হাত-পায়ের তালু জ্বলে। কী করতে পারি?
- তাসফিয়া আমিন
- মে ১৭, ২০১৮
প্রশ্নঃ আমার মায়ের বয়স ৪৫ বছর। তার প্রায়ই হাত-পায়ের তালু জ্বলে। কী করতে পারি?
উত্তরঃ কতদিন ধরে উনার এই সমস্যা হচ্ছে ? অন্যকোন উপসর্গ আছে? অনেক মানুষেরই হাত ও পায়ের তালুতে জ্বালা পোড়া অনুভূত হয়। বিশেষ করে রাতে বিছানায় গেলে সমস্যা বেশি দেখা যায়, এমনকি শীতের রাতে হাত ও পা কম্বল বা লেপের ভেতরে রাখতে পারেন না, বাইরে রাখতে হয়। এই রোগটি ৩৫-৪০ উর্ধে লোক বিশেষ করে মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে আবার গর্ভাবস্থায়ও অনেকের হাত-পা জ্বালা পোড়ার সমস্যা দেখা দেয়। তবে গরমকালে অনেকেরই হাত-পা জ্বালা পোড়ার প্রবণতাটি অনেকাংশে বেড়ে যায়। মাঝে মাঝে এর প্রকোপ এত বেশি হয় যে হাত ও পায়ের পাতা দুটি যেন মরিচ লাগার মতো জ্বলে, কখনও সুঁই ফোটার মতো বিঁধে ঝিম ঝিম করে বা অবশও হয়।
নানা কারণে এমনকি মানসিক বিপর্যয়েও হতে পারে এই জ্বালা- পোড়ার যন্ত্রণা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাত ও পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলেই এমনটা ঘটে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি। অনেক কারণে শরীরে বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালুতে জ্বালা পোড়া অনুভূত হতে পারে। যেমন-
স্নায়ুজনিত কারণঃ আক্রান্ত অংশের স্নায়ুর ওপর চাপ লেগে থাকলে।
হরমোনজনিত কারণেঃ মহিলাদের মেনোপোজ-পরবর্তী সময়ে শরীরে হরমোনের তারতম্য ঘটে তখন এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিসজনিত কারণেঃ যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না এসব রোগীর পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বা ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি দেখা যায়।
ভিটামিন বা মিনারেলের অভাবঃ কিছু কিছু ভিটামিন বা মিনারেলের অভাবে এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়। যেমন- থায়ামিন, পাইরিডক্সিন, সাইনোকোবালসিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি ইত্যাদির অভাবে অনেক ক্ষেত্রে হাত ও পায়ের তালুতে জ্বালা পোড়া অনুভূত হতে পারে।
হাত-পায়ে ছত্রাক সংক্রমণ।
হাত-পায়ে রক্ত চলাচলে সমস্যা।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপেও হাত-পা জ্বালা পোড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
আবার সাধারণত অনেক সময় দেখা যায় যে, পানি কম পান করলে শরীর কষে যায় এবং এতে হাত-পা ও শরীরে জ্বালা-পোড়ার প্রবণতাটাও বেড়ে যেতে পারে।
এক্ষেত্রে করণীয়ঃ জ্বালা- পোড়া হঠাৎ শুরু হয়ে খারাপের দিকেই যাচ্ছে বা এর সঙ্গে হাত-পায়ের আঙ্গুল বা পায়ের পাতায় অনুভূতি কমে যাচ্ছে, অবশ মনে হচ্ছে ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে অবহেলা করবেন না আপনার হাত ও পায়ের স্নায়ু ঠিক আছে কিনা তা বুঝার জন্য অনেক সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন নেই। চিকিৎসক একটি আলপিন বা একটি টিউনিং ফর্ক ব্যবহার করেই পায়ের অনুভূতি গুলো যাচাই করে নিতে পারবেন।
যারা ডায়াবেটিসের রোগী তারা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, হাত-পায়ের যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে পায়ের যত্ন। যাদের হাত বা পায়ের স্নায়ু সমস্যা আছে, তাদের পায়ের যেকোন ক্ষতের দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে। পায়ে গরম সেঁক নিতে, নখ কাটতে এবং জুতা বাছাই করতে সাবধান হোন।
হাত পায়ের সমস্যার জন্য সব সময় যে ভিটামিনের অভাবই দায়ী, তা নয়। তাই সব ধরনের সমস্যায় ভিটামিন বি খেয়ে উপকার নাও হতে পারে। দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমান। প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন। নিউরোপ্যাথি আছে প্রমাণিত হলে স্নায়ুর যন্ত্রণা লাঘব করে এমন কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে সেগুলো সেবন করতে পারেন।
সাধারণত যারা পানি কম পান করেন তাদের উচিত বেশি পরিমাণে পানি পান করা এবং মিনারেল জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া। এতে করে হাত-পা ও শরীর জ্বালা-পোড়া অনেক অংশে কমে যাবে।
আর/এস