বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী শীর্ষস্থানীয় তরুণ বিলিয়নিয়ার কারা?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • নভেম্বর ১১, ২০১৮

বিলিয়নিয়ার হন কারা? একজন মানুষের পক্ষে পৃথিবীর প্রথমসারীর বিলিয়নিয়ার হতে কত বছর লাগত পারে? এর কোন সঠিক উত্তর নেই। বিলিয়নিয়ার হতে সময় বা বয়স কোন ফ্যাক্ট না। আমরা এমন অনেক বিলিয়নিয়ারের ইতিহাস জানি, যারা সব কিছু শুরু করেছেন শুন্য থেকে। আবার অনেকেই পরিপক্ক হওয়ার আগেই উত্তরাধিকার সূত্রে, পারিবারিক ব্যবসায়ী হিসেবে কেউবা প্রযুক্তির বিজনেস দিয়ে পেয়েছেন বিলিয়নিয়ারের তকমা। ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী বিলিয়নিয়ারের বয়স মাত্র ২২ বছর এবং তালিকায় দশম স্থানে থাকা ব্যক্তিটির বয়সও ৩১ বছর।  ৯০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদের মালিক জেনার সম্প্রতি ২১ বছরে পদার্পণ করেছেন।

৪০ বছর বয়সও হয়নি এমন বিলিয়নিয়ার আছেন ৬৩ জন। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২৬৫ বিলিয়ন ডলার। সবে বিশ বছর পার করা নরওয়ের এক মেয়ে এখনো  পরিবারের কোম্পানির সাথে যুক্ত না হয়েও ওঠে এসেছেন শীর্ষ বিলিয়নিয়ারের তালিকায়। এর ব্যতিক্রমও আছেন। অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন নিজস্ব প্রচেষ্টায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিষ্ঠাতা ইভান স্পিগেল এবং ববি মারফি।

বর্তমান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী  তরুণ-তরুণীদের পরিচয় নিম্নরুপ-

আলেকজান্দ্রা অ্যান্ডারসন ও ক্যাথেরিনা অ্যান্ডারসন : নরওয়ের অধিবাসী দুই বোন আলেকজান্দ্রা অ্যান্ডারসান ও ক্যাথেরিনা অ্যান্ডারসন এর বাবা জোহান এইচ অ্যান্ডারসন ফার্ড এবং একটি বৃহৎ তামাক  প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি ২০০৭ সালে তার কোম্পানীর ৪২.২ শতাংশ করে মালিকানা দুই মেয়ে আলেকজান্দ্রা ও ক্যাথেরিনার মধ্যে ভাগ করে দেন। আলেকজান্দ্রা অ্যান্ডারসনের বয়স মাত্র ২২ বছর। তিনি ১.৪ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক হয়ে ওঠে আসেন শীর্ষ বিনিয়নিয়ারের তালিকায়। তার প্রিয় কাজ ঘোড়দৌড় নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তিনি। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় নরওয়ের তিনবারের চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। অপরদিকে আরেক বোন ক্যাথেরিনা অ্যান্ডারসনের বয়স ২৩ বছর। তার সম্পদের পরিমাণ ১.৪ বিলিয়ন ডলার। ক্যাথেরিনাও তার বোনের মতো কোম্পানীর কোন পদে সংযুক্ত না থেকে পড়াশোনাতে দারুন মনোযোগী। তিনি বর্তমানে অ্যামস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাচ্ছেন।


আলেকজান্দ্রা অ্যান্ডারসন ও ক্যাথেরিনা অ্যান্ডারসন
 

কলিসন ভ্রাতৃদ্বয় : আইরিশ দুই ভাই জন কলিসন ও প্যাট্রিক কলিসন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০১০ সালে ‘স্ট্রাইপ’ নামক একটি প্রযুক্তি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন। তখন তাদের বয়স মাত্র বিশ বছর। আমেরিকায় সফটওয়্যার কোম্পানী প্রতিষ্ঠা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবন শুরুর আগেই তারা ইবে-তে লেনদেন প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য কাজ করে আসছিলেন। যার ধারাবাহিকতায় সফলভাবে স্ট্রাইপ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালে এই কোম্পানির বাজারমূল্য  হয় ৯.২ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তাদের এই কোম্পানীর মূল্য প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারে উপনীত হয়েছে। জন কলিসনের বয়স ২৮ বছর। তার সম্পদের পরিমাণ ১.১ বিলিয়ন ডলার। তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ স্ব-প্রতিষ্ঠিত বিলিয়নিয়ার। ২০০৯ সালে একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে এডমিশন টেস্টে সর্বাধিক নম্বর পেয়ে ভর্তি হন  হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

এর আগেই তিনি অনলাইনে লেনদেন সহজতর করার ব্যবসা শুরু করেন। জন হার্ভার্ডে পড়াশোনা শেষ না করেই তার ভাইকে নিয়ে চলে যান সিলিকন ভ্যালিতে। তার ভাই প্যাট্রিক কলিসনের। বয়স ৩০ বছর। তার সম্পদের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার। তিনি স্ট্রাইপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক এবং কোম্পানীর সাফল্যের সমান অংশীদার। বর্তমানে লেনদেন প্রক্রিয়ার সেবাকে বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসার জন্য আরও কার্যকরী করতে তিনি নির্বাহী পরিচালকের পদে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ভাইয়ের সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে তিনিও তরুণ বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় উঠে এসেছেন।


কলিসন ভ্রাতৃদ্বয় 
 

গুস্তাভ মাগনার উইটজো : কিছু মানুষ এমন ভাগ্য নিয়ে জন্মান যে, সমুদ্রসমান সাফল্যের জন্য বিন্দু পরিমাণও শ্রম দিতে হয় না। তেমনই একজন হলেন গুস্তাভ মাগনার উইটজা। তার বয়স ২৫ বছর। সম্পদের পরিমাণ ১.৯ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯১ সালে নরওয়ে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্যামন মাছ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের পুত্র হলেন তিনি। তাকে তার পিতা গুস্তাভ মাগার সিনিয়র মাছ চাষকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৭ শতাংশের অংশীদার বানান। এ ছাড়া তার রয়েছে রিয়েল এস্টেট  ও অন্যান্য প্রযুক্তি স্টার্টআপের ব্যবসা।যার ফলে তিনি হয়ে যান বিশ্বের বিলিয়নিয়ারদের একজন।


গুস্তাভ মাগনার উইটজো
 

ইভান স্পিগেল : ২৮ বছর বয়সী ইভান স্পিগেলের সম্পদের পরিমাণ ৪.১ বিলিয়ন ডলার। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোডাক্ট ডিজাইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন ইভান স্পিগেল। পাশাপাশি তিনি স্ন্যাপ ইঙ্ক. এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক। ফেইসবুকের মতো এটি একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এটির  ব্যবহারকারীরা বন্ধুদের সাথে ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করতে পারেন, যা দেখার পরপরই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হয়ে যায়। স্পিগেল ও মারফির প্রচেষ্ঠায় ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা স্ন্যাপচ্যাট এখন প্রতিদিন প্রায় দশ কোটি মানুষ ব্যবহার করেন। কোম্পানিটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার।


ইভান স্পিগেল
 

ববি মারফি : স্পিগেলের স্ন্যাপ ইঙ্ক. এর আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতার নাম হচ্ছে ববি মারফি। কোম্পানিটিকে মার্কেটপ্লেসে নিয়ে আসতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ৪.২ মিলিয়ন ডলারের মালিক ৩০ বছর বয়সী মারফি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত ও কম্পিউটেশনাল বিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করেছেন। ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী, মারফির কাছে আছে কোম্পানির ১১ শতাংশের মালিকানা। ক্যালিফোর্নিয়ায় চাকুরিরত বাবা ও ফিলিপিনো মায়ের ছেলে মারফি আমেরিকাতেই বেড়ে উঠেছেন ।


ববি মারফি
 

ওয়াং হান : ২০০৪ সালে তার বাবা ওয়াং জুনিয়াওয়ের মৃত্যুর উত্তরাধিকার সূত্রে ১.২ বিলিয়ন সম্পদের মালিক হন ওয়াং হান। ৩০ বছর বয়সে এই সম্পদ এসেছে তার বাবার প্রতিষ্ঠা করা জুনিয়াও গ্রুপের মালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে। এই গ্রুপ জুনিয়াও এয়ার এবং উক্সি কমার্শিয়াল ম্যানশন নামক একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী। হানের কাছে সাংহাইভিত্তিক বৃহৎ এই এয়ারলাইন কোম্পানিটির ২৭ শতাংশ এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটির ১৪ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে। এছাড়াও বিপণন, শিক্ষা এবং খাদ্যদ্রব্য সম্পর্কিত ব্যবসার সাথেও তিনি জড়িত আছেন।  


ওয়াং হান
 

ইভা মারিয়া ব্রাউন-লুয়েডিক : জার্মানির ইভা মারিয়া ব্রাউন-লুয়েডিক মেডিকেল সামগ্রী প্রস্তুতকারী বি. ব্রাউন মেলাসাঙ্গেন কোম্পানির ১২ শতাংশ শেয়ারের মালিক। তিনি লুডউইক থিয়োডর ব্রাউনের নিকটাত্মীয়। তার মা-ও এই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। বিভিন্ন মেডিকেল প্রযুক্তি ও সার্জিক্যাল সামগ্রী প্রস্তুতকারী এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পেছনে ইভা মারিয়ার অনেক অবদান রয়েছে।  ৩১ বছর বয়সী এই বিলিয়নিয়ারের সম্পদের পরিমাণ ২ বিলিয়ন।

লুকাস ওয়াল্টন : যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাবা জন ওয়াল্টনের মৃত্যুর পর তার সম্পদের বেশিরভাগের (বলা হয় এক-তৃতীয়াংশ) মালিক হন লুকাস। এছাড়াও ফার্স্ট সোলার এবং আরভেস্ট ব্যাংকেও তার মালিকানা রয়েছে। ৩২ বছর বয়সী লুকাসের সম্পদের পরিমাণ ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের তরুণ ধনীদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক সম্পদের মালিক। শৈশবে লুকাসের ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং এরপর থেকে তিনি তার সময় ও সম্পদের বেশিরভাগ অংশ একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিবেশের বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য ব্যয় করে যাচ্ছেন। 


লুকাস ওয়াল্টন
 

 

Leave a Comment