চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলা সম্পর্কে পড়ুন 

  • ইয়াসিন প্রধান সাজিদ
  • জুন ৭, ২০২০

চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলা যেটি বিভাগের সকল দিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাহাড়, সমুদ্র, নদ-নদী, উপত্যকা, বন-বনানীর কারণে চট্টগ্রামের মতো ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বাংলাদেশের আর কোন জেলার নেই। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের প্রকৃতি মন জুড়িয়ে দিতে পারে এক নিমিষেই। অসাধারন এই চট্টগ্রাম জেলাটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল।

১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার গঠন হয়। তিনটি পার্বত্য জেলা এ জেলাটির অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৮৬০ সালে পার্বত্য এলাকা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হয়। পরবর্তীতে এ জেলা ভেঙ্গে কক্সবাজার জেলা গঠিত হয়।

জেলার মোট আয়তন ৫,২৮৩ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এই জেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। চট্টগ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যা ৭৬,১৬,৩৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৮,৩৮,৮৫৪ জন এবং মহিলা ৩৭,৭৭,৪৯৮ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১৪৯৮ জন। ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার ৮৬% মুসলিম, ১২% হিন্দু এবং ২% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। (পরিসংখ্যান ২০১১)

অবস্থানের কথা যদি বলি তাহলে দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ২৫৯ কিলোমিটার। জেলার দক্ষিণে কক্সবাজার জেলা, পূর্বে বান্দরবান জেলা, রাঙ্গামাটি জেলা ও খাগড়াছড়ি জেলা, উত্তরে ফেনী জেলা এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে নোয়াখালী জেলা ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এছাড়াও দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপ চট্টগ্রামের ই অংশ।

চট্টগ্রাম জেলার একে একে অনেক নামকরণ করা হয়। প্রায় ৪৮টি নামের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‌ রম্যভুমি, চাটিগাঁ, চাতগাঁও, রোসাং, চিতাগঞ্জ, জাটিগ্রাম ইত্যাদি। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশরা জেলার নাম রাখে 'চিটাগাং'।

মুক্তিযুদ্ধের স্মরনীয় স্মৃতি ইতিহাস হিসেবে চট্টগ্রাম জেলার ও কিছু রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কালুরঘাটে অবস্থিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। ২০ এপ্রিল ক্যাপ্টেন অলি আহমদের নেতৃত্বে মীরসরাই সদরের দক্ষিণে ফেনাফুনি ব্রীজের পাশে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। আর এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রায় ১০০ সৈন্য নিহত হয়েছিল। যুদ্ধের রেখে যাওয়া গণকবর: ৯টি (পিটিআই প্রাঙ্গন, নাজিরহাট, করেরহাট, লেলাং চা বাগান, দরবার শরীফ, বাগানবাড়ি, দাঁতমারা উল্টোবিট, বাঁশখালী, জোটপুকুরিয়া), বধ্যভূমি আছে ১৩টি আর স্মৃতিস্তম্ভ: ৯টি।

চট্টগ্রাম জেলার সাক্ষরতার হার ৫৮.৯%। এ জেলায় রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় : ১৩টি-সরকারি : ৫টি-বেসরকারি : ৮টি -পাবলিক : ৩টি
মেডিকেল কলেজ : ৩টি,আইন কলেজ : ৩টি,কলেজ : ১১৯টি,সরকারি (মাস্টার্স) : ৫টি,সরকারি (ডিগ্রী/অনার্স) : ২০টি,বেসরকারি (ডিগ্রী/অনার্স) : ৮২টি,সরকারি (উচ্চ মাধ্যমিক) : ১টি,বেসরকারি (উচ্চ মাধ্যমিক) : ২৬টি,মাদ্রাসা : ২৯৯টি,কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ১০টি,মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ৭১৯টি,সরকারি : ৫৮টি,বেসরকারি : ৬৩২টি,স্কুল এন্ড কলেজ : ২৯টি,নিম্ন,মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ৩২টি,প্রাথমিক বিদ্যালয় : ২৯৯৭টি,সরকারি : ১৬৩৪টি,বেসরকারি : ৮৪৭টি

নদ-নদীর দিক থেকেও চট্টগ্রামের অনেক বিশেষত্ব আছে। চট্টগ্রাম জেলার প্রধান নদীর মধ্যে কর্ণফুলি নদী, হালদা নদী, সাঙ্গু নদী এবং মুহুরী নদী উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রাম কে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সর্বমোট রপ্তানী বাণিজ্যের প্রায় ৭৫ ভাগ সংঘটিত হয়ে থাকে। অার আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ হার ৮০ ভাগ।দেশের মোট রাজস্ব আয়ের শতকরা ৬০ ভাগ আসে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে।

চট্টগ্রামের সাথে সারা দেশের সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। আকাশপথের জন্যে রয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

সড়কপথ : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, হানিফ এন্টারপ্রাইজসহ অনেক এসি/নন-এসি বাস যাতায়াত করে থাকে।

রেলপথ : ঢাকা - চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-ঢাকা পথে বেশ কয়েকটি ট্রেন চলাচল করে। তার মধ্যে তূর্ণা নিশিতা, পাহাড়িকা, মহানগর গোধূলী, মহানগর প্রভাতী, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম মেইল অন্যতম। তাছারাও চট্টগ্রামের সাথে রেল মাধ্যমে দেশের সকল স্থানের সাথে যোগাযোগ করা যায়।

বাংলাদেশের প্রথম রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল হিসাবে ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রামের হালিশহরে ৪৫৩ একর জায়গার উপর চট্টগ্রাম ইপিজেড নির্মান করা হয়েছিল। যেটি সমুদ্র বন্দর থেকে ৩.১০ কিলোমিটার এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে মাত্র ১.৩০ কিলোমিটার দুরত্বে হওয়ায় শিল্প পার্ক হিসাবে দ্রুত প্রসার লাভ করেছিল। বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক সমুদ্র বন্দর এই চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর।
এই জেলাতেই একমাত্র গ্যাস ফিল্ড সাঙ্গু ১৯৯৪ সালে আবিস্কৃত হয়।

কৃষি সম্পদ : তামাক - ১৯৬০ এর দশকে শংখ ও মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী এলাকায় তামাক চাষ শুরু হয়। লবণ - চট্টগ্রাম জেলা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা বলে লবণ চাষে লাভজনক হয়। ইতিহাসে ঘাটলে দেখা যায়, ১৭৯৫ সালে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলে গড়ে বার্ষিক ১৫ লাখ টন লবণ উৎপন্ন হত।

চট্টগ্রাম জেলায় মাছ চাষের ঐতিহ্য অনেক আগে থেকে। সমুদ্র এবং নদী-নালার প্রাচুর্য সব কিছুর মূল শক্তি। বৃহত্তর এই চট্টগ্রামে দীঘি, বিল ও হাওড়ের সংখ্যা রয়েছে ৫৬৮, পুকুর ও ডোবার সংখ্যা আছে ৯৫,৯৪১।কর্ণফুলি নদীর মোহনায় প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার একর বিস্তৃত মাছ ধরার জায়গা হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে। চট্টগ্রামের মাছ চাষ ও আহরণের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল শুটকি। সোনাদিয়া, সন্দ্বীপ দ্বীপাঞ্চল থেকে শুটকি মাছ চট্টগ্রামের বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোতে প্রেরন করে।

সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যায় চট্টগ্রাম জেলার জন্যে দেশের যেমন সার্বিক উন্নতি হচ্ছে। তেমনি ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের জন্যে চট্টগ্রাম অন্যতম একটি জায়গা। নদী ও প্রকৃতি উভয় দিক থেকেই চট্টগ্রাম জেলা সকলের প্রকৃতির চাহিদা মিটাতে সক্ষম।

তথ্যঃ গুগল
লিখাঃ সাজিদ

Leave a Comment