গ্রামোফোন, বাল্ব ও টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের অজানা তথ্য

  • কামরুন নাহার স্মৃতি
  • জুন ১৯, ২০১৯

একটি ছোট্ট ছেলে রেললাইনের উপর খেলা করছে, আর সেই লাইন ধরে ছুটে আসছে একটা রেলগাড়ি। ছেলেটির কোন দিকে হুঁশ নেই, সে খেলায় মতে আছে। কাছেই স্টেশন। স্টেশনের লোকেরা হইহই করে উঠল, এবার নির্ঘাত মারা পড়বে ছেলেটি। একটি বালক কিছুদূর দাঁড়িয়ে খবরের কাগজ বিক্রি করছিল। ব্যাপার দেখে সে লাইনের দিকে ছুটে গেল এবং এক মুহূর্ত দেরি না করে ছেলেটিকে তুলে নিয়ে স্টেশনে চলে এল। হইচই শুনে স্টেশনমাস্টার সেখানে এসে হাজিত হলেন। তিনি এসে দেখলেন, যে ছেলেটা চাপা পড়ে মরে যাচ্ছিল সে তাঁরই ছেলে। যে বালক ছেলেকে বাঁচিয়েছে তাঁর নাম এডিসন। এডিসন স্টেশনেই একটা ছোট ছাপাখানা করেছে। সেখানে কাগজ ছাপে। আর নানারকম যন্ত্রপাতি নিয়ে কীসব গবেষণা করে। স্টেশনমাস্টার এডিসনকে বললেন, তুমি আমার ছেলেকে বাঁচিয়েছ, বল, তুমি কি পুরস্কার চাও।এডিসন বলল, আমাকে টেলিগ্রাফ শেখার ব্যবস্থা করে দিন। স্টেশনমাস্টার সঙ্গে সঙ্গে এডিসনের কথায় রাজি হয়ে গেলেন, তিনি টেলিগ্রাফ শেখার সুব্যবস্থা করে দিলেন। দেখতে দেখতে এডিসন হয়ে উঠল অভিজ্ঞ টেলি-গ্রাফ-অপারেটর।

এডিসনের পুরো নাম টমাস আল এডিসন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত মিলানের এক গরিবের ঘরের ছেলে তিনি। টেলিগ্রাফ অপারেটরের কাজ শিখে এডিসন নিউইয়র্ক চলে গেলেন। পকেটে পয়সা নেই, দু'তিন দিন অনাহারে কাটল। শোবার জায়গা করে নিলেন গোল্ড ইন্ডিকেটর কোম্পানির ঘরে। সেই কোম্পানির ট্রান্সমিটারটা হঠাৎ একদিন বিগড়ে গেল। এডিসন দেখে শুনে নিজেই যন্ত্রটা সাড়িয়ে ফেললেন। সেই কোম্পানিতে তাঁর চাকরি জুটে গেল। ডুপ্লেক্স টেলিগ্রাফিতে একই তারের উপর দিয়ে একই সময় দুই দিকে বিপরীত দুটো খবর পাঠানো সম্ভব। এডিসনের চেষ্টায় তা সম্ভব হয়েছিল। গ্রাহামবেলের আবিষ্কৃত টেলিফোন যন্ত্রের তিনি সংস্কার করলেন। তার ফলে কথাবার্তা আরো স্পষ্ট শোনা যেতে লাগল। অনেক চেষ্টার পর ১৮৭৭সালের শেষভাগে এক অদ্ভুত যন্ত্র আবিষ্কার করলেন তিনি। একটি সিলিন্ডার, সঙ্গে একটা হাতল, সিলিন্ডারের দিকে মুখ করা একটা সূচাল কাঠি আর একটা চোঙা। বর্তমানে তারই নাম গ্রামোফোন।

এরপর শুরু হল তড়িৎ শক্তির উপর এডিসনের গবেষণা। খনিজ পদার্থ ও বিভিন্ন ধাতুর আকর দিয়ে তিনি পরীক্ষা চালালেন। সুতোকে কার্বনে রুপান্তরিত করে সুতোর একটা ফাঁস ডোবালেন নিকেলের ছাঁচে, তারপর প্রায় পাঁচ ঘন্টা ওটা চুল্লিতে ধরে রাখা হল। তারপর ছাঁচটা ঠান্ডা করে সুতোটা বের করে একটা বাল্ব সীল করা হল। কিন্তু কার্বন করা সুতোটা বারবারই ছিঁড়ে যায়! অনেক চেষ্টার পর পুরো সুতোটাই বের করা সম্ভব হল। ১৮৭৯ সালের ২১শে অক্টোবর প্রথম বৈদ্যুতিক বাল্ব নিয়ে এলেন। এডিসন তাঁর আবিষ্কৃত তেরশর বেশি জিনিসের পেটেন্ট গ্রহণ করেন।

কেএস/

Leave a Comment