
কালাজ্বর কী ? লক্ষণ ও প্রতিরোধ
- রেজবুল ইসলাম
- ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮
কালাজ্বর একটি রোগ যা লিশম্যানিয়াসিস রোগের কয়েকটি প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর। সব দেশেই রোগটি আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। সমগ্র পৃথিবীর প্রতি দশটি কালাজ্বর রোগির মধ্যে নয়টিই বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিল ও সুদান এই চারটি দেশে বিদ্যমান। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের 'মানুষ' এই রোগের উৎস রূপে চিহ্নিত হলেও চীন ও ব্রাজিলে 'কুকুর' এই রোগের উৎস।
কালাজ্বর কী : কালাজ্বর শব্দটি কালা এবং আজর এ দুটি শব্দ হিন্দি শব্দ থেকে এসেছে। কালা মানে কালো আর আজর মানে ব্যাধি। তাই যে রোগে ভুগলে শরীর কালো হয়ে যায় তাকেই কালাজ্বর বলা হয়। কালাজ্বরের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা অবশ্য অন্যরকম৷ এক ধরণের পরজীবীর সংক্রমণে যে জ্বর হয় এবং যাতে প্লীহা ও যকৃত বেড়ে যায়, শরীরের রক্তকণিকাগুলো কমে গিয়ে রক্তস্বল্পতার সৃষ্টি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় চিকিৎসাশাস্ত্রে তাকে কালাজ্বর বলা হয়। অতি ক্ষুদ্র বালু মাছি কামড়ালে রোগীর শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে এই রোগ ছড়ায়।
কালাজ্বরের লক্ষণ:
(১) জ্বর - প্রথমে অল্প জ্বর থাকতে পারে আবার কোনো কোনো সময় অনেক বেশি জ্বরের সাথে কাঁপুনি থাকতে পারে।
(২) দেখা গেছে অধিকাংশ কালাজ্বর রোগীই গরিব দরিদ্র।
(৩) রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
(৪) প্রথমবারের জ্বর নিজ থেকেই ভালো হয়ে যেতে পারে। কয়েক সপ্তাহ পর বারবার জ্বরে ভোগার পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে।
(৫) কিছুদিন রোগে ভোগার পর ধীরে ধীরে রোগীর পেটের বাম দিকে প্লীহা এবং ডান দিকের লিভার বাড়তে শুরু করে।
(৬) শরীরের চামড়া কালচে হয়ে আসে।
(৭) প্রচণ্ড জ্বর থাকা সত্ত্বেও রোগীর খাওয়ায় অরুচি দেখা দেয় কমই এবং রোগী অনেক বেশিই খেতে পারে। ফলে এরা সহজেই দুর্বল হয়ে পরে না। তাই রোগীরা অনেকেই প্রথমে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন মনে করে না। ফলে জটিলতা নিয়ে কালাজ্বর রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসে।
কালাজ্বরের চিকিৎসা : কোন ব্যক্তি কালাজ্বরে আক্রান্ত বলে মনে হলে তাকে যতদ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে রোগ ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসা না করা হলে কয়েক বছরের মধ্যে অধিকাংশ কালাজ্বরের রোগী মারা যায়।
কালাজ্বর প্রতিরোধ: উপদ্রুত এলাকায় রোগী খুঁজে বের করে তার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং চিকিৎসা-পরবর্তী অবস্থার খোঁজ রাখতে হবে। রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের বাহক স্যান্ড ফ্লাই বা বালু মাছি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কীটনাশক ঔষধ যেমন- ডিডিটি ছিটিয়ে বালুমাছি মারার ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। যেহেতু গোয়ালঘরেই বালুমাছি বেশি পাওয়া যায় তাই গোয়ালঘর পরিষ্কার করে আবর্জনা নিয়মিত নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। ইঁদুরের গর্ত বালুমাছির জন্ম ও বিশ্রামের অন্যতম স্থান। তাই ইঁদুরের গর্ত ভরাট করে ফেলতে হবে৷ উল্লেখ্য, এখনো এই রোগের কোনো প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হয়নি।