আল্ট্রাসনোগ্রাফি কখন করবেন, এবং কেন করবেন ? 

  • আল আমীন 
  • মে ৭, ২০১৮

আজকালকার দিনে আল্ট্রাসনোগ্রাফি আমাদের কাছে বহুল পরিচিত একটি বিষয়। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এটা এমন প্রযুক্তি, যেটার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার পর্দার (স্ক্রিন) ছবি বিশ্লেষন করে রোগ নির্ণয় কিংবা গর্ভস্থ শিশুর অবস্থা বা অবস্থান নির্দেশ করতে সক্ষম হন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ, গঠন-প্রকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় জানা যায়। 

গর্ভকালীন যেকোনো জরুরী পরিস্থিতিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি একজন চিকিৎসকের জন্য সর্বোত্তম ও নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি পরীক্ষা পদ্ধতি। আল্ট্রাসনোগ্রাফির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্যান্য রেডিওলজিকাল পরীক্ষার তুলনায় কম এবং এটা বেশ নিরাপদও বটে। এছাড়াও এর সাহায্যে লিভার, স্প্লিন বা প্লিহা, কিডনি, অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, পিত্তথলি, চক্ষু, থাইরয়েড, মূত্রথলীসহ নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গের নানাবিধ রোগ সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব।  আজ আমরা জানব, এটা কেন করব, কখন করব, করলে উপকার না অপকার, প্রভৃতি বিষয়ে।

যদিও আমাদের অনেকের আবার আল্ট্রাসনোগ্রাফি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই উচিত নয় এ ব্যপারে অবহেলা করা। কারণ এমন কিছু রোগ আছে যেটা কেবল আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমেই নির্ণয় করা সহজ এবং নিরাপদ। তাছাড়া এটা যেমন রক্তপাতহীন পরীক্ষাব্যবস্থা, তেমনই এটাতে কোনো কাটাছেড়া নেই, তাই ব্যথাও থাকে না। সুতরাং এটা রোগী এবং ডাক্তার দুইজনের জন্যই বেশ স্বস্তিদায়ক।

আল্ট্রাসনোগ্রাফির যেমন উপকারীতা রয়েছে, তেমন আছে অপকারীতাও। বিশেষ করে গর্ভবর্তী রোগীর ক্ষেত্রে ডাক্তারগণ 2D আল্ট্রাসনোগ্রাফি করিয়ে থাকেন, এবং প্রয়োজনবিশেষে 3D আল্ট্রাসনোগ্রাফিও করান। কিন্তু গর্ভস্থ শিশুর মুখাবয়ব স্পষ্ট দেখতে গেলে প্রয়োজন পড়ে 4D আল্ট্রাসনোগ্রাফির। যেটাতে ব্যবহৃত হয় উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ। আর এটাতে ক্ষতি করতে পারে মায়ের পেটের ভেতরে থাকা বাচ্চার অতি সংবেদনশীল টিস্যুর। 

সুতরাং এ ক্ষেত্রে আমাদের উচিত কৌতুহল দমিয়ে রাখা এবং গর্ভস্থ শিশুর মুখ দেখার জন্য 4D আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো থেকে বিরত থাকা, এবং এতে করে শিশু স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি এড়িয়ে চলা যায়। তাছাড়া এর মাধ্যমে আমরা যে শিশুর অরিজিনাল মুখাবয়ব দেখতে পারি, তাও কিন্তু নয়। কারণ শিশু জন্মের পর পূর্ণাঙ্গ শিশুর মুখাবয়ব ওরকম না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

আল্ট্রাসনোগ্রাফির পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতা: আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর পূর্বে রোগীর কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়, এবং সতর্কও থাকতে হয়। সেগুলোও জেনে নেওয়া জরুরী। প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মানেই বেশি করে পানি পান করে প্রস্রাবের অধিক চাপ তৈরি করে আসা। আবার অনেক সময় দেখা যায়, রোগীকে শুধু পানি খেয়ে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু রোগী পানির বদলে শরবত বা জুস এবং অনেক সময় হালকা বা ভারী নাশতা করে এসেছে। এতে চিকিৎসকের পক্ষে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় যে, রোগীকে খালি পেটে থাকতে বলা হলেও রোগী সামান্য পরিমাণে কিছু না কিছু খাবার খেয়ে আসে যেটা আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার জন্য অন্যতম বাধা।

আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর আগে নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে বলা হয়, বা বেশি করে পানি খেতে বলা হয়। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ডাক্তার রোগীকে কতক্ষন আগে থেকে না খেয়ে থাকতে বলেছেন। না খেয়ে থাকতে বলা, মানে হলো একদমই কিছু খাওয়া যাবে। কিন্তু না। না খেয়ে থাকতে বলা মানে, একদমই না খেয়ে থাকতে হবে। হাল্কা কিছুও যদি খান, আর পেটে কোনোভাবে গ্যাস তৈরী হয়, সেটাতে জটিলতা তৈরী হতে পারে। আবার পানি খেতে বললে, পানিই খেতে হবে, জুস বা অন্য কোনো তরল খাবার নয়।

মোটকথা হলো, আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর আগে রোগীকে কখনো ভরা পেট কিংবা খালি পেট, কখনও পূর্ণ মূত্রথলি কিংবা শূন্য মূত্রথলি অবস্থায় থাকতে হয়। প্রয়োজনে কখনো আবার সারারাত খালি পেটে অবস্থায় রেখেও আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
এজন্য যেটা করবেন, তা হলো আগে থেকেই ডাক্তারের কাছ থেকে ক্লিয়ারলি শুনে নেবেন সবকিছু। যাতে ঠিক সময়ে যেয়ে কোনো সমস্যা তৈরী না হয়।  আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর সময় আরো যে ব্যপারে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, সেটা হলো আপনার পোষাক। আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর সময় আপনার জন্য উত্তম হবে আরামাদায়ক ও সুতি পোশাক পরা।
 

 

Leave a Comment