দ্য ভিঞ্চি কোড স্রষ্টা ড্যান ব্রাউন

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • জুন ২১, ২০১৮

ড্যান ব্রাউন ২২শে জুন ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের এক্সিটারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে উঠেন। পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে তিনিই বড়। তাঁর মা কনস্টান্স (কনি) ছিলেন পেশাদার বাদক যিনি চার্চে অর্গান বাজাতেন। তাঁর বাবা রিচার্ড জি. ব্রাউন ছিলেন একজন বিখ্যাত গণিতশিক্ষক। যিনি ১৯৬৮ থেকে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফিলিপ্স এক্সিটার একাডেমিতে মাধ্যমিক গণিত পড়াতেন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

এক সময় এই বিখ্যাত লেখক, গায়ক হতে চেয়েছিলেন। ছেলেবেলায় মায়ের কাছে হাতেখড়ি হওয়া এই বিষয় নিয়ে ড্যানের আগ্রহের শেষ ছিল না। তাই পড়ালেখার পাটও চুকিয়েছিলেন সঙ্গীত বিষয়ে; কিন্তু তারপরও কেন যেন হয়ে উঠছিল না। গানের অ্যালবামগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছিল। তারপর তিনি ভাবলেন, লেখক হবেন। লেখালেখির শুরুর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে তাহিতিতে ছুটি কাটানোর সময় আমি সিডনি শেল্ডন এর লেখা দ্য ডুমসডে কন্সপিরেসি (The Doomsday Conspiracy) – এর একটি পুরোনো কপি সাগরপাড়ের একটি দোকানে পাই। বইটির প্রথম পৃষ্ঠা পড়া শুরু করলাম, এরপর দ্বিতীয় পৃষ্ঠা—এভাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমি বইটি শেষ করি। এটি শেষ করে একটি চিন্তাই আমার মাথায় আসে—আরে, এটা তো আমি লিখতে পারি! এভাবেই গল্প লেখার জগতে আমার প্রবেশ। কোথা থেকে যেন অনেক উদ্দীপনা ভর করল তার মাঝে। গিটার ছেড়ে ধরলেন কলম। এভাবেই আমরা খুঁজে পেলাম এই অসাধারণ লেখককে।

১৯৯৬ সালে তিনি লেখালেখির কাজে পূর্ন মনোযোগ দেন। ১৯৯৮ সালে তার প্রথম উপন্যাস ডিজিটাল ফোরট্রেস (Digital Fortress) প্রকাশিত হয়। প্রথম উপন্যাস ডিজিটাল ফোরট্রেস পাঠক মহলে তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও তার পরবর্তীতে ২০০০ সালে তিনি বের করেন এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস (Angels & Demons)। এই বইয়ের মাঝে তিনি তৈরী করেন তার সৃষ্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট ল্যাংডনকে। বইটি যদিও বেশি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে নি, তারপরও তিনি সায়েন্স ফিকশন ধরনের উপন্যাস ডিসিপশন পয়েন্ট (Deception Point) বের করেন। প্রথম তিন বইয়ের মত এই বইটিও পাঠক সমাজের দৃষ্টি কাড়তে অসমর্থ হয়। প্রতিটি বইয়ের ১০,০০০ কপিও বিক্রি হয়নি।

কিন্তু এরপরই তার জীবন বাঁক নেয়। দ্য ডা ভিঞ্চি কোড (The Vinci Code) লিখে তিনি রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দেন। এই বইটা তাকে এত উচ্চতায় নিয়ে যায় যে, তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি। বইটি হয় বেস্টসেলার এবং নিউইয়র্ক টাইমস এর বেস্টসেলার লিস্টে চলে আসে। এছাড়া তার আরো জনপ্রিয় কিছু বই হল ইনফার্নো (Inferno)দ্য লস্ট সিম্বল (The Lost Symbol) এবং সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত অরিজিন (Origin)। উল্লেখ্য তার তিনটি বই দ্য ডা ভিঞ্চি কোড, ইনফার্নো এবং এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস উপন্যাস নিয়ে উপন্যাসের নামে তিনটি সিনেমাও নির্মাণ করা হয়েছে। সিনেমায় রবার্ট ল্যাংডনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বিখ্যাত অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস

প্রাচীনকালের ক্রিপ্টোগ্রাফী, সিম্বল, কোড ব্রেকিং, গোপন সংঘ, ষড়তন্ত্র তত্ত্বের মিশেল- তাঁর বইগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য যা কিনা পাঠককূলকে সহজেই আকৃষ্ট করে। তাঁর লেখনির এমনই শক্তি যার ফলে পুরো বই পড়া শেষ না করা পর্যন্ত মনে শান্তি পাওয়া যায়না।

প্রত্যেক শিল্পীই নিজ নিজ কাজের জন্য আলাদা এবং আকর্ষণীয়। ড্যানও প্রতিটি কাজে তার নিজস্বতার ছবি তুলে ধরতে চান। অনেক রহস্যে ঘেরা, সিরিয়াস ধাঁচের লেখক হিসেবে তার অটোগ্রাফ যদি একটা কোড নম্বর হতো তবেও লোকে মেনে নিত। কিন্তু শিল্পী মনেরও যে নানা রঙ আছে। তাই বেশ মজার ভঙ্গিতেই অটোগ্রাফ দেন তিনি।

রহস্য পছন্দ করা এই লেখক নিজেকেও রহস্যের মাঝে ধরে রাখতে চান। তাই ১ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি করলেন বাড়ি, যেখানে আছে অসংখ্য সুড়ঙ্গ আর গিরিপথ। এমনকি ড্যান ব্রাউনের অফিস লুকানো আছে একটি পেইন্টিংয়ের পেছনে, যাতে চাপ দিলে পেইন্টিংটি সরে গিয়ে ড্যানের অফিসের পথ খুলে যায়!

ড্যান ব্রাউন ব্যক্তিজীবনে ভীষণ পরিশ্রমী। ব্যক্তিজীবনে আমরা সবাই কমবেশি অবসর কাটাতে পছন্দ করি। কিন্তু ড্যান ব্রাউনের বেলায় ঘটনা উল্টো। তিনি কখনোই ছুটি কাটান না। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে অফিস ঘরে বসে পড়ালেখা ও লেখালেখি করেন। একটানা ১০/১১ পর্যন্ত লিখে লাঞ্চ করেন। বিকেলে প্রকাশক এবং আইনজীবিদের সাথে আলাপসালাপ সেরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। রহস্য পছন্দ করলে যে তিনি রোমান্টিক হবেন না, এমনটা ভাবা বোকামি। প্রায় সব রাতই তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে বের হোন। এমনকি “১৮৭ মেন টু এভয়েড: অ্যা সারভাইভাল গাইড ফর রোমান্টিক্যালি ফ্রাস্ট্রেটেড”, (১৯৯৫ সালে প্রকাশিত) ড্যানিয়েল ব্রাউন ছদ্মনামে তার স্ত্রীর সাথে যৌথভাবে বইটি লিখেন। এই ধনী লেখক বছরে প্রায় ১৪০ মিলিয়ন ডলার আয় করেন।

আর/এস 

Leave a Comment