মাম্পস কী ও কাদের হয় মাম্পস ?

  • রেজবুল ইসলাম 
  • ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮

মাম্প্‌স বা পনসিকা (ইংরেজি: Mumps প্যারটাইটিস নামেও পরিচিত ), একপ্রকারের ভাইরাসজনিত রোগ, যা মাম্প‌স ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে, পৃথিবীব্যাপী শিশুদের মধ্যে এটি একটি সাধারণ রোগ ছিল। আমাদের মুখমণ্ডলের প্রতি পাশে তিনটি করে মোট ছয়টি লালাগ্রন্থি আছে। এর মধ্যে দুই গালের পেছন দিকে, ঠিক কানের নিচে একটি করে মোট দু’টি লালাস্রাবী গ্রন্থি থাকে, যাদের বলা হয় ‘প্যারোটিড লালাগ্রন্থি’। এ ছাড়া জিহ্বার নিচে দু’টি সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি এবং নিচের চোয়ালের ভেতরের দিকে একটি করে মোট দুটি সাব ম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি রয়েছে। লালাগ্রন্থির কাজ লালারস রণ করে খাদ্যদ্রব্যকে পিচ্ছিল করা, যা চর্বনে সাহায্য করে। লালাগ্রন্থিগুলোর মধ্যে প্যারোটিড গ্রন্থি যখন এক ধরনের দ্রাকার ভাইরাস ‘মিকসো ভাইরাস প্যারোটাইডিস’ দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন এ গ্রন্থি ফুলে যায়। প্যারোটিড গ্রন্থির এ প্রদাহকে বলে ‘প্যারোটাইটিস।’ প্যারোটিড শব্দটি গ্রিক, যার অর্থ কানের ধারে।এই প্যারোটিড গ্রন্থির প্রদাহকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় প্যারোটাইটিস, সাধারণ মানুষ যাকে বলে ‘মাম্পস’। এ রোগে চোয়াল নাড়লেই তীব্র যন্ত্রণা হয়। কথা বলাও কঠিন হয়ে যায়। ফলে কথা অস্পষ্টভাবে বলতে হয়। অস্পষ্ট কথা বলার ইংরেজি শব্দ ‘মামবল’ থেকেই ‘মাম্পস’ চলতি নামটি এসেছে। তাই জনসাধারণ প্যারোটাইটিসকে চেনে মাম্পস হিসেবে।

বড়দের কি মাম্পস হয়?

সাধারণত ছোটদের মাম্পসে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তাই বলে বড়দের যে মাম্পস হয় না তা কিন্তু নয়। মাম্পস হলো লালাগ্রন্থির একধরনের ভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট প্রদাহ। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এর ফলে জ্বর, মাথাব্যথার সঙ্গে গলা ও কানের নিচে দুই পাশে লালাগ্রন্থি ফুলে যায়, খাবার গিলতে ব্যথা হতে পারে। কিশোর-তরুণদের মাম্পস হলে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে সঙ্গে শুক্রাশয়ের প্রদাহ থাকতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হলে এ থেকে পরে জটিলতা হতে পারে। আবার নারীদের মাম্পস হলে একই সঙ্গে স্তনগ্রন্থিতে ব্যথা ও প্রদাহ হতে পারে। সাধারণত মাম্পস নিজে নিজেই সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: এনকেফালাইটিস, শ্রবণশক্তিতে সমস্যা, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ। গর্ভবতী নারীর মাম্পস হলে এ থেকে গর্ভপাত হওয়ারও আশঙ্কা আছে। মাম্পস হলে প্রচুর পানি খেতে হবে। মিষ্টি পানীয় বা জুস ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। কারণ এগুলো লালাগ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে ব্যথা বাড়াবে। তরল বা আধা তরল নরম খাবার খেলে ব্যথা কম হবে। ব্যথা কমানোর জন্য বরফ বা ঠান্ডা সেঁক দিতে হবে ফোলা জায়গার ওপর। প্যারাসিটামল খাওয়া যায়। বিশ্রাম নিন। হালকা গরম লবণপানি দিয়ে গরগরা করুন। পুরুষদের মাম্পসের সঙ্গে শুক্রাশয়ে ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

এ রোগের লক্ষণ হলো অল্প জ্বর, যা ক্রমেই বাড়তে পারে (১০০-১০৩F)।গলা ফুলে যাওয়া, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা,শীত ভাব,মাথাব্যথা,প্রায়ই প্রথমে একটি ফুলে যায়,পরে অন্যটি ফোলে। এই ফুলা দুই-তিন দিন ধরে বৃদ্ধি পেয়ে আবার কমতে শুরু করে। জ্বরও কমতে থাকে। রোগীর খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক হয়ে আসে।এখানে মনে রাখা দরকার,একবার মাম্পস হয়ে গেলে বাকি জীবনে আর কখনো হয় না।মাম্পস জীবাণু শরীরে ঢোকার শুরু থেকে অর্থাৎ ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।
 

Leave a Comment