চুল, নাক, কপাল, মুখ, কান, চোখ সব কিছু দিয়েই লিখেন যিনি!

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • জুন ১০, ২০১৮

আমরা সবাই হাত দিয়ে লিখি কিন্তু শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে লেখা যায় এটা কারো জানা ছিল না। এমন অস্বাভাবিক একটি কাজ করছেন উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাটের রামকৃষ্ণ পল্লীর বাসিন্দা তথা বসিরহাট নৈহাটি এনসিএম শিক্ষানিকেতনে শিক্ষক তপন দে’। তার কাহানি রূপকথাকেও যেন হার মানায়৷ চুল, নাক, কপাল, মুখ, কান, চোখ দিয়ে লিখতে তিনি পারদর্শী৷ এ ছাড়া দু’হাত ও দু’পাা দিয়ে একই সময়ে এবং একই সঙ্গে দুটি আলাদা ভাষাতেও লিখতে পারেন৷ শুধুমাত্র বাংলা, ইংরেজি নয়, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষাতেও সাবলীলভাবে লিখতে অভ্যস্ত৷

পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষক৷ অথচ তার প্রতিভা দেখলে চক্ষুচড়ক গাছ হতে বাধ্য! ‘স্যার’কে সম্মান জানাতে কেউ কেউ তাকে এ যুগের সব্যসাচী বলে সম্বোধন করেন৷ কারও কারও মতে, তিনি সব্যসাচীর চেয়েও বেশি৷ কেন? শিক্ষক মশাইয়ের অনুরাগীদের জবাব আসে, ‘‘সব্যসাচী তো শুধু দু’হাতে এক সঙ্গে বন্দুক চালাতে পারতেন৷ আর আমাদের তপনস্যার নিজের পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে একই সময়ে একই সঙ্গে একাধিক ভাষায় লিখতে পারেন৷ এদেশে এরকম আর একটি প্রতিভাবান মানুষ খুঁজে দেখান তো?’’

শুরু ১৯৯৫ সাল৷ সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে কিশোর তপন৷ নতুন কিছু করার তাগিদ থেকে বাম হাতে লেখার চেষ্টা শুরু করেন৷ সেই পথ চলা আজও অটুটু৷ কিশোর তপন বাম হাতে লেখার অভ্যাস করে ফেলার পর আবেগে, আনন্দে সে কথা গর্বের সঙ্গে জানাতে গিয়েছিল বন্ধুদের৷ বন্ধুরা তো শুনেই অট্টহাস্য শুরু করে দেয়৷ উপহাসের সুরে তপনকে টিপ্পনি কেটে তাচ্ছিল্যের সুরে সেদিন তারা বলেছিল, ‘‘এ আর এমন কি ব্যাপার৷ বাম হাতে লেখার মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নেই৷ তুই কি পায়ে লিখতে পারিস?’’ জেদ চেপে যায় তপনের মনে৷

ইচ্ছে থাকলে যে অসাধ্য সাধন করা যায় তা হাতে কলমে করে দেখিয়েছেন তপনবাবু৷ শুধু দু’হাত-পা নয়, চুল,নাক, কপাল, মুখ, কান, চোখ দিয়েও লিখতে পারেন তিনি৷ জানেন একাধিক ভাষাও৷ স্বভাবতই, প্রতিবেশী থেকে সহকর্মী, কিংবা আত্মীয় পরিজন থেকে স্কুলের ছাত্ররা তপনস্যারকে এ যুগের সব্যসাচী বলে ডাকেন৷ কারও কারও মতে, উনি সব্যসাচীর চেয়েও বেশি কিছু৷ সেদিনের টিপ্পনি কাটা বন্ধুরাও এখন তপনবাবুকে স্যালুট করেন৷

পরিজন থেকে পড়ুয়া সকলের দাবি মেনে ‘গিনেস বুকে’ স্থান পাওয়ার জন্য লন্ডনের সংশ্লিষ্ট সংস্থায় আবেদন করেছেন৷ সংস্থার তরফে তাকে তার এই অভিনব অনুশীলন ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে৷ ইতিমধ্যেই ২০০৫ সালে ভারতের ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডে’ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি৷ এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ripley’s believe it or not এ জায়গা করে নিয়েছেন তিনি৷ দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়ান ট্যালেন্ট শো’-তে তিনি সাফল্যের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন৷ সেখানে তার অভিনব পারফরম্যান্স দেখে উদ্যোক্তারা বাহবা দিয়েছেন৷

পেশায় শিক্ষক তপনবাবু স্বপ্ন দেখেন, ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধীদের উৎসাহ দিতে তাদের জন্য তিনি একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান৷ হাত ছাড়াও সর্বাঙ্গ দিয়ে যে অনায়াসে লেখা যায় সেই অনুশীলন দেবেন ওদের৷

আর/এস 

Leave a Comment