পৃথিবীর দামী দামী চায়ের গল্প

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • নভেম্বর ১৪, ২০১৮

কেউ চা পান করে তন্দ্রাভাব সরিয়ে চাঙা হতে, কেউবা আবার চা না খেলে ঘুমাতেই পারেন না। সর্বোপরি চা পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সকালে এবং বিকেলে চা না খেলে যেন চলেই না। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, মোড়ে মোড়ে সবখানেই চায়ের জয়জয়কার। ভোজনরসিক বাঙ্গালির জীবনে কিভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেল এই চা? আছে চমৎকার ইতিহাস। ১৬৫০ সালে চীনে চায়ের আবিষ্কারের পর ১৮০০ সালে বৃটিশদের হাত ধরে যে চা এই উপমহাদেশে এসেছিল সেই ব্রিটিশরা যখন প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে চায়ের প্রচলন শুরু করে, তখনকার দিনে বাঙালিদের চায়ের প্রতি আগ্রহী করতে যারপরনাই চেষ্টা করেছিল তারা। শুরুতে নাকি সাধারণ মানুষদের বিনামূল্যে চা পান করানো হতো। পরের কাহিনী তো সবার জানা।

আমাদের বাংলাদেশের সিলেটে মালনীছড়া চা বাগান হলো উপমহাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান। তখন থেকে চা পানের যে অভ্যেসটা ছড়িয়ে গেছে তা এখন এই স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত, পাকিস্তান কিংবা পুরো বিশ্বে চা জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আড্ডায়, দুশ্চিন্তায়, মেঘের মতো মন খারাপের দিনে কিংবা একটুখানি প্রেমে, সাহিত্যে, শিল্পে; সবখানে জড়িয়ে আছে চায়ের কোমল ছোঁয়া।

বাংলাদেশে রয়েছে একাধিক মানের, একাধিক প্রকারের চা। সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ থেকে শুরু করে উঁচু শ্রেণী, সবখানেই চায়ের কদর সমানে সমান। তবে দাম শুনলে অনেকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়তে পারে। এমনও চা আছে লাখ খানেক টাকা লাগবে শুধু এক গ্রাম কিনতে! সবচেয়ে দামী কিছু চায়ের তথ্য নিচে উপস্থাপন করা হলো- 

দা হং পাও : পৃথিবীর সবচেয়ে দামী চা দা হং পাও। এটি শুধু চা নয়, এর আছে ঔষুধি গুণও। এ ছাড়া দা হং পাওয়ে চায়ের স্বাদের পাশাপাশি রয়েছে একধরনের ফুলের স্বাদ, যা মুখে লেগে থাকে অনেকক্ষণ। চীনা ভাষায় দা হং পাও অর্থ লাল রংয়ের গাউন। প্রতি গ্রামের মূল্য প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতি কেজির মূল্য সোয়া মিলিয়ন ডলারেরও ওপরে। সত্যি বলতে, স্বর্ণের চেয়েও অন্তত ৩০ গুণ মূল্যবান দা হং পাও।চীনের এক মিং রাজার মায়ের অসুখে সব চিকিৎসা ব্যর্থ হলে, রাজার সেই মায়ের জীবন বাঁচিয়েছিল এই দা হং পাও চা। চীনের উয়ি পাহাড়ের চূড়ায় চারটি ঝোপে প্রথম পাওয়া গিয়েছিল এই দা হং পাও। বিশেষ ঔষধি গুণ সম্পন্ন সেই চা পান করেই সুস্থ হয়ে ওঠেন রাজার মা। যে পাহাড়ের চূড়ার চারটি ঝোপে দা হং পাও পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলো এখনও সংরক্ষিত আছে।


দা হং পাও
 

পিজি টিপস ডায়মণ্ড টি ব্যাগ : প্রতিটি পিজি টিপস ডায়মণ্ড টি ব্যাগের দাম মাত্র সাড়ে ১২ লাখ টাকা! কী, চোখ কপালে ওঠে গেছে। ওঠারই কথা। এটি এক ধরনের বিরল প্রজাতির সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চা এবং প্রতিটি টি ব্যাগে ২৮০ টুকরো হীরে থাকার কারণেই এত বেশি দাম। পিজি টিপসের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে, ‘লিমিটেড এডিশন’ হিসেবে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বাজারে আনা হয়েছিল। কেবল কোম্পানির ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নয়, ইংল্যান্ডে শিশুদের জন্য একটি তহবিল গঠনের জন্যেও এই বিশেষ টি ব্যাগ বিক্রি করা হয়েছিল।

পাণ্ডা ডাং চা : চীনের সিচুয়ান প্রদেশে প্রথম শুরু হওয়া এই চা চাষে ব্যবহার করা হয় পাণ্ডার মল। এই চা পৃথিবীর অন্যতম দামী চা। যার মূল্য প্রতি কেজি প্রায় ৬০ লাখ টাকার কাছাকাছি। বিশেষ চাষ পদ্ধতির এই পাণ্ডা ডাং চা পেশাদার কোনো চা ব্যবসায়ী কিংবা চা চাষীর হাত ধরে আবিষ্কার হয়নি। শুরুটা করেছিলেন এক চীনা শিল্পী। পরে তিনিই এই চায়ের পেটেন্ট নিয়েছেন।

ভিন্টেজ নার্সিসাস চা : গ্রিক দেবী নার্সিসাসের নামানুসারে এই চায়ের নামকরণ করা হয়েছে। এর বিশেষত্ব হলো, চায়ের ৬০ শতাংশ জারণ করা হয়। যত বেশি পুরনো হয় নার্সিসাস চা, ততই সুপেয় হয়। বছরের পর বছর এটা সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি দুই বছর পর তাপ দিয়ে পোড়ানো হয়। এই চায়ের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য এর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কাঠ, ফুল কিংবা চকোলেটের ফ্লেভার দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ভিন্টেজ নার্সিসাস চায়ের মূল্য প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা।


ভিন্টেজ নার্সিসাস চা
 

ইয়োলো গোল্ড টি বাডস : প্রতি কেজি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের এই চায়ের বিশেষত্ব হলো, গাছে থাকা অবস্থায় যখন পাতা গজায়, তখনই পুরো পাতায় ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী ইয়োলো গোল্ড টি বাডস বাগান থেকে বছরে কেবল একদিনই সংগ্রহ করা হয়। চায়ের পাতা সংগ্রহ করতে ব্যবহার করা হয় স্বর্ণের কাঁচি। সাতবার প্রক্রিয়াজাতকরণের পর বাজারজাত করা হয় এই দুর্লভ প্রজাতির ইয়োলো গোল্ড টি বাডস।

ব্রোকেন লিফ ব্ল্যাক টি : একমাত্র ইউরোপেই চাষ হয় এই চা এবং এটি ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো চা। বিখ্যাত ব্রোকেন লিফ ব্ল্যাক টি চায়ের মূল বৈশিষ্ঠ হলো, শুধুমাত্র চা গাছের তিন নম্বর পাতা থেকেই এই চা উৎপাদন করা হয়। যে কারণে চায়ের স্বতন্ত্র ধরনের তামাটে রং হয়। চা পানে পাওয়া যায় ফলের সুবাস । প্রতি কেজি ব্রোকেন ব্ল্যাক টি'র মূল্য প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার টাকা।


ব্রোকেন লিফ ব্ল্যাক টি
 

সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চা :  প্রতি কিলোগ্রাম সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চায়ের মূল্য বাংলাদেশি প্রায় ৩৪ হাজার টাকার কাছাকাছি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটি সবচেয়ে দামী চা। রং আর কড়া স্বাদের জন্য সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চায়ের খ্যাতি দুনিয়াজোড়া। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ফুট ওপরে হিমালয়ের কোলে ইম্পেরিয়াল চা চাষ হয়। সেই চা বাগান থেকে পাতা তোলার পর তা পাঠানো হয় ভারতের দার্জিলিংয়ে অবস্থিত মাকাইবাড়ী টি স্টেটে। সেখানে প্রস্তুত হয় এই চা।


সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চা
 

 

Leave a Comment