পৃথিবীর রহস্যময় সৃষ্টিতত্ত্ব প্রতিনিয়ত উন্মোচন করছেন বিজ্ঞানীরা

  • কামরুন নাহার স্মৃতি
  • এপ্রিল ১৬, ২০১৯

অন্ধকার রাতে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে ছোট বড় অসংখ্য তারা দেখতে পাওয়া যায়। তারা বললেও এগুলোর সবই তারা নয়৷ এইসব আলোর ফুটকির কোন কোনটা গ্রহ৷ বিজ্ঞানীরা বলেন এমন এক সময় ছিল, যখন আমাদের এই পৃথিবীটা একেবারেই ছিল না। কী করে পৃথিবীর সৃষ্টি হল, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্নের শেষ নেই৷ এ যুগের বিজ্ঞানীদের মতে সূর্য থেকে উৎক্ষিপ্ত অনন্ত মহাকাশে ঘূর্ণ্যমান একটা মস্ত বড় আগুনের গোলা ক্রমে ক্রমে ঠান্ডা হয়ে জমে গিয়ে এই পৃথিবীটার সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান অবস্থায় আসতে পৃথিবীকে কোটি কোটি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

ফরাসী বিজ্ঞানী লাপ্লাসের মতের নাম নীহারিকাবাদ। লাপ্লাস বলেন, এক ঘূর্ণ্যমান নীহারিকার একটি অংশ সূর্য এক জ্বলন্ত গ্যাসের গোলা। প্রচন্ড বেগে ঘুরপাক খাওয়ার চোটে তার ধারের অংশ খসে গিয়ে পৃথিবী ও অন্যান্য উপগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। লাপ্লাসের এই মতবাদ কিছুকাল ধরে সত্য বলে প্রচলিত ছিল কিন্তু এ মতেরও ত্রুটি ধরা পড়ল৷ অনেককাল পর ইংরেজ বিজ্ঞানী জেমস জীনস এবং হ্যারল্ড জেফ্রিস বললেন যে, আমাদের সূর্যের চেয়ে কোটি কোটি গুণ বড় একটা বিরাট তারা মহাশূন্যে হঠাৎ সূর্যের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছিল। সেটা যখন সূর্যের পাশ দিয়ে প্রচন্ডবেগে ছুটে যাচ্ছিল তখন তার টানে সূর্যের গায়ে বিরাট জোয়ার তুলেছিল। তারাটির টানে সূর্য থেকে কিছুটা অংশ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। বিচ্ছিন্ন অংশটি একদিকে সূর্য, অন্যদিকে তারাটির টানে খন্ড খন্ড হয়ে যায়। এরকম একটি খন্ড থেকেই এই পৃথিবীর সৃষ্টি।

কিন্তু এই মতেরও খুঁত বের করলেন অন্যান্য বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বললেন, এ মত যদি মানা যায় তাহলে গ্রহগুলোর তো সূর্যের কাছে কাছে থাকার কথা ; কিন্তু তা তো হয় নি। গ্রহগুলো বহু দূরে দূরে ছড়িয়ে রয়েছে যে! জীনস ও জেফ্রিসের মতবাদকে বলে জোয়ারী মত৷ বিজ্ঞানী হয়েল তাঁর মত প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন যে, মহাশূন্যের দিকে তাকালে অনেক যুগ্ম-নক্ষত্র দেখা যায়। পূর্বে সূর্য আর একটা নক্ষত্র এইরকম যুগ্ম অবস্থায় ছিল৷ কল্পনাতীত প্রচন্ডবেগে আবর্তনের ফলে বহু কোটি বৎসর পূর্বে নক্ষত্রটাতে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে। তার ফলে নক্ষত্রটার কতক অংশ থেকে যায়, আর বাকি অংশ বহু শত কোটি মাইল দূরে গিয়ে পড়ে। সূর্যের অংশ ও সেই নক্ষত্রের অংশ থেকে আমাদের সৌরজগতের গ্রহ ও উপগ্রহগুলির সৃষ্টি হয়েছে। এই মতবাদকে বলা হয় 'যুগ্মতারকাবাদ'। বিজ্ঞানীরা এই মতটাকে পুরোপুরি সমর্থন না করলেও অগ্রাহ্য করেননি। অবশ্য সৃষ্টিতত্ত্ব এখনও পুরোপুরি রহস্যাবৃত। প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন পৃথিবীর সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করার।

টি/শা

Leave a Comment