দশটি পরিচিত ভয় ( প্রথম পর্ব )

  • মারুফ ইমন
  • মার্চ ২০, ২০১৯

বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছে রানা। সবাই কেওক্রাডং এ উঠে যখন পতাকা হাতে উল্লাস করছে রানা তখনো পার হতে পারে নি প্রথম ধাপই। প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে সবাই নেমে এসে সমস্যার কারন জানতে চাইলো। রানা জানালো তার উচ্চতাভীতি রয়েছে। অন্যদের কাছে যেখানে পাঁচতলার ছাদে উঠে পার্টি করা মামুলি ব্যপার, রানা সেখানে যেতেই চায় না এই ভীতির জন্য। এতদিন বন্ধুরা ঠাট্টা করবে বলে সে জানায় নি। রানার মত অনেকেই আমাদের চারপাশে রয়েছে যাদের মনে অনেকদিন ধরেই জমে আছে নানান রকম ভীতি। এদের কোনটি অন্যদের জন্য নিতান্তই হাস্যকর হলেও ভুক্তভোগীদের জন্য সেটা সমস্যার কারন। এমন কিছু ভীতি যা প্রাত্যাহিক জীবনে আমাদের আশপাশের বন্ধু স্বজনরাই হয়তো বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন বছরের পর বছর, তার মধ্যে প্রথম ভাগে পাঁচটির সাথে পরিচিত হওয়া যাক।

অ্যারাকনোফোবিয়াঃ মেয়েদের মধ্যে এই ভয়টি খুবই বেশি দেখা যায় - ’মাকড়সা ভীতি‘। সাধারনত অনেকে খেলাচ্ছলে বা ভয় দেখানোর জন্য মেয়েদের মাকড়সার ভয় দেখান, আবার অনেক মেয়ে প্রচণ্ড সাহসী হলেও অজানা কারনে মাকড়সা দেখলেই একেবারে জড়োসরো হয়ে চেচামেচি শুরু করে। আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর মনে হলেও এটি অনেকের ভীতি হিসেবেই থাকে। পৃথিবীতে ৩৫ হাজারেরও বেশি জাতের মাকড়সা থাকলেও মানুষের ক্ষতির কারন হতে পারে এক ডজনের মত। তবু প্রতি তিন জনে একজন নারী আর প্রতি চারজনে একজন পুরুষ এই ভয় নিয়ে বেঁচে থাকে। এমনকি অনেকে সরাসরি নয় ছবিতে মাকড়সা দেখেও ভয়ে চুপসে থাকেন।

অফিডিওফোবিয়াঃ টিভিতে হয়তো রিমোট টিপে কখনো 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ বা 'ডিসকভারি’দেখছেন, তাতে কোনক্রমে সাপ দেখালেই অনেকে আছে চিৎকার শুরু করবে, ‘চ্যানেল পাল্টাও' বলে। আপনি হয়তো জানেন টিভিতে দেখানো সাপ এসে কাউকে ছোবল দেয়ার কোন সুযোগ নেই, তবু অনেকেই সাপ কে মারাত্নক রকমের ভয় করে। এই ভীতি কে অফিডিওফোবিয়া বলে। সাপে ভয় করাটা স্বাভাবিক, কারন এটি বিষাক্ত হলে কামড়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু যারা মাত্রাতিরিক্ত সাপের ভয় করে তাদের ঠিক কজন সরাসরি সাপের কামড় খেয়েছে? গবেষণায় দেখা গেছে, সাপে খুব ভয় পায় এমন ৩৫ জনের মাঝে মাত্র তিনজন সরাসরি সাপের কামড় খেয়েছে বা দেখেছে। সাপের ভয়টা প্রকৃতিগত, আচরণগত বা জীনগত কারনেও হতে পারে।

এক্রোফোবিয়াঃ রানার যে পাহাড়ের উঠার গল্প দিয়ে শুরু করেছি, রানার মত কিন্তু উচ্চতাভীতির মানুষ আমাদের চারপাশে নেহায়েৎ কম না। পৃথিবীতে এই ভীতি নিয়ে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা অনেক, ২৩ মিলিয়নেরও বেশি। এই ভীতিসম্পন্ন লোকেরা সাধারণত সেতু, উঁচু ভবন কিংবা টাওয়ার এড়িয়ে চলেন। জীবনে কারো ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্যও অনেকে হয়তো এই ভীতিতে আক্রান্ত হতে পারেন। আক্রান্ত মানুষটি হয়তো তার বন্ধু বা আত্নীয় কাউকে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরতে দেখেছে, এরপর থেকে সে আর কোন বাসার ছাদেও উঠেনা । এমন ট্রমা থেকে এক্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত লোক পাওয়া যায় অনেক।

অ্যারোফোবিয়াঃ বিমানে উঠেছেন, সিট বেল্ট বাধা। উড়তে শুরু করলেই খেয়াল হয় আপনি না হয় আপনার পাশের অনেক যাত্রী ভয়ে সিটে জাপটে ধরে বসে আছেন আর সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছেন। একে অ্যারোফোবিয়া বলে। সাধারনত আকাশে উড়ার ক্ষেত্রে এই ভয় দেখা গেলেও  ছোটবেলায় নাগরদোলা বা পার্কের বিভিন্ন ফ্লাইং রাইডে চড়তে গিয়েও এই ভয়ের সূত্রপাত হতে পারে, থাকতে পারে আজীবন। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই ভয়টা আছে। এখনো মনে পড়ে কলেজ থেকে ফ্যান্টাসি কিংডমে গিয়ে রোলার কোস্টারে চড়িনি শুধু এই ভয়ে। যদিও বিমান দূর্ঘটনা খুব কম হয় তবুও বেশীরভাগ এই ফোবিয়াক্রান্ত কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে বিমান ক্রাশের ভয়টাই তারা পান। প্রতি ৩ জনে একজনের এই ভয়টা থাকে। এই ভয়ের তিনটি প্রধান লক্ষণ হল – শরীর কাঁপা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া আর এদিক সেদিক তাকানো বারবার। এই ভয় কমানোর উপায় ধীরে ধীরে তাকে অল্প উচ্চতায় চড়িয়ে বড় উচ্চতায় উড়তে নিয়ে যাওয়া।

সাইনোফোবিয়াঃ কুকুর দেখে ভয় পান না এমন মানুষ পাওয়া ভার। তার মধ্যে যদি পাগল কুকুর বা বিদেশী ডালমেশিয়ান হয় তবে তো অনেকে  তা থেকে হাজার হাত দূরে থাকতে চেষ্টা করে । সাইনোফোবিয়া হল কুকুরভীতি। ছোটবেলায় কুকুরের কামড় খেয়ে থাকলে বা দৌড়ানি খেলে এই ভয়টা আজীবন থাকবেই। এই ফাঁকে একটা কৌতুক মনে পড়লো। দুই বন্ধু এক বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছে যার সামনে বসে আছে কুকুর। সে ঘেউ ঘেউ করলে এক বন্ধু বলল, চল অন্য রাস্তা দিয়ে যাই। পাশের বন্ধু তাকে অভয় দিয়ে বলল, ভয পাসনে, জানিস তো প্রবাদে আছে, বেশি ঘেউ ঘেউ করা কুকুর কম কামড়ায়। তখন আগের বন্ধু বলল, বেশি চালাক সাজতে যাসনে। প্রবাদ তুই ও পড়েছিস, আমিও পড়েছি, কিন্তু কুকুর তো পড়েনি। যাই হোক, ফোবিয়া টা মোটেও হেলাফেলার নয়। যারা চিকিৎসা নিতে যান তাদের মধ্যে শতকরা ৩৬ ভাগেরই কুকুরের ভয় থাকে। এমনো দেখা যায়, একটা রাস্তায় বা বাড়িতে কুকুর আছে বলে ফোবিয়া আক্রান্ত রোগী সেই বাসা বা রাস্তার আশপাশ দিয়েও যেতে চান না । 

(চলবে)

Leave a Comment