ তার বেশির ভাগ পুষ্টিমানই ধরে রাখতে পারছে।

দানে পাওয়া ১০টি ব্রেস্ট পাম্পের সাহায্যে মিজ ল্যাংলি-কলিন্স ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের উদ্ভাবনটি ঢাকার ইন্টারফাব শার্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে এক কর্মশালায় পরখ করেন। শুরুতে সেখানকার কর্মচারী মায়েরা সংশয়ে ছিলেন, বলেন কারখানাটির মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান আলিয়া মাদ্রাশা। পরে সেটা বদলে যায়, যখন তাঁরা ব্যবস্থাটির সুবিধা এবং ফর্মুলার দুধ আর কিনতে না হওয়ার সাশ্রয়, দুটোই বুঝতে পারেন।

নতুন যন্ত্রটি কারখানা কর্তৃপক্ষেরও মনে ধরেছে। শিফটের শুরুতে বুকের দুধ বের করে নেওয়ার অর্থ, মা কর্মচারীরা দিনে অপেক্ষাকৃত কম অস্বস্তিবোধ করেন এবং এর ফলে আরও বেশি উৎপাদনশীল থাকেন। মায়েদের কাজে অনুপস্থিতিও মাসে পাঁচ দিন থেকে এক দিনে নেমে এসেছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা অবশ্য কারখানা মালিক আহসান কবিরের মতে, দক্ষ কর্মীদের কাজে ধরে রাখতে পারা। অন্যথায় তাঁরা হয়তো বাচ্চাদের দুধ খাওয়াতে চলে যেতেন।

কবির খান এত অভিভূত হয়েছেন যে তিনি এখন তাঁর সব কারখানায় পাস্তুরাইজ করার যন্ত্র বসাতে চান। অন্যান্য কারখানা মালিকও যন্ত্রটি চাইছেন। ড. রাশিদ ও মিজ ল্যাংলি-কলিন্স তাই নিউইয়র্কের ১০এক্সবিটা কোম্পানির সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে এই মেশিন উৎপাদন করতে যাচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের পেটেন্ট আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

সূত্রঃ প্রথম আলো 

আর/এস 

Leave a Comment